ত্রাণবাহী জাহাজে হামলা-ইসরায়েলের কাছে নতজানু বিশ্ব by লিন্ডা এস হার্ড
গত সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার জন্য ত্রাণবাহী একটি তুর্কি জাহাজে আক্রমণ করে এবং জাহাজে উঠে পড়ে। এই হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। তাই এটি শুধু জলদস্যুতাই নয়, একে ‘যুদ্ধ-তৎপরতা’ বলে গণ্য করা যায়।
নিরস্ত্র বেসামরিক নারী-পুরুষের ওপর হামলার এ ঘটনা, ইহুদি রাষ্ট্রটি নৈতিক দিক দিয়ে কতটা অধঃপতিত হয়ে পড়েছে, তারই এক দৃষ্টান্ত। জাহাজটিতে অবস্থানরত আল জাজিরার এক প্রতিবেদক বলেছেন, সাদা পতাকা ওড়ানোর পরও ইসরায়েলিরা গুলি চালিয়েছে। এই নৃশংসতা ও এর সম্ভাব্য পরিণতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে উচ্চকণ্ঠ নিন্দা পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হওয়ার কথা। কিন্তু ততটা উচ্চকিত নিন্দা কি পাওয়া গেছে?
এতগুলো রাষ্ট্র কেন ইসরায়েলের আকাঙ্ক্ষার কাছে নতজানু অথবা রাষ্ট্রটির অপরাধের বিষয়ে নীরব? অতিক্ষুদ্রাকার এই রাষ্ট্রটির কী এমন বিশেষ গুণ যে বৃহৎ ও অধিকতর শক্তিশালী দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপরও ইসরায়েলের এতটা নিয়ন্ত্রণ? ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিগুলো মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি ফিলিস্তিনি বিশাল অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করেছে; গাজার ওপর অবৈধ অবরোধ আরোপ করেছে। অধিকন্তু বিদেশের মাটিতে শত্রুকে হত্যা করে কেবল এই একটি দেশই পার পেয়ে যেতে পারে।
এত কম জনসংখ্যার কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চল যদি ইসরায়েলের মতো এমন জঘন্য আচরণ করত, তাহলে দেশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত, বয়কটের শিকার হতো, এমনকি হয়তো একে আক্রমণের শিকার হতে হতো। কিন্তু ইসরায়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বহু সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেও পার পেয়ে পায়। অথচ বিপরীত দিকে এই একই অজুহাত দেখিয়ে সাদ্দামের ইরাকে হামলা করা হয়, লুটপাট চলে আর দখলদারি কায়েম হয়।
পারমাণবিক অস্ত্রের অঘোষিত মজুদ ইসরায়েলের রয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রকাশিত দলিল থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বর্ণবাদযুগের দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি বিক্রি করতে ইসরায়েল প্রস্তুত ছিল। ইসরায়েল একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যে কখনো দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রগুলোকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের জোগান দেবে না—যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবির সঙ্গে এই তথ্য সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র না থাকার পরও, এমনকি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইরানকে জাতিসংঘের অবরোধের শিকার হতে হয়েছে। অথচ ইসরায়েল এই চুক্তিতেও সই করেনি।
গত শুক্রবার এনপিটি স্বাক্ষরকারী ১৮৯ দেশের সবকটি মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে ২০১২ সালে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। শুনতে ভালোই লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য ধারণাটিকে সমর্থন করেছেন। পুরো আরব বিশ্ব পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য গড়ার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছে আর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বহু দিন ধরে এ অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
এতে ইসরায়েল খুব একটা খুশি নয়। কারণ দেশটি মনে করে ইসরায়েলকেই বিশেষভাবে লক্ষ্য করে এসব করা হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এই আহ্বানকে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ ও কপটতাপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এনপিটি স্বাক্ষর না করা দেশ হিসেবে ইসরায়েল এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। ইসরায়েলের ওপর এই সম্মেলনের কোনো কর্তৃত্বও নেই।’
এই বক্তব্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এরপর ওবামা ত্বরিত বিপরীতমুখী অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে আলাদা করে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রচেষ্টার আমরা ঘোর বিরোধী এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে এমন তৎপরতার আমরা বিরোধিতা করব।’ এ অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমীকরণের বাইরে রেখে কেমন করে এই অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করা হবে?
এমন কতগুলো ঘটনা ঘটছে যা থেকে আমি ভাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের রাজধানী কি তবে তেল আবিব? সম্প্রতি যখন ইরান ও ব্রাজিলের মধ্যে প্রস্তাবিত ইউরেনিয়াম বিনিময়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি তুরস্কের মাটিতে সম্পাদিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সময় হোয়াইট হাউস একে ইরানের সময়ক্ষেপণের কৌশল বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করে তারা যেন ইরানের বিরুদ্ধে আরেক দফা নতুন অবরোধ আরোপ করতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, কোনো প্রস্তাবনার কারণে ইরানের হাতে যদি আরও সময় মেলে তাহলে ‘পৃথিবী আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে’।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ন্যায্য ও আন্তরিক অ্যাপ্রোচ না থাকার অভিযোগ তুলেছেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তাঁর এই বক্তব্য পুরোপরি ঠিক। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও এ ব্যাপারে একমত বলেই মনে হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা প্রটোকল ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি ফাঁস করে দিয়েছেন। চিঠিটি এ বছর এপ্রিলে তাঁর কাছে পৌঁছে। এতে স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তুরস্কে এক বছর পর্যন্ত থাকবে এমন শর্তে ইরান রাজি হলে ইউরেনিয়াম বিনিময়কে ওবামা সাদরে সমর্থন জানানোর কথা বলেছেন।
ওবামা লিখেছেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে ইউরেনিয়াম রাখার ব্যাপারে আপসে পৌঁছার চেষ্টা ইরান কখনো করেনি এবং এটা প্রত্যাখ্যাতের কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেনি।’ তেহরান যে ওবামা প্রদর্শিত কার্যপ্রণালীই গ্রহণ করল তাতেও মনে হয় ওবামার পক্ষে এখন ‘হ্যাঁ’ বলা সম্ভব হবে না। নেতানিয়াহু এই জ্বালানি চুক্তিকে আন্তর্জাতিক অবরোধ এড়ানোর জন্য ‘ধোঁকাবাজি’ বলে নিন্দা করেছেন। এ কারণেই কি ওবামার পক্ষে এ চুক্তি সমর্থন সম্ভব হবে না?
ইসরায়েলের কাছে নতজানু শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়। গ্রিক সাইপ্রাসের কর্তৃপক্ষ আইরিশ, বুলগেরীয় ও সুইডিশ সংসদের ১৭ জন সদস্যসহ একটি দলকে ছোট খেয়ানৌকায় চড়ে গাজার জন্য ত্রাণবাহী নৌবহরে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দ্বীপটির ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থরক্ষার’ দোহাই দিয়েই এ কাজটি তারা করেছে।
ইসরায়েলি মানদণ্ডের কাছে অত্যন্ত নতজানু যখন প্রতীচ্যের বেশির ভাগ অংশ, সেই সময়ে নৌবহরে যেসব বিদেশি জাহাজ ছিল, যারা ঠিক কাজটি করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেছে, তাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানানো উচিত।
গালফ নিউজ থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
লিন্ডা এস হার্ড: মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।
এতগুলো রাষ্ট্র কেন ইসরায়েলের আকাঙ্ক্ষার কাছে নতজানু অথবা রাষ্ট্রটির অপরাধের বিষয়ে নীরব? অতিক্ষুদ্রাকার এই রাষ্ট্রটির কী এমন বিশেষ গুণ যে বৃহৎ ও অধিকতর শক্তিশালী দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপরও ইসরায়েলের এতটা নিয়ন্ত্রণ? ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিগুলো মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি ফিলিস্তিনি বিশাল অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করেছে; গাজার ওপর অবৈধ অবরোধ আরোপ করেছে। অধিকন্তু বিদেশের মাটিতে শত্রুকে হত্যা করে কেবল এই একটি দেশই পার পেয়ে যেতে পারে।
এত কম জনসংখ্যার কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চল যদি ইসরায়েলের মতো এমন জঘন্য আচরণ করত, তাহলে দেশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত, বয়কটের শিকার হতো, এমনকি হয়তো একে আক্রমণের শিকার হতে হতো। কিন্তু ইসরায়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বহু সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেও পার পেয়ে পায়। অথচ বিপরীত দিকে এই একই অজুহাত দেখিয়ে সাদ্দামের ইরাকে হামলা করা হয়, লুটপাট চলে আর দখলদারি কায়েম হয়।
পারমাণবিক অস্ত্রের অঘোষিত মজুদ ইসরায়েলের রয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রকাশিত দলিল থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বর্ণবাদযুগের দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি বিক্রি করতে ইসরায়েল প্রস্তুত ছিল। ইসরায়েল একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যে কখনো দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রগুলোকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের জোগান দেবে না—যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবির সঙ্গে এই তথ্য সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র না থাকার পরও, এমনকি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইরানকে জাতিসংঘের অবরোধের শিকার হতে হয়েছে। অথচ ইসরায়েল এই চুক্তিতেও সই করেনি।
গত শুক্রবার এনপিটি স্বাক্ষরকারী ১৮৯ দেশের সবকটি মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে ২০১২ সালে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। শুনতে ভালোই লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য ধারণাটিকে সমর্থন করেছেন। পুরো আরব বিশ্ব পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য গড়ার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছে আর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বহু দিন ধরে এ অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
এতে ইসরায়েল খুব একটা খুশি নয়। কারণ দেশটি মনে করে ইসরায়েলকেই বিশেষভাবে লক্ষ্য করে এসব করা হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এই আহ্বানকে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ ও কপটতাপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এনপিটি স্বাক্ষর না করা দেশ হিসেবে ইসরায়েল এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। ইসরায়েলের ওপর এই সম্মেলনের কোনো কর্তৃত্বও নেই।’
এই বক্তব্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এরপর ওবামা ত্বরিত বিপরীতমুখী অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে আলাদা করে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রচেষ্টার আমরা ঘোর বিরোধী এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে এমন তৎপরতার আমরা বিরোধিতা করব।’ এ অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমীকরণের বাইরে রেখে কেমন করে এই অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করা হবে?
এমন কতগুলো ঘটনা ঘটছে যা থেকে আমি ভাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের রাজধানী কি তবে তেল আবিব? সম্প্রতি যখন ইরান ও ব্রাজিলের মধ্যে প্রস্তাবিত ইউরেনিয়াম বিনিময়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি তুরস্কের মাটিতে সম্পাদিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সময় হোয়াইট হাউস একে ইরানের সময়ক্ষেপণের কৌশল বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করে তারা যেন ইরানের বিরুদ্ধে আরেক দফা নতুন অবরোধ আরোপ করতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, কোনো প্রস্তাবনার কারণে ইরানের হাতে যদি আরও সময় মেলে তাহলে ‘পৃথিবী আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে’।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ন্যায্য ও আন্তরিক অ্যাপ্রোচ না থাকার অভিযোগ তুলেছেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তাঁর এই বক্তব্য পুরোপরি ঠিক। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও এ ব্যাপারে একমত বলেই মনে হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা প্রটোকল ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি ফাঁস করে দিয়েছেন। চিঠিটি এ বছর এপ্রিলে তাঁর কাছে পৌঁছে। এতে স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তুরস্কে এক বছর পর্যন্ত থাকবে এমন শর্তে ইরান রাজি হলে ইউরেনিয়াম বিনিময়কে ওবামা সাদরে সমর্থন জানানোর কথা বলেছেন।
ওবামা লিখেছেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে ইউরেনিয়াম রাখার ব্যাপারে আপসে পৌঁছার চেষ্টা ইরান কখনো করেনি এবং এটা প্রত্যাখ্যাতের কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেনি।’ তেহরান যে ওবামা প্রদর্শিত কার্যপ্রণালীই গ্রহণ করল তাতেও মনে হয় ওবামার পক্ষে এখন ‘হ্যাঁ’ বলা সম্ভব হবে না। নেতানিয়াহু এই জ্বালানি চুক্তিকে আন্তর্জাতিক অবরোধ এড়ানোর জন্য ‘ধোঁকাবাজি’ বলে নিন্দা করেছেন। এ কারণেই কি ওবামার পক্ষে এ চুক্তি সমর্থন সম্ভব হবে না?
ইসরায়েলের কাছে নতজানু শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়। গ্রিক সাইপ্রাসের কর্তৃপক্ষ আইরিশ, বুলগেরীয় ও সুইডিশ সংসদের ১৭ জন সদস্যসহ একটি দলকে ছোট খেয়ানৌকায় চড়ে গাজার জন্য ত্রাণবাহী নৌবহরে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দ্বীপটির ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থরক্ষার’ দোহাই দিয়েই এ কাজটি তারা করেছে।
ইসরায়েলি মানদণ্ডের কাছে অত্যন্ত নতজানু যখন প্রতীচ্যের বেশির ভাগ অংশ, সেই সময়ে নৌবহরে যেসব বিদেশি জাহাজ ছিল, যারা ঠিক কাজটি করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেছে, তাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানানো উচিত।
গালফ নিউজ থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
লিন্ডা এস হার্ড: মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।
No comments