অভিমতঃ আসুন ঢাকা শহরকে বাঁচানোর উপায় নিয়ে কথা বলি by ফয়সাল কবীর শুভ
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক প্রতিবেদনে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মধ্যে থাকা এশীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাকে ১ নম্বরে স্থান দিয়েছে (সূত্র : বিডিনিউজ), যেখানে ঝুঁকি নিরূপণের জন্য ব্যবহৃত মাত্রার ১০ পয়েন্টের ভেতর ঢাকা ৯ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে।
এর পরে আছে ম্যানিলা ও জাকার্তা ৮ পয়েন্ট এবং সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে হংকং, কুয়ালালামপুর এবং সিঙ্গাপুর ৪ নম্বর নিয়ে। ডব্লিউডব্লিউএফ একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবাদী সংস্থা, যারা পৃথিবীর ৪৮টি দেশে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের (sustainable development) জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপালেও তাদের শাখা অফিস আছে। যাহোক, ঝুঁকি নিরূপণের জন্য তারা যে অনুমাপক (criteria) ব্যবহার করেছে সেগুলো হলো—জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে অনাবৃততা (exposure), স্পর্শকাতরতা (sensitivity) এবং অভিযোজন ধারণক্ষমতা (adaptive capacity); যেগুলোতে বাংলাদেশের পয়েন্ট যথাক্রমে ৮.৮ এবং ১০ অর্থাত্ অভিযোজন ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নাজুক। আমার এই লেখাটার একটা গূঢ় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঢাকা শহরকে পরিবেশগত পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে যেমন শহর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত বিবেচনা এবং নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করে করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা। উপরোল্লিখিত অনুমাপকগুলোতে সিঙ্গাপুরের পয়েন্ট হলো ৪.৬ এবং ১। আমি আমার এই লেখাটায় চেষ্টা করব ঢাকা শহরকে কিভাবে একটা টেকসই উন্নয়নের ফ্রেমওয়ার্কের ভেতর আনা যায়। এই বিষয়গুলো অনেকটাই টেকনিক্যাল এবং অনেক শব্দের উপযুক্ত বাংলা শব্দ পাওয়াও কঠিন হয়ে যায়।
আমি আসলে খুব হতাশ হয়ে যাই, যখন দেখি এখনও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডা করেই যাচ্ছি; কিন্তু এত কষ্টার্জিত দেশের স্বাধীনতার মূল্যায়ন করার কোনো চেষ্টাই মনে হয় কেউ করে না। কোনো সময়ই এই তাগিদ অনুভব করি না যে, স্বাধীনতার ৩৮ বছর পার হলেও আমরা এখনও উন্নয়নের ধারে-কাছেই ঘেঁষতে পারিনি। আমি যে ছোট্ট দেশটিতে এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য আছি, সেটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৬ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে; কিন্তু আজ এই দেশের মাথাপিছু আয় হলো প্রায় ৩০ হাজার ইউএস ডলার, যা ১৯৬৫তে ছিল মাত্র ৫১২ ইউএস ডলার। অথচ আমাদের কী অবস্থা? সিঙ্গাপুরের আমাদের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের লেশমাত্র নেই, নেই বিপুল সম্ভাবনাময় জনশক্তি, নেই কোনো কৃষিজ জমি। তারপরও যে এই বিশাল উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হয়েছে তা শুধু সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবিক প্রয়োগের জন। অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল স্থিতিশীলতা অনেক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে যেটা থেকে আমরা বঞ্চিত; কিন্তু আমরা বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক জনগণ যদি দেশের ভালোর জন্য পরিকল্পনা করি এবং তা অন্যকে বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে আমার মনে হয় সাফল্যের জন্য কোনো সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না—আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। আমি পেশায় একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হলেও এখন কিভাবে পরিবেশ সহায়ক অর্থনৈতিক এবং টেকসই উন্নয়ন (sustainable Development) করা সম্ভব, এসব নিয়েই পড়াশুনা করছি। আমাদের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় যেভাবে জলবায়ুজনিত ক্ষতি হয়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ ঢাকা শহরে জলবায়ুজনিত উদ্বাস্তুদের চাপ বাড়ছে, তাতে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা একটা পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। তবে ডব্লিউডব্লিউএফ-এর সাম্প্রতিক তথ্য কিন্তু সে রকম কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আপনি একটু সচেতন হলেই বুঝতে পারবেন, ঢাকা শহরের সমস্যাগুলো কত পারস্পরিকভাবে (interrelated) জড়িত। একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমরা আরেকটা সমস্যাকে ডেকে আনছি। আমাদের দেশের কোনো রাজনীতিক কিম্বা রাজনৈতিক দলের পরিবেশ বা জলবায়ুজনিত ঝুঁকি নিয়ে কোনো এজেন্ডা দেখি না। মনে হয়, সব দায়িত্ব পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা অথবা এনজিওদের। আসুন এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করি, সমাধানের বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলি।
পরিকল্পনাবিদ ফয়সাল কবীর শুভ
পিএইচডি গবেষক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর
আমি আসলে খুব হতাশ হয়ে যাই, যখন দেখি এখনও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডা করেই যাচ্ছি; কিন্তু এত কষ্টার্জিত দেশের স্বাধীনতার মূল্যায়ন করার কোনো চেষ্টাই মনে হয় কেউ করে না। কোনো সময়ই এই তাগিদ অনুভব করি না যে, স্বাধীনতার ৩৮ বছর পার হলেও আমরা এখনও উন্নয়নের ধারে-কাছেই ঘেঁষতে পারিনি। আমি যে ছোট্ট দেশটিতে এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য আছি, সেটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৬ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে; কিন্তু আজ এই দেশের মাথাপিছু আয় হলো প্রায় ৩০ হাজার ইউএস ডলার, যা ১৯৬৫তে ছিল মাত্র ৫১২ ইউএস ডলার। অথচ আমাদের কী অবস্থা? সিঙ্গাপুরের আমাদের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের লেশমাত্র নেই, নেই বিপুল সম্ভাবনাময় জনশক্তি, নেই কোনো কৃষিজ জমি। তারপরও যে এই বিশাল উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হয়েছে তা শুধু সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবিক প্রয়োগের জন। অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল স্থিতিশীলতা অনেক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে যেটা থেকে আমরা বঞ্চিত; কিন্তু আমরা বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক জনগণ যদি দেশের ভালোর জন্য পরিকল্পনা করি এবং তা অন্যকে বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে আমার মনে হয় সাফল্যের জন্য কোনো সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না—আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। আমি পেশায় একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হলেও এখন কিভাবে পরিবেশ সহায়ক অর্থনৈতিক এবং টেকসই উন্নয়ন (sustainable Development) করা সম্ভব, এসব নিয়েই পড়াশুনা করছি। আমাদের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় যেভাবে জলবায়ুজনিত ক্ষতি হয়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ ঢাকা শহরে জলবায়ুজনিত উদ্বাস্তুদের চাপ বাড়ছে, তাতে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা একটা পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। তবে ডব্লিউডব্লিউএফ-এর সাম্প্রতিক তথ্য কিন্তু সে রকম কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আপনি একটু সচেতন হলেই বুঝতে পারবেন, ঢাকা শহরের সমস্যাগুলো কত পারস্পরিকভাবে (interrelated) জড়িত। একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমরা আরেকটা সমস্যাকে ডেকে আনছি। আমাদের দেশের কোনো রাজনীতিক কিম্বা রাজনৈতিক দলের পরিবেশ বা জলবায়ুজনিত ঝুঁকি নিয়ে কোনো এজেন্ডা দেখি না। মনে হয়, সব দায়িত্ব পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা অথবা এনজিওদের। আসুন এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করি, সমাধানের বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলি।
পরিকল্পনাবিদ ফয়সাল কবীর শুভ
পিএইচডি গবেষক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর
No comments