৩৮ দিনেও হদিস নেই ইলিয়াসের-নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার

নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার আলীর হদিস মেলেনি ৩৮ দিনেও। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি তারা ঘটনার কোনো ক্লু (যোগসূত্র)।


ইলিয়াস আলী সম্পর্কে কোনো আশার কথাই শোনাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি ইলিয়াস আলী ও আনসার জীবিত, নাকি মৃত সে প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর মিলছে না।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর বাসভবন সিলেট হাউসে তল্লাশি চালানোর চেষ্টার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সিলেট হাউস ঘিরে নিয়মিত চলছে পুলিশের টহল এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত সপ্তাহে গভীর রাতে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাসায় আসা লোকদের কী উদ্দেশ্য ছিল, তা এখনো জানা যায়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে দুই রাতে সাদা পোশাকের লোকজন সিলেট হাউসে এসে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ চারটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলেও তা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। এ কারণে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে আরো সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এখনো পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারছেন না। গভীর রাতে কারা এসেছিল সে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে না। ওই রাতে কারা এসেছিল তা এখনো জানা যায়নি। এ কারণে পরিবারের সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। ওই রাতের পর থেকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তাঁর ছোট ছেলে লাবিব সারার ইলিয়াস। সে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী।
পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, গভীর রাতে পুলিশের কেউ ইলিয়াস আলীর বাড়িতে যায়নি। ওই রাতের পর থেকে ইলিয়াস আলীর বাড়ির সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) লুৎফুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, নিখোঁজ বিএনপি নেতাকে উদ্ধার করতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মেলেনি। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার ওসি (তদন্ত) মাঈনুল ইসলাম জানান, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের অগ্রগতি আদালতের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনকেও নিয়মিত জানানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধান পাননি তাঁরা। এখন পর্যন্ত আশ্বস্ত করার মতো কোনো কিছুই তাঁরা জানতে পারেননি।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল বলেন, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে র‌্যাবের একাধিক টিম তৎপর। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সব জায়গায় র‌্যাবের টিম অভিযান চালিয়েছে। র‌্যাবের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাঁর নিজস্ব বলয়ের লোকসহ এ পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সারা দেশেই ইলিয়াস আলীর খোঁজ করা হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালীর আমতলীর কাছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়ক থেকে গত ১৭ এপ্রিল রাত সোয়া ১২টার দিকে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক।

No comments

Powered by Blogger.