'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরি...' by আবু সাঈদ মোঃ নাজমুল হায়দার ও মোঃ মাহ্বুব আলম প্রদীপ

গত ৩ আগস্ট দৈনিক সমকালে প্রকাশিত ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক সুস্মিতা চক্রবর্তীর 'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরি নিরাপদ নয়' শীর্ষক লেখাটি পড়ে বিস্মিত হয়েছি। লেখক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। পৃথিবীর যে কোনো পেশার চাকরিই কি নিরাপদ?


আমরা জানি, চাকরিচ্যুত তিন শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই বিস্তারিত উল্লেখ করতে চাই না। লেখক তার লেখায় অসত্য, অযৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যহীন কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আমরা প্রকৃত সত্যটুকু তুলে ধরছি ;
লেখক বলেছেন, সভাপতির সুপারিশ সত্ত্বেও উপাচার্য নিয়োগের মেয়াদ নবায়ন করেননি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি তিন শিক্ষকের নিয়োগ বৃদ্ধির কোনো সুপারিশ করেনি এবং এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল উপাচার্যের দফতরেও যায়নি, বরং ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্তে তিন শিক্ষককে বিভাগের সব কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
লেখকের মতে, উপাচার্য তিন শিক্ষকের নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অথচ তিন শিক্ষককে যখন এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক এ নিয়োগকে অবৈধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। লেখকের বক্তব্য স্ববিরোধী।
স্বাধীন মত প্রকাশ এবং সৃজনশীল আন্দোলন বলতে যদি আইন হাতে তুলে নিয়ে বিভাগে তালা (তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি না করে) লাগানো, ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে তৎকালীন সভাপতিকে অশালীন ভাষায় সম্বোধন করানো এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের পদত্যাগে 'জয় বাংলা বাংলার জয়' স্লোগান দেওয়াকে লেখক বুঝিয়ে থাকেন, তবে স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতা সম্পর্কে সচেতন নাগরিক সমাজকে নতুন করে ভাবতে হবে।
লেখক বলেছেন, তৎকালীন সভাপতির অপসারণের দাবিতে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষকের সমর্থন ছিল। তবে সে সময় ক্যাম্পাসে যারা ছিলেন তারা জানেন তথাকথিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক'জন ছিল। লেখক উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক সমিতি তিন শিক্ষকের চাকরি নবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং উপাচার্যকে অবহিত করেছেন। আমাদের জানা মতে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির কোনো সাধারণ সভা হয়নি। এ ছাড়া কোনো তদন্ত ছাড়াই যখন নাট্যকলার সভাপতিকে (যিনি সমিতির সিনিয়র সদস্য) পদত্যাগে বাধ্য করা হলো তখন সমিতির ভূমিকা কী ছিল তা কিন্তু লেখক বলেননি।
তিনি তিন শিক্ষকের নিয়োগের মেয়াদ নবায়ন না করার জন্য বিষয়টিকে 'অমানবিক' বলে অভিহিত করেছেন। অথচ কিছুদিন আগে একই বিভাগের একজন এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত ও একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক যখন চাকরি হারালেন তখন মানবিকতা কোথায় ছিল? তাছাড়া তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত দাবি না করে অপসারণের জন্য চাপ প্রয়োগ করা কতটুকু মানবিক ছিল? সভাপতি নিজে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত দাবি করলেও আন্দোলনরত শিক্ষকরা তা করেননি। তদন্ত ছাড়া একজন ব্যক্তিকে পদত্যাগ করতে হবে_ এর চেয়ে অমানবিক আচরণ আর কী হতে পারে? পৃথিবীব্যাপী সব মানবাধিকার সংগঠনের মতে, বিচার ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া হলে তা কখনও মানবিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
হ লেখকগণ : শিক্ষক, লোক-প্রশাসন
বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.