যোগাযোগমন্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না-বেহাল সড়ক-মহাসড়ক
সড়কপথে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কিন্তু যোগাযোগমন্ত্রী, সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধবিষয়ক সেল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকার নেই। এ ব্যাপারে সরকারের একমাত্র সক্রিয়তা হলো দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা যথাসম্ভব কম করে দেখানো।
সরকারি হিসাবে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা হবে এর তিন গুণ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২০ হাজার ৩৪ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ সারা দেশের রাস্তাঘাটের দুর্দশা; যোগাযোগমন্ত্রী এর দায় চাপালেন বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও তার পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর: সে সময় ‘রাস্তার উন্নয়নে তেমন কোনো কাজই হয়নি। যেটুকু হয়েছে, তা-ও ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের।’ কিন্তু বর্তমান সরকারের আড়াই বছরেও উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ কেন হলো না, তার সদুত্তর নেই। তিনি বলেছেন, রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই বছরে টাকা ছাড় করা হয়েছে মাত্র ১০৭ কোটি। মেরামত না হওয়ায় একটার পর একটা সড়ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঈদের আগে লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এর পরও মন্ত্রীর স্বপদে থাকার নৈতিক অধিকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন জনগণের।
আর নৌপরিবহনমন্ত্রী, যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সঙ্গে যাঁর মন্ত্রণালয়ের কাজের কোনো সম্পর্ক নেই, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের এক সংগঠনের হয়ে তিনি আবদার জুড়েছেন, সাড়ে ২৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে পরীক্ষা ছাড়াই। এর আগেও একবার ১০ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এভাবে। এই হলো আমাদের সড়ক ও যানবাহন চলাচলব্যবস্থা! এর দায় কে নেবে? এভাবে যোগাযোগব্যবস্থা চলতে পারে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক মেরামতের অর্থ ছাড় করতে কেন বিশ্বব্যাংক আপত্তি জানাল? কারা চীনা কোম্পানির কাগজপত্র জালিয়াতি করে কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর যোগাযোগমন্ত্রীকে দিতে হবে। কেবল আগের সরকারের ওপর সব দায় চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না।
বিষয়টি এতই গুরুতর যে সড়ক যোগাযোগ-পরিস্থিতি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন। আমরা আশা করব, এই বৈঠকে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়কগুলো অবিলম্বে চালুর সিদ্ধান্ত হবে। সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। প্রশিক্ষণবিহীন লোকদের পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ২০০৯ সালে নৌমন্ত্রীর সুপারিশে যে ১০ হাজার লাইসেন্স পরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও বাতিল করা হোক। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের পাকড়াও অভিযান শুরু করুন। লাইসেন্স প্রদানে বিআরটিএর দুর্নীতি বন্ধ করার উদ্যোগ নিন। সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামতের যে কাজ শুরু হয়েছে, তার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
No comments