শহরাঞ্চলের শিশুদের জীবন-বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত হোক
ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেনস ফান্ড (ইউনিসেফ) সম্প্রতি বিশ্বের শিশুদের অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০১২ সালের এই প্রতিবেদনে বিশেষভাবে শহরাঞ্চলের শিশুদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্য
অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সমানতালে বাংলাদেশেও শহরাঞ্চল বিস্তৃত হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশে শহরাঞ্চলের বিস্তৃতির আবশ্যিক অনুষঙ্গ বস্তি। শহর যতই বাড়ে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। ক্রমবর্ধমান বস্তিগুলো শিশুদের জন্য একটি বসবাস-অযোগ্য পৃথিবী তৈরি করেছে। এখানে শিশুদের নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন মেটানোরও কোনো ব্যবস্থা থাকে না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে শিশুরা বেড়ে উঠতে থাকে। শুধু তাই নয়, বস্তিগুলোতে মৃত্যুহারও অনেক বেশি। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকাংশ বস্তিতেই শিশুরা বিশুদ্ধ ও পানযোগ্য পানি থেকে বঞ্চিত, যথাযথ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। এই বাসস্থানগুলো আকারে অপর্যাপ্ত, প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগে পর্যুদস্ত ও নিরাপত্তাহীন। এমন পরিস্থিতি শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। ইউনিসেফের পরামর্শ হলো, সরকার ও স্থানীয় সরকারের নানা স্তর থেকে শিশুদের জন্য উপযোগী ব্যবস্থা নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। নগর পরিকল্পনায় এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে শিশুরা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ পেতে পারে। বিভিন্ন দেশে নগর পরিকল্পনার সঙ্গে শিশুদের যুক্ত করা হয়। শিশুবান্ধব উদ্যোগ সহজ হয়। শিশুদের যাতে অধিকারবঞ্চিতভাবে বেড়ে উঠতে না হয় সেজন্য বিনামূল্যে আইনি সহায়তার প্রস্তাবও রিপোর্টে আছে। ইউনিসেফের রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে শিশুবান্ধব উদ্যোগ নিতে পারলে সেটি নিঃসন্দেহে আমাদের শিশুদের জন্য সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করবে। কিন্তু বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকা শহরে নগর পরিকল্পনায় যে অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে তাকে কি শিশুবান্ধব করে তোলার বিশেষ অবকাশ আছে? বস্তির শিশুরা বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে, কিন্তু অপেক্ষাকৃত ওপরের শ্রেণীগুলোর পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা একটি শহর শিশুদের তো বটেই, পূর্ণবয়স্কদের অধিকারও কি ঠিকভাবে রক্ষিত হতে পারছে। আমাদের শহরগুলোর পরিস্থিতি সুখকর নয়। এ শহরগুলোকে আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখনই।
No comments