নব-আনন্দে জাগো by আবিদ শাহ্রিয়ার
'বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর, নদেয় এলো বান'_ছোটবেলায় পড়েছিলাম এ কবিতা। বিস্ময় নিয়ে পড়েছিলাম। কিছুটা বুঝে অথবা না বুঝে। এরপর হারমোনিয়ামে একটু একটু করে বাজাতে শিখলাম, 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর'। বাণীবোধ তখন নেই বললেই চলে, কিন্তু সুরের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতাম। সেই থেকে শুরু।
আজ এত বছর পরে এসে তাঁর বিচিত্রগামী সৃষ্টির মধ্যে আমি যে রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই, সে রবীন্দ্রনাথ আমার অভিভাবক। আমার বিশ্বাস এই দেশেরও।
রবীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি আবিষ্কার করা আমার কাছে অসম্ভব মনে হয়। কী তাঁর বিস্তার, কী তাঁর ব্যাপকতা। সংগীত, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস, চিত্রকর্ম_সবখানেই তাঁর অতুলনীয় পদচারণ। আমাকে ক্ষমা করবেন যে আমি তাঁর সম্পর্কে লিখছি, এ আমার চরম স্পর্ধা, তাঁর সম্পর্কে লেখার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই।
বাবার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত আর মায়ের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি এ দুয়ের মেলবন্ধনেই বেড়ে ওঠা আমার। যতই বড় হচ্ছি ততই রবীন্দ্রনাথের একেকটি গান আমার কাছে লাখো গান হয়ে উঠছে। হাজার দুয়েক গানের রাজ্য তাঁর, কিন্তু কী বিস্ময়করভাবে মানুষের সব অনুভূতির কথা ব্যক্ত হয়েছে সেখানে। অসম্ভবকে কবি এখানেই সম্ভব করেছেন।
'সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
আমার মাঝে তোমার প্রকাশ তাই এতো মধুর।'
সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মে দেবতা পাঠিয়েছেন। আমার কাছে রবীন্দ্রনাথকে সেই দেবতাদেরই একজন মনে হয়। আমাকে ক্ষমা করবেন, এ আমার একান্ত অভিমত। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী অথবা কবিতা একটু খেয়াল করে পড়লে বুঝবেন যে তা কোনো দেবতার বাণী থেকে ছোট নয়। বরং বেশ মিল খুঁজে পাবেন।
'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না।'
গানটি শুনলেই মনে হয় যেন প্রিয় মানুষটির কথা বলছেন কবি, কিন্তু এ গানটি পূজা পর্যায়ের গান অর্থাৎ ঈশ্বরকে কবি বলেছেন এই কথা। ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের প্রেম অথবা মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রেম_এ যেন একই সুতায় গাঁথা। আর এখানেই রবীন্দ্রনাথ সাধারণ থেকে হয়েছেন অসাধারণ।
যে রবীন্দ্রনাথের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কিৃতিক বোধ আমাদের আকৃষ্ট করে, সেই রবীন্দ্রনাথই আমাদের নানা সংকটে পাশে এসে দাঁড়ান। দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে, দুর্যোগে, বিপদে-আপদে আমরা রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছি আমাদের পাশে, একজন বন্ধু হিসেবে-একজন সেনাপতি হিসেবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এমনকি বর্তমান সময়ে দেশের যেকোনো আন্দোলনে তাঁর গান ও রাজনৈতিক ভাবনা আমাদের সাহস জুগিয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে, করেছে উজ্জীবিত। 'বাংলার মাটি-বাংলার জল', 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে', 'সঙ্কটেরও বিহ্বলতা নিজেরে অপমান/সংকোচেরও কল্পনাতে হয়োনা ম্রিয়মাণ', 'ও আমার দেশের মাটি'। এসব গানই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা, যা এখনো আমাদের সাহস দিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করায় রবীন্দ্রনাথের অবদান হিমালয়তুল্য। বাঙালি জাতি আজ মাথা উঁচু করে বিশ্বের মাঝে প্রতিষ্ঠিত তার কারণও এই রবীন্দ্রনাথ। এই ফাঁকে বলে রাখি বিশ্বের মাঝে এমনকি এ দেশে সর্বসাধারণের কাছে সাধকপুরুষ লালন ও হাছন রাজাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই রবীন্দ্রনাথই।
জীবনব্যাপী সাধনার মধ্য দিয়ে কবি শুধু বাঙালা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেই শুধু সমৃদ্ধ করেননি বরং তাঁর জীবনের আরেক সাধনা ছিল মানুষের প্রতি মমত্ববোধ। তাঁর লেখনীর মূল বিষয়ই ছিল মানুষের জয়যাত্রা। এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে তিনি ছিলেন পদ্মাতীরের জমিদার। তাঁর প্রজাদের তিনি ভালোবাসতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন।
'এদের চাষার ভাষা, সম্বোধন এত মিষ্টি লাগে, আহা! এমন প্রজা আমি দেখিনি। এদের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং এদের অসহ্য কষ্ট দেখলে আমার চোখে জল আসে। এদের দিকে চেয়ে থাকলে সত্যই আমার হৃদয় বাৎসল্যে বিগলিত হয়ে যায়।' এসব সরল চাষির প্রতি দারোগা ও পুলিশের অকারণ জুলুমে জমিদার রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত বিরক্ত হতেন এবং প্রজাদের সাহায্য করতেন। পদ্মাতীরের এসব অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর 'দুর্বুদ্ধি' গল্পটির সৃষ্টি।
দূরদর্শী রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই বুঝেছিলেন যে পুঁজিবাদ মনুষ্যত্বের চরম শত্রু, যা তাঁর সময়ে এতটা প্রকট ছিল না এখনকার মতো। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে এ পুঁজিবাদ মানুষকে করবে মনুষ্যত্বহীন, ইচ্ছাশক্তিহীন যন্ত্র। এ পুঁজিবাদিতার বিরুদ্ধে তাই তাঁর সোচ্চার প্রতিবাদ ফুটে ওঠে 'রক্তকরবী'-র লেখনীতে।
রবীন্দ্রনাথ নেতৃত্বে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তাঁর নাটকে নেতার একক প্রচেষ্টায় পরিবর্তনগুলো ঘটে না। নন্দিনী সফল হতো না রঞ্জন, বিশু অথবা ফাগুলালের দলবলের সাহায্য না পেলে। বিসর্জনের অপর্ণা জয়ী হয় রাজা গোবিন্দমাণিক্য আর জয়সিংহের সহায়তা পেয়ে। সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় যে বিজয় আসে তা তাঁর লেখনীতে স্পষ্ট।
শিক্ষার অবস্থা ও ব্যবহার নিয়েও কবি তাঁর মত দিয়েছেন। মুখস্থ করার বিষয়ে একেবারে অমত তাঁর। 'শিক্ষা' প্রবন্ধে কবি বলেন,
'মুখস্থ করিয়া পাশ করাই তো চৌর্যবৃত্তি। যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়। আর যে তার চেয়েও লুকাইয়া লয় অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লয়, সেইবা কম কি করিল।'_এ বাণী রবীন্দ্রনাথ বলেই সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু ভাবনা এ লেখায় লিখলাম। শেষ করছি কবিগুরুর আরেকটি উক্তি দিয়ে_
'যে মরিতে জানে সুখের অধিকার তাহারি। যে জয় করে, ভোগ করা তাহাকেই সাজে। যে লোক জীবনের সাথে সুখকে, বিলাসকে আঁকড়িয়ে থাকে, সুখ তাহার কাছে নিজের সমস্ত ভাণ্ডার খুলিয়া দেয় না। তাহাকে উচ্ছিষ্ট মাত্র দিয়া দ্বারে ফেলিয়া রাখে। আর মৃত্যুর আহ্বান মাত্র যাহারা তুড়ি মারিয়া চলিয়া যায়, চির আদৃত সুখের দিকে পেছন ফিরিয়া তাকায় না, সুখ তাহাদিগকেই চায়। তাহারাই জানে যাহারা সবলে ত্যাগ করিতে পারে, তাহারাই প্রবলভাবে ভোগ করিতে পারে। ত্যাগের বিলাস বিরল কঠোরতার মাঝে পৌরুষ আছে। যদি স্বেচ্ছায় তাহা বরণ করি তবে নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাইতে পারিব।'
আমাদের সব কর্ম ও ভাবনা রবীন্দ্র-চেতনায় উদ্ভাসিত হোক। নব-আনন্দে জেগে উঠি আমরা। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম বার্ষিকীতে এ আমার প্রার্থনা। মনুষ্যত্বের জয় হোক।
রবীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি আবিষ্কার করা আমার কাছে অসম্ভব মনে হয়। কী তাঁর বিস্তার, কী তাঁর ব্যাপকতা। সংগীত, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস, চিত্রকর্ম_সবখানেই তাঁর অতুলনীয় পদচারণ। আমাকে ক্ষমা করবেন যে আমি তাঁর সম্পর্কে লিখছি, এ আমার চরম স্পর্ধা, তাঁর সম্পর্কে লেখার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই।
বাবার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত আর মায়ের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি এ দুয়ের মেলবন্ধনেই বেড়ে ওঠা আমার। যতই বড় হচ্ছি ততই রবীন্দ্রনাথের একেকটি গান আমার কাছে লাখো গান হয়ে উঠছে। হাজার দুয়েক গানের রাজ্য তাঁর, কিন্তু কী বিস্ময়করভাবে মানুষের সব অনুভূতির কথা ব্যক্ত হয়েছে সেখানে। অসম্ভবকে কবি এখানেই সম্ভব করেছেন।
'সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
আমার মাঝে তোমার প্রকাশ তাই এতো মধুর।'
সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মে দেবতা পাঠিয়েছেন। আমার কাছে রবীন্দ্রনাথকে সেই দেবতাদেরই একজন মনে হয়। আমাকে ক্ষমা করবেন, এ আমার একান্ত অভিমত। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী অথবা কবিতা একটু খেয়াল করে পড়লে বুঝবেন যে তা কোনো দেবতার বাণী থেকে ছোট নয়। বরং বেশ মিল খুঁজে পাবেন।
'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না।'
গানটি শুনলেই মনে হয় যেন প্রিয় মানুষটির কথা বলছেন কবি, কিন্তু এ গানটি পূজা পর্যায়ের গান অর্থাৎ ঈশ্বরকে কবি বলেছেন এই কথা। ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের প্রেম অথবা মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রেম_এ যেন একই সুতায় গাঁথা। আর এখানেই রবীন্দ্রনাথ সাধারণ থেকে হয়েছেন অসাধারণ।
যে রবীন্দ্রনাথের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কিৃতিক বোধ আমাদের আকৃষ্ট করে, সেই রবীন্দ্রনাথই আমাদের নানা সংকটে পাশে এসে দাঁড়ান। দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে, দুর্যোগে, বিপদে-আপদে আমরা রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছি আমাদের পাশে, একজন বন্ধু হিসেবে-একজন সেনাপতি হিসেবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এমনকি বর্তমান সময়ে দেশের যেকোনো আন্দোলনে তাঁর গান ও রাজনৈতিক ভাবনা আমাদের সাহস জুগিয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে, করেছে উজ্জীবিত। 'বাংলার মাটি-বাংলার জল', 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে', 'সঙ্কটেরও বিহ্বলতা নিজেরে অপমান/সংকোচেরও কল্পনাতে হয়োনা ম্রিয়মাণ', 'ও আমার দেশের মাটি'। এসব গানই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা, যা এখনো আমাদের সাহস দিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করায় রবীন্দ্রনাথের অবদান হিমালয়তুল্য। বাঙালি জাতি আজ মাথা উঁচু করে বিশ্বের মাঝে প্রতিষ্ঠিত তার কারণও এই রবীন্দ্রনাথ। এই ফাঁকে বলে রাখি বিশ্বের মাঝে এমনকি এ দেশে সর্বসাধারণের কাছে সাধকপুরুষ লালন ও হাছন রাজাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই রবীন্দ্রনাথই।
জীবনব্যাপী সাধনার মধ্য দিয়ে কবি শুধু বাঙালা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেই শুধু সমৃদ্ধ করেননি বরং তাঁর জীবনের আরেক সাধনা ছিল মানুষের প্রতি মমত্ববোধ। তাঁর লেখনীর মূল বিষয়ই ছিল মানুষের জয়যাত্রা। এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে তিনি ছিলেন পদ্মাতীরের জমিদার। তাঁর প্রজাদের তিনি ভালোবাসতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন।
'এদের চাষার ভাষা, সম্বোধন এত মিষ্টি লাগে, আহা! এমন প্রজা আমি দেখিনি। এদের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং এদের অসহ্য কষ্ট দেখলে আমার চোখে জল আসে। এদের দিকে চেয়ে থাকলে সত্যই আমার হৃদয় বাৎসল্যে বিগলিত হয়ে যায়।' এসব সরল চাষির প্রতি দারোগা ও পুলিশের অকারণ জুলুমে জমিদার রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত বিরক্ত হতেন এবং প্রজাদের সাহায্য করতেন। পদ্মাতীরের এসব অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর 'দুর্বুদ্ধি' গল্পটির সৃষ্টি।
দূরদর্শী রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই বুঝেছিলেন যে পুঁজিবাদ মনুষ্যত্বের চরম শত্রু, যা তাঁর সময়ে এতটা প্রকট ছিল না এখনকার মতো। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে এ পুঁজিবাদ মানুষকে করবে মনুষ্যত্বহীন, ইচ্ছাশক্তিহীন যন্ত্র। এ পুঁজিবাদিতার বিরুদ্ধে তাই তাঁর সোচ্চার প্রতিবাদ ফুটে ওঠে 'রক্তকরবী'-র লেখনীতে।
রবীন্দ্রনাথ নেতৃত্বে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তাঁর নাটকে নেতার একক প্রচেষ্টায় পরিবর্তনগুলো ঘটে না। নন্দিনী সফল হতো না রঞ্জন, বিশু অথবা ফাগুলালের দলবলের সাহায্য না পেলে। বিসর্জনের অপর্ণা জয়ী হয় রাজা গোবিন্দমাণিক্য আর জয়সিংহের সহায়তা পেয়ে। সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় যে বিজয় আসে তা তাঁর লেখনীতে স্পষ্ট।
শিক্ষার অবস্থা ও ব্যবহার নিয়েও কবি তাঁর মত দিয়েছেন। মুখস্থ করার বিষয়ে একেবারে অমত তাঁর। 'শিক্ষা' প্রবন্ধে কবি বলেন,
'মুখস্থ করিয়া পাশ করাই তো চৌর্যবৃত্তি। যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়। আর যে তার চেয়েও লুকাইয়া লয় অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লয়, সেইবা কম কি করিল।'_এ বাণী রবীন্দ্রনাথ বলেই সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু ভাবনা এ লেখায় লিখলাম। শেষ করছি কবিগুরুর আরেকটি উক্তি দিয়ে_
'যে মরিতে জানে সুখের অধিকার তাহারি। যে জয় করে, ভোগ করা তাহাকেই সাজে। যে লোক জীবনের সাথে সুখকে, বিলাসকে আঁকড়িয়ে থাকে, সুখ তাহার কাছে নিজের সমস্ত ভাণ্ডার খুলিয়া দেয় না। তাহাকে উচ্ছিষ্ট মাত্র দিয়া দ্বারে ফেলিয়া রাখে। আর মৃত্যুর আহ্বান মাত্র যাহারা তুড়ি মারিয়া চলিয়া যায়, চির আদৃত সুখের দিকে পেছন ফিরিয়া তাকায় না, সুখ তাহাদিগকেই চায়। তাহারাই জানে যাহারা সবলে ত্যাগ করিতে পারে, তাহারাই প্রবলভাবে ভোগ করিতে পারে। ত্যাগের বিলাস বিরল কঠোরতার মাঝে পৌরুষ আছে। যদি স্বেচ্ছায় তাহা বরণ করি তবে নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাইতে পারিব।'
আমাদের সব কর্ম ও ভাবনা রবীন্দ্র-চেতনায় উদ্ভাসিত হোক। নব-আনন্দে জেগে উঠি আমরা। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম বার্ষিকীতে এ আমার প্রার্থনা। মনুষ্যত্বের জয় হোক।
No comments