সমকালীন প্রসঙ্গ-মজিদের মার হাতে ল্যাপটপ... by অজয় দাশগুপ্ত
বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ছে। কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য কিনতে আগ্রহী অনেক দেশ। এ অবস্থায় নতুন ওঠা পাটের বাজার মন্দা হওয়ার কথা নয়। তাহলে কোনো মহল কি পাটের বাজারে মৌসুমের শুরুতে ধস নামাতে চায়? মজিদের মায়েদের হাতে ল্যাপটপ থাকলে তারা এ সংক্রান্ত তথ্য সহজে পেতে পারে।
আবারও বলছি, এ ল্যাপটপ কেবল একটি আধুনিক কম্পিউটার যন্ত্র নয়_ তথ্য জোগানো যে কোনো মাধ্যমই হতে পারে। তবে তাদের কাছে নিয়মিত তথ্য এবং অবশ্যই সঠিক তথ্যের জোগান দিয়ে যেতে হবে। যারা ভুল বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার করবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে
ষাটের দশকের শুরুতে রাজশাহীর একটি থানার (এখন উপজেলা) একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে দুই বস্তা সার পাঠানো হয়েছিল ঢাকা থেকে। তখন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের জমানা। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার 'সবুজ বিপ্লব' ঘটাতে সচেষ্ট ছিল। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পূর্ব পাকিস্তানকে দিয়েছিল উন্নত জাতের ধানের বীজ। এ ধানে ফলন বেশি। বোরো মৌসুমে চাষ করতে হয়। তবে চাষের জন্য প্রয়োজন পড়ে সেচের পানি ও রাসায়নিক সার এবং কখনও কখনও কীটনাশক ওষুধ। সে সময়ে ইউরিয়া সারের ব্যবহার তেমন ছিল না, দরকার পড়লে আমদানি করতে হতো। রাজশাহীতে চেয়ারম্যানের কাছে যে সার পাঠানো হয়েছিল তা সরকার দিয়েছিল বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। কিন্তু কোনো কৃষকই তা নিতে চায়নি। তারা সোজা-সাপটা চেয়ারম্যানকে বলে দেয়_ জমিতে সার দিলে গাছ মরে যায়। মাগনা সার, তাও কেউ নিতে চায় না। অগত্যা চেয়ারম্যান সাহেব সারের দুটি বস্তা রেখে দেন নিজের বাড়ির একটি গাছের গোড়ায়। তাকে বিস্মিত ও হতবিহ্বল করে কিছুদিনের মধ্যে গাছটিতে মড়ক লাগে এবং কৃষকরা হাতেনাতে প্রমাণ পেল_ রাসায়নিক সারে গাছ মরে যায়।
এখন কেউ যদি বলে যে সার প্রয়োগ করলে গাছ মরে যায়, সেটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কৃষি বিষয়ে জ্ঞান ও অজ্ঞানতার মধ্যে পার্থক্য শুধু পুঁথিগত নয়, উৎপাদনেও তার প্রভাব পড়ে_ সেটা অনেক কৃষক জানে। রাজশাহীর ওই থানায় (বর্তমানে উপজেলা) নব্বইয়ের দশকে কৃষকরা রাসায়নিক সারের দাবিতে আন্দোলন করেছে এবং কয়েকজনের রক্ত ঝরেছে পুলিশের গুলিতে।
কয়েকদিন আগে 'কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ সেবা বিষয়ে' এক আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। উদ্দেশ্য_ কৃষকের জন্য প্রযুক্তি সুবিধা কাজে লাগানো, যাতে তাদের জ্ঞানভাণ্ডার পোক্ত হয়। সেখানেই একজন শোনালেন প্রত্যাশা_ কৃষক যেমন কাঠের লাঙল ছেড়ে কলের লাঙল ধরেছে, তেমনি তার হাতে উঠবে ল্যাপটপ এবং তা কৃষির উন্নয়নের প্রয়োজনেই। ল্যাপটপ হচ্ছে প্রতীক। মূল বিষয় হচ্ছে কৃষকের কাছে চাষাবাদের নানা বুদ্ধি-পরামর্শ ও উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার কৌশল পেঁৗছে দেওয়া। এ জন্য যেমন তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হবে, তেমনি সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, কম্পিউটার-ল্যাপটপ_ হাতের কাছে যা মেলে সবকিছুর সহায়তা নিতে হবে। হাল আমলে আরেকটি বস্তু সর্বত্র মেলে_ মোবাইল টেলিফোন। শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র এর অবাধ গতি। কৃষক ও দিনমজুরদের যদি কেউ কিছু জানাতে চায়, তা মোবাইল ফোন সহজেই পেঁৗছে দিতে পারে। কে তাদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জরুরি খবর জানাবে? এ প্রশ্নের জবাবে সবার পরামর্শ_ জানাবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষককে চাষাবাদের জন্য ব্যাংক ঋণ পেতে কোনো ব্যাংকের কর্মীদের ঘুষ প্রদান বা হয়রানির ঘটনা ঘটছে কি-না, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা জানার জন্য কয়েকটি মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছে। কৃষকদের দিক থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-পরামর্শ কৃষকদের প্রদানের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করতে পারে। এ কাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর-অধিদফতর করতে পারে, জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, কৃষি মন্ত্রণালয় তার সামনের সারিতে রয়েছে। তারা যদি নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার প্রতি সমর্থন নানা পর্যায় থেকেই মিলবে। কিন্তু কথা বলা যত সহজ, কাজ তত সহজ নয়। আমাদের প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে অনীহা, দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রা ব্যাপক। কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞানের কথা পেঁৗছানোর কোনো আয়োজন করা হলেই তা বাস্তবায়নে সব সরকারি কর্মী দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তেমন আশা না করাই ভালো। অবশ্য, কৃষি ও কৃষকের ইস্যু এখন বেশি বেশি করে গুরুত্ব লাভ করতে শুরু করেছে। প্রশাসনে যারা রয়েছেন, তারাও বুঝতে পারছেন_ এ খাত অবহেলার সুযোগ নেই। তাই নতুন কিছু করা সম্ভব।
বহু বহু বছর এ ধারণা চালু ছিল যে, কৃষকরা ধান, পাট, আলু, মুলা, কলা ও অন্যান্য দ্রব্য ফলাবে, তার একটি অংশ বাজারে বিক্রি করবে সস্তা দামে। মাছ-ডিম-মাংসের উৎপাদন করেও তা খুব লাভ না রেখেই বাজারে ছাড়তে হবে। তার লাভের দিকটি দেখা যাবে না, কারণ তাতে নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের খাবার টেবিলে সমস্যা হবে। মধ্যবিত্তরা ক্ষুব্ধ হবে। রাজপথ গরম করবে। এ সমস্যা অনেক দেশেই রয়েছে। তাহলে কৃষক বাঁচবে কী করে? তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ আছে। চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ঘর পাকা করতে হতে পারে। এমনকি গাড়ি কেনার শখও থাকতে পারে। সচ্ছল কৃষকরাও এতদিন এসব বিষয় নিয়ে ভাবত না। তাদের কাছেও কৃষি লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হতো না। কয়েক বছর আগে পাট ও শিল্প সচিব একসঙ্গে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ বিষয়ে একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের প্রশ্ন করেছিলাম :বাজারে কাঁচা পাটের দাম বেশি হলে কৃষকের লাভ। আবার পাটের দাম বেশি পড়লে পাটশিল্পের সমস্যা বাড়ে। বেশি দামে কেনা পাটে যেসব পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয় তার দামও বেশি পড়ে। ফলে রফতানি বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ চাইলে কিন্তু রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে না। সরকার কী ভাবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানে সহায়তা দিতে পারে? সেখানে উপস্থিত দুই সচিবকে বলেছিলাম আপনাদের স্বার্থ কিন্তু সরাসরি বিপরীত_ পাট সচিব চাইবেন বেশি দামে পাট বিক্রি হোক (যাতে কৃষকের লাভ), কিন্তু শিল্প সচিব চাইবেন কম দাম থাকুক পাটের, যাতে শিল্পে কম দামে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হতে পারে। এ ধরনের সমস্যার ফয়সালা অবশ্য তাদের হাতে ছিল না।
কৃষকের প্রতি মনোভাব কিছুটা হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে। ষাটের দশকে আধুনিক প্রযুক্তি ও উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে থাকে। ধনী ও দরিদ্র সব ধরনের কৃষকই এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তবে দরিদ্ররা সেচ ও সারের ব্যবহার করলেও তার দাম বেশি হলে সমস্যায় পড়ে। সরকার তাদের এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারে। সরকার দরিদ্র কৃষকদের আরেকটি বিষয়ে সহায়তা দিতে পারে_ বাজারে প্রবেশ। ধান বা পাটের যেসব ফসল কয়েক মাস ধরে রাখা যায়, দরিদ্র কৃষকরা যেন তা আগাম বিক্রি করে দিতে বাধ্য না হয় সে জন্য ঋণ সহায়তা দেওয়া যায়। মোবাইল ফোন, বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এ ধরনের প্রয়োজনে কোথায় কীভাবে সাহায্য মিলবে, সেটা জানানো যায় কৃষককে।
কৃষকের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর প্রসঙ্গেই আসে ষাটের দশকের জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান_ মজিদের মার আসরের কথা। প্রতিদিন বিকেলের দিকে জনপ্রিয় সাংবাদিক-লেখক ফররুখশিয়ারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আড্ডাধর্মী এ আসরে মজিদের মা চরিত্রটি ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে দিয়ে কৃষকদের জন্য অনেক জরুরি উপদেশ-পরামর্শ দেওয়া হতো। সংসারের নানা খুঁটিনাটি বিষয়েও মিলত পরামর্শ। এখন দেশে অনেক বেতার ও টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র। শাইখ সিরাজ বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান করে কৃষকদের কাছে শুধু নন, মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষের কাছেও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। এখন চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয় তার অতি জনপ্রিয় 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ'। অন্যান্য টিভি চ্যানেলও কৃষি সংবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছে। খাদ্য জোগানের পাশাপাশি কৃষি এখন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহ বাড়ছে। সরকার এ জন্য নানা সহায়তার কথা বলছে। আদা-পেঁয়াজ-রসুন-হলুদ ইত্যাদি মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে বলেছে বিভিন্ন ব্যাংককে। কৃষকের পাশাপাশি বর্গাচাষিদের খুব কম সুুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ব্র্যাকের মাধ্যমে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষককে আধুনিক কৃষিজ্ঞানের খবর জানানোর পাশাপাশি চাষাবাদ ও বিপণনের জন্য যেসব সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তার খবরও জানানো দরকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে একটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে_ শিক্ষার প্রসার। কৃষক-দিনমজুর এবং শহরের বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ছাত্রীকে স্কুলে বেতন দিতে হয় না। ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে বই পায়। সরকার স্কুলগুলোতে কম্পিউটার সরবরাহ করছে। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও স্কুলে কম্পিউটার উপহার দিচ্ছে। এ সুবিধাকে কৃষি সংক্রান্ত জ্ঞানের প্রসারে কাজে লাগানো সহজ। 'মজিদের মায়ের আসর' প্রচার হতো কেবল 'রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র' থেকে। এখন কৃষকদের কাছে কৃষি কাজের পরামর্শ প্রদানের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে অনেক অনেক প্রতিষ্ঠান। তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবইয়েও কৃষি সংক্রান্ত বিষয় আরও বেশি করে স্থান পাওয়া দরকার। এ বিষয়ে যারা লিখবেন, তাদের কৃষি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান থাকা দরকার। অন্যথায়...সকলি গরল ভেল।
তবে এই তথ্য যেন সঠিক হয়, কেউ যেন কৃষককে ঠকাতে না পারে সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা চাই। কেউ যদি ভালো মানের বীজের ব্যাপক বিজ্ঞাপন দেয় এবং পরে প্রমাণ মেলে যে এ বীজ ভালো নয়, তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে এবং এ ঘটনার ব্যাপক প্রচার দিতে হবে। শুধু তথ্য জোগানো নয়, বাজারের প্রতিও নজর রাখা চাই। হাইব্রিড ধানের চাষ করতে গিয়ে অনেক কৃষক খারাপ মানের বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। কৃষকের কাছে বীজের গুণাগুণ বিচারের যন্ত্র নেই, এটা থাকার কথা সরকারের হাতে। একজন কৃষকের জমিতে ফসল না ফললে তার যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতি, তেমনি দেশেরও ক্ষতি। সোনালি আঁশ রফতানি করে বাংলাদেশ ভালো আয় করতে শুরু করেছে। এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। সংবাদপত্রে কেউ লিখছে, পাটের জন্য কৃষক ভালো দাম পাবে। আবার কেউ লিখছে, বাজার মন্দা থাকবে_ অতএব, দুর্ভাবনায় পড়ে কৃষক হতাশ। তাহলে কৃষক কোনটা বিশ্বাস করবে? ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সহজ নয়। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃষকের সর্বনাশও সহ্য করা উচিত নয়। পাটের বাজারে যদি শঙ্কা থাকে, সেটা কৃষককে যেমন জানাতে হবে, তেমনি সম্ভাবনার দিকটিও তুলে ধরতে হবে। বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ছে। কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য কিনতে আগ্রহী অনেক দেশ। এ অবস্থায় নতুন ওঠা পাটের বাজার মন্দা হওয়ার কথা নয়। তাহলে কোনো মহল কি পাটের বাজারে মৌসুমের শুরুতে ধস নামাতে চায়? মজিদের মায়েদের হাতে ল্যাপটপ থাকলে তারা এ সংক্রান্ত তথ্য সহজে পেতে পারে। আবারও বলছি, এ ল্যাপটপ কেবল একটি আধুনিক কম্পিউটার যন্ত্র নয়_ তথ্য জোগানো যে কোনো মাধ্যমই হতে পারে। তবে তাদের কাছে নিয়মিত তথ্য এবং অবশ্যই সঠিক তথ্যের জোগান দিয়ে যেতে হবে। যারা ভুল বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার করবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।
অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
ষাটের দশকের শুরুতে রাজশাহীর একটি থানার (এখন উপজেলা) একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে দুই বস্তা সার পাঠানো হয়েছিল ঢাকা থেকে। তখন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের জমানা। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার 'সবুজ বিপ্লব' ঘটাতে সচেষ্ট ছিল। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পূর্ব পাকিস্তানকে দিয়েছিল উন্নত জাতের ধানের বীজ। এ ধানে ফলন বেশি। বোরো মৌসুমে চাষ করতে হয়। তবে চাষের জন্য প্রয়োজন পড়ে সেচের পানি ও রাসায়নিক সার এবং কখনও কখনও কীটনাশক ওষুধ। সে সময়ে ইউরিয়া সারের ব্যবহার তেমন ছিল না, দরকার পড়লে আমদানি করতে হতো। রাজশাহীতে চেয়ারম্যানের কাছে যে সার পাঠানো হয়েছিল তা সরকার দিয়েছিল বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। কিন্তু কোনো কৃষকই তা নিতে চায়নি। তারা সোজা-সাপটা চেয়ারম্যানকে বলে দেয়_ জমিতে সার দিলে গাছ মরে যায়। মাগনা সার, তাও কেউ নিতে চায় না। অগত্যা চেয়ারম্যান সাহেব সারের দুটি বস্তা রেখে দেন নিজের বাড়ির একটি গাছের গোড়ায়। তাকে বিস্মিত ও হতবিহ্বল করে কিছুদিনের মধ্যে গাছটিতে মড়ক লাগে এবং কৃষকরা হাতেনাতে প্রমাণ পেল_ রাসায়নিক সারে গাছ মরে যায়।
এখন কেউ যদি বলে যে সার প্রয়োগ করলে গাছ মরে যায়, সেটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কৃষি বিষয়ে জ্ঞান ও অজ্ঞানতার মধ্যে পার্থক্য শুধু পুঁথিগত নয়, উৎপাদনেও তার প্রভাব পড়ে_ সেটা অনেক কৃষক জানে। রাজশাহীর ওই থানায় (বর্তমানে উপজেলা) নব্বইয়ের দশকে কৃষকরা রাসায়নিক সারের দাবিতে আন্দোলন করেছে এবং কয়েকজনের রক্ত ঝরেছে পুলিশের গুলিতে।
কয়েকদিন আগে 'কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ সেবা বিষয়ে' এক আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। উদ্দেশ্য_ কৃষকের জন্য প্রযুক্তি সুবিধা কাজে লাগানো, যাতে তাদের জ্ঞানভাণ্ডার পোক্ত হয়। সেখানেই একজন শোনালেন প্রত্যাশা_ কৃষক যেমন কাঠের লাঙল ছেড়ে কলের লাঙল ধরেছে, তেমনি তার হাতে উঠবে ল্যাপটপ এবং তা কৃষির উন্নয়নের প্রয়োজনেই। ল্যাপটপ হচ্ছে প্রতীক। মূল বিষয় হচ্ছে কৃষকের কাছে চাষাবাদের নানা বুদ্ধি-পরামর্শ ও উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার কৌশল পেঁৗছে দেওয়া। এ জন্য যেমন তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হবে, তেমনি সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, কম্পিউটার-ল্যাপটপ_ হাতের কাছে যা মেলে সবকিছুর সহায়তা নিতে হবে। হাল আমলে আরেকটি বস্তু সর্বত্র মেলে_ মোবাইল টেলিফোন। শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র এর অবাধ গতি। কৃষক ও দিনমজুরদের যদি কেউ কিছু জানাতে চায়, তা মোবাইল ফোন সহজেই পেঁৗছে দিতে পারে। কে তাদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জরুরি খবর জানাবে? এ প্রশ্নের জবাবে সবার পরামর্শ_ জানাবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষককে চাষাবাদের জন্য ব্যাংক ঋণ পেতে কোনো ব্যাংকের কর্মীদের ঘুষ প্রদান বা হয়রানির ঘটনা ঘটছে কি-না, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা জানার জন্য কয়েকটি মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছে। কৃষকদের দিক থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-পরামর্শ কৃষকদের প্রদানের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করতে পারে। এ কাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর-অধিদফতর করতে পারে, জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, কৃষি মন্ত্রণালয় তার সামনের সারিতে রয়েছে। তারা যদি নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার প্রতি সমর্থন নানা পর্যায় থেকেই মিলবে। কিন্তু কথা বলা যত সহজ, কাজ তত সহজ নয়। আমাদের প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে অনীহা, দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রা ব্যাপক। কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞানের কথা পেঁৗছানোর কোনো আয়োজন করা হলেই তা বাস্তবায়নে সব সরকারি কর্মী দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তেমন আশা না করাই ভালো। অবশ্য, কৃষি ও কৃষকের ইস্যু এখন বেশি বেশি করে গুরুত্ব লাভ করতে শুরু করেছে। প্রশাসনে যারা রয়েছেন, তারাও বুঝতে পারছেন_ এ খাত অবহেলার সুযোগ নেই। তাই নতুন কিছু করা সম্ভব।
বহু বহু বছর এ ধারণা চালু ছিল যে, কৃষকরা ধান, পাট, আলু, মুলা, কলা ও অন্যান্য দ্রব্য ফলাবে, তার একটি অংশ বাজারে বিক্রি করবে সস্তা দামে। মাছ-ডিম-মাংসের উৎপাদন করেও তা খুব লাভ না রেখেই বাজারে ছাড়তে হবে। তার লাভের দিকটি দেখা যাবে না, কারণ তাতে নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের খাবার টেবিলে সমস্যা হবে। মধ্যবিত্তরা ক্ষুব্ধ হবে। রাজপথ গরম করবে। এ সমস্যা অনেক দেশেই রয়েছে। তাহলে কৃষক বাঁচবে কী করে? তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ আছে। চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ঘর পাকা করতে হতে পারে। এমনকি গাড়ি কেনার শখও থাকতে পারে। সচ্ছল কৃষকরাও এতদিন এসব বিষয় নিয়ে ভাবত না। তাদের কাছেও কৃষি লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হতো না। কয়েক বছর আগে পাট ও শিল্প সচিব একসঙ্গে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ বিষয়ে একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের প্রশ্ন করেছিলাম :বাজারে কাঁচা পাটের দাম বেশি হলে কৃষকের লাভ। আবার পাটের দাম বেশি পড়লে পাটশিল্পের সমস্যা বাড়ে। বেশি দামে কেনা পাটে যেসব পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয় তার দামও বেশি পড়ে। ফলে রফতানি বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ চাইলে কিন্তু রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে না। সরকার কী ভাবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানে সহায়তা দিতে পারে? সেখানে উপস্থিত দুই সচিবকে বলেছিলাম আপনাদের স্বার্থ কিন্তু সরাসরি বিপরীত_ পাট সচিব চাইবেন বেশি দামে পাট বিক্রি হোক (যাতে কৃষকের লাভ), কিন্তু শিল্প সচিব চাইবেন কম দাম থাকুক পাটের, যাতে শিল্পে কম দামে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হতে পারে। এ ধরনের সমস্যার ফয়সালা অবশ্য তাদের হাতে ছিল না।
কৃষকের প্রতি মনোভাব কিছুটা হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে। ষাটের দশকে আধুনিক প্রযুক্তি ও উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে থাকে। ধনী ও দরিদ্র সব ধরনের কৃষকই এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তবে দরিদ্ররা সেচ ও সারের ব্যবহার করলেও তার দাম বেশি হলে সমস্যায় পড়ে। সরকার তাদের এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারে। সরকার দরিদ্র কৃষকদের আরেকটি বিষয়ে সহায়তা দিতে পারে_ বাজারে প্রবেশ। ধান বা পাটের যেসব ফসল কয়েক মাস ধরে রাখা যায়, দরিদ্র কৃষকরা যেন তা আগাম বিক্রি করে দিতে বাধ্য না হয় সে জন্য ঋণ সহায়তা দেওয়া যায়। মোবাইল ফোন, বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এ ধরনের প্রয়োজনে কোথায় কীভাবে সাহায্য মিলবে, সেটা জানানো যায় কৃষককে।
কৃষকের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর প্রসঙ্গেই আসে ষাটের দশকের জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান_ মজিদের মার আসরের কথা। প্রতিদিন বিকেলের দিকে জনপ্রিয় সাংবাদিক-লেখক ফররুখশিয়ারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আড্ডাধর্মী এ আসরে মজিদের মা চরিত্রটি ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে দিয়ে কৃষকদের জন্য অনেক জরুরি উপদেশ-পরামর্শ দেওয়া হতো। সংসারের নানা খুঁটিনাটি বিষয়েও মিলত পরামর্শ। এখন দেশে অনেক বেতার ও টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র। শাইখ সিরাজ বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান করে কৃষকদের কাছে শুধু নন, মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষের কাছেও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। এখন চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয় তার অতি জনপ্রিয় 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ'। অন্যান্য টিভি চ্যানেলও কৃষি সংবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছে। খাদ্য জোগানের পাশাপাশি কৃষি এখন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহ বাড়ছে। সরকার এ জন্য নানা সহায়তার কথা বলছে। আদা-পেঁয়াজ-রসুন-হলুদ ইত্যাদি মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে বলেছে বিভিন্ন ব্যাংককে। কৃষকের পাশাপাশি বর্গাচাষিদের খুব কম সুুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ব্র্যাকের মাধ্যমে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষককে আধুনিক কৃষিজ্ঞানের খবর জানানোর পাশাপাশি চাষাবাদ ও বিপণনের জন্য যেসব সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তার খবরও জানানো দরকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে একটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে_ শিক্ষার প্রসার। কৃষক-দিনমজুর এবং শহরের বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ছাত্রীকে স্কুলে বেতন দিতে হয় না। ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে বই পায়। সরকার স্কুলগুলোতে কম্পিউটার সরবরাহ করছে। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও স্কুলে কম্পিউটার উপহার দিচ্ছে। এ সুবিধাকে কৃষি সংক্রান্ত জ্ঞানের প্রসারে কাজে লাগানো সহজ। 'মজিদের মায়ের আসর' প্রচার হতো কেবল 'রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র' থেকে। এখন কৃষকদের কাছে কৃষি কাজের পরামর্শ প্রদানের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে অনেক অনেক প্রতিষ্ঠান। তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবইয়েও কৃষি সংক্রান্ত বিষয় আরও বেশি করে স্থান পাওয়া দরকার। এ বিষয়ে যারা লিখবেন, তাদের কৃষি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান থাকা দরকার। অন্যথায়...সকলি গরল ভেল।
তবে এই তথ্য যেন সঠিক হয়, কেউ যেন কৃষককে ঠকাতে না পারে সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা চাই। কেউ যদি ভালো মানের বীজের ব্যাপক বিজ্ঞাপন দেয় এবং পরে প্রমাণ মেলে যে এ বীজ ভালো নয়, তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে এবং এ ঘটনার ব্যাপক প্রচার দিতে হবে। শুধু তথ্য জোগানো নয়, বাজারের প্রতিও নজর রাখা চাই। হাইব্রিড ধানের চাষ করতে গিয়ে অনেক কৃষক খারাপ মানের বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। কৃষকের কাছে বীজের গুণাগুণ বিচারের যন্ত্র নেই, এটা থাকার কথা সরকারের হাতে। একজন কৃষকের জমিতে ফসল না ফললে তার যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতি, তেমনি দেশেরও ক্ষতি। সোনালি আঁশ রফতানি করে বাংলাদেশ ভালো আয় করতে শুরু করেছে। এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। সংবাদপত্রে কেউ লিখছে, পাটের জন্য কৃষক ভালো দাম পাবে। আবার কেউ লিখছে, বাজার মন্দা থাকবে_ অতএব, দুর্ভাবনায় পড়ে কৃষক হতাশ। তাহলে কৃষক কোনটা বিশ্বাস করবে? ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সহজ নয়। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃষকের সর্বনাশও সহ্য করা উচিত নয়। পাটের বাজারে যদি শঙ্কা থাকে, সেটা কৃষককে যেমন জানাতে হবে, তেমনি সম্ভাবনার দিকটিও তুলে ধরতে হবে। বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ছে। কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য কিনতে আগ্রহী অনেক দেশ। এ অবস্থায় নতুন ওঠা পাটের বাজার মন্দা হওয়ার কথা নয়। তাহলে কোনো মহল কি পাটের বাজারে মৌসুমের শুরুতে ধস নামাতে চায়? মজিদের মায়েদের হাতে ল্যাপটপ থাকলে তারা এ সংক্রান্ত তথ্য সহজে পেতে পারে। আবারও বলছি, এ ল্যাপটপ কেবল একটি আধুনিক কম্পিউটার যন্ত্র নয়_ তথ্য জোগানো যে কোনো মাধ্যমই হতে পারে। তবে তাদের কাছে নিয়মিত তথ্য এবং অবশ্যই সঠিক তথ্যের জোগান দিয়ে যেতে হবে। যারা ভুল বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার করবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।
অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
No comments