যখন দেখি ভুবনখানি তখন তাঁরে চিনি by শামা রহমান
মায়ের হাত ধরেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার পরিচয়। বাড়িতে সব সময় রবীন্দ্রনাথের গান বাজত এবং অনেক বড় বড় শিল্পীও এসে গান করতেন। শৈশব থেকে বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথকে আমি সব সময় পাশেই পেয়েছি তাঁর গান, কবিতা এবং ছোটগল্পের মাধ্যমে।
বড় হয়ে ওঠার পর প্রথমে আসলে বুঝতে পারিনি যে আমি রবীন্দ্রনাথের ভেতর এতটা প্রবেশ করেছি বা তিনি যে আমার অন্তরে এতটা গভীর দাগ ফেলেছেন। আমি সব সময় নিজেকে তাঁর গানের মধ্যেই খুঁজে পাই। তিনি ভীষণ আধুনিক মনের মানুষ ছিলেন। জীবনের খুব ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও এত সুন্দরভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যা হয়তো সাধারণভাবে আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম না। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে অনেক বড় একটা আশ্রয়। আমি ভেবে অবাক হই, একটা মানুষের পক্ষে কিভাবে এত বৈচিত্র্যময় গান রচনা করা সম্ভব! আমাদের জীবন চলার পথের প্রতিটি আনন্দ-বেদনা এবং বিষাদময় মুহূর্তগুলোকে নিয়ে তিনি সাহিত্য রচনা করে গেছেন। যা হয়তো কখনো আমাদের দিয়েছে অনুপ্রেরণা, কখনোবা বাড়িয়েছে মনোবল। সাহিত্যাঙ্গনে আমার অনেক পছন্দের ও শ্রদ্ধেয় মানুষ রয়েছেন, যাঁদের সৃষ্টিকর্মগুলোও আমাকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মকে আমার কাছে মনে হয় বাড়ি ফেরার মতো। সব জায়গা ঘুরে এসে বাড়িতে ফিরে যেমন প্রশান্তি লাগে, কবিগুরুর বেলায়ও আমার অনুভূতিটা তেমনি। আমার সব ভালো লাগার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি আছেন। তাঁর সব গান, গল্প, উপন্যাস, কবিতার মাঝে আমি সেই ঘরে ফেরার অনুভূতিটুকু পাই।
রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া বাঙালি জীবন কেমন হতো, এটা ভাবাই যায় না। আমি ভেবে পাই না সেটা কেমন সমাজ হতো, আমরাই বা কেমন মানুষ হতাম। আদৌ কি আমরা ভাবতে শিখতাম! তিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের যা দিয়ে গেছেন, তাঁর যথাযথ চর্চা করা এবং এর সঠিক সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। আজ তাঁর সার্ধশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই বাংলায় আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজে অংশীদার হতে পেরে অনেক গর্ববোধ করছি। রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধাটুকু আমি আমার কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই। সবশেষে তাঁর মতো করেই বলব, 'হেথা যে গান গাইতে আসা, আমার হয়নি সে গান গাওয়া, আজো কেবলই সুর সাধা, আমার কেবলই গাইতে চাওয়া।'
No comments