অস্কার ‘জিতেছিল’ যে কুকুর! by রাজীব হাসান
এবার অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের দৌড়ে জ্যঁ দুজারদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কে ছিল? উগি! নাহ, সেরা অভিনেতার মনোনয়ন তালিকায় খুঁজলে পাবেন না এর নাম। থাকার কথাও নয়, উগি যে আসলে চারপেয়ে কুকুর!
দি আর্টিস্ট ছবিতেই অসাধারণ অভিনয় করেছে প্রশিক্ষিত এ কুকুরটি।
দি আর্টিস্ট ছবিতেই অসাধারণ অভিনয় করেছে প্রশিক্ষিত এ কুকুরটি।
টেরিয়ার প্রজাতির এই কুকুরটির অভিনয় ক্যারিয়ার কিন্তু ছোট্ট নয় মোটেও। সাত বছর ধরে অভিনয় করে যাচ্ছে! দি আর্টিস্ট-এর আগে অভিনয় করেছে হোয়াট’স আপ স্কারলেট, ওয়াজ্জাপ রকার্স, মিস্টার ফিক্স ইট এবং ওয়াটার ফর এলিফ্যান্টস ছবিতে। দি আর্টিস্ট-এ জ্যাকের ভূমিকায় তার দুর্দান্ত অভিনয়ে চমৎকৃত ভক্তকুল দাবি তুলেছিল, এবার অস্কারে উগিকেও দেওয়া হোক বিশেষ পুরস্কার।
সেই দাবি কানে তোলেননি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের কর্তাব্যক্তিরা। তবে মজার ব্যাপার হলো, চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে মর্যাদার এই পুরস্কারের প্রথম আয়োজনেই কিন্তু জড়িয়ে আছে একটি কুকুরের নাম। এমন কিংবদন্তিও প্রচলিত, ১৯২৯ সালের প্রথম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতা বিভাগের ভোটাভুটিতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল রিন টিন টিন নামের একটি কুকুর!
কিন্তু পুরস্কারের যাত্রারম্ভেই কুকুরকে এই পুরস্কার দিলে সেটি অনেকের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠত। পুরস্কারটি ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি যে পরিকল্পনা আয়োজকদের, মার খেত শুরুতেই। তাই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও রিন টিন টিন শেষ পর্যন্ত সেরা অভিনেতার অস্কার জেতেনি। জিতেছেন এমিল জেনিংস।
জেনিংস আর রিন টিন টিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল, দুজনই ‘জার্মান’। জেনিংস হলিউডে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেলে জার্মানিতে ফিরে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নাৎসি বাহিনীতে যোগ দেন। গোয়েবলসের মস্তিষ্কপ্রসূত প্রপাগান্ডামূলক বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেন।
তবে রিন টিন টিন কিন্তু সাফল্যের সঙ্গেই তার ক্যারিয়ার চালিয়ে গেছে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। পরের বছরেই মৃত্যু ইতি টেনে দেয় এই জার্মান শেফার্ডের অভিনয় ক্যারিয়ারেরও (তার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল শোক!)। অবশ্য এর পরে তার উত্তরসূরি রিন টিন টিন জুনিয়র এবং রিন টিন টিন-টু নামের দুটি কুকুর সংক্ষিপ্ত ‘ক্যারিয়ার’ গড়েছিল হলিউডে। তবে রিন টিন টিনের মতো বিখ্যাত হতে পারেনি কেউই। রিন টিন টিন যে অভিনয় করেছিল তে-ই-শটি হলিউডের ছবিতে! শুধু তা-ই নয়, হলিউডের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রোসকে এই রিন টিন টিনই উদ্ধার করেছিল ধ্বংসের হাত থেকে!
এই সারমেয়র জীবনের গল্পটাও দুর্দান্ত। আক্ষরিক অর্থেই পথ থেকে রাজপ্রাসাদে উঠে আসার কাহিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন প্রায় বেজেই গেছে। চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের রণসজ্জা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মানবজাতি লিপ্ত হবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একে অন্যকে মুছে ফেলার দানবীয় এক খেলায়। সে সময় লি ডানকান নামের এক মার্কিন সেনা ফ্রান্সের এক শহর থেকে দুটো কুকুরছানা উদ্ধার করেন। তখনো ছানা দুটির চোখই ফোটেনি।
দুটো ছানার নাম ডানকান দেন রিন টিন টিন আর নেনেত্তে। ফ্রান্সের শিশুরা এই নামেই ডাকত মার্কিন সেনাদের। যুদ্ধ শেষ হলে রিন টিন টিনকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন লস অ্যাঞ্জেলেসবাসী ডানকান; নেনেত্তে আগেই মারা যায়।
ডানকানের এক বন্ধুই প্রথম প্রস্তাব দেয় রিন টিন টিনকে ছবিতে নামানোর। নির্বাক যুগের সময়টায় স্ট্রংহার্ট নামের আরেক জার্মান শেফার্ড বেশ তারকা হয়ে উঠেছিল। ডানকানের বন্ধু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রিন টিন টিন হয়ে উঠবে এর চেয়েও বড় তারকা। বলতেই হচ্ছে, চার্লস জোন্স নামের সেই বন্ধুটি পাকা জহুরি ছিলেন বটে।
১৯২২ সালে দ্য ম্যান ফ্রম দ্য হেলস রিভার ছবি দিয়ে হলিউডে অভিষেক রিন টিন টিনের। তবে প্রথম বড় কোনো ভূমিকায় অভিনয় করে পরের বছর। নির্বাক যুগের তারকা অভিনেত্রী ক্লেয়ার অ্যাডামসের সঙ্গে অভিনয় করে হয়্যার দ্য নর্থ বিগিনস ছবিতে। বক্স অফিসে ঝড় তুলে দেয় এই ছবি; এবং দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়ার্নার ব্রাদার্স পায় নতুন জীবন।
দ্রুতই তারকা হয়ে ওঠে রিন টিন টিন। হাজার হাজার সইশিকারির আবদারও মেটাতে হয় (তার পায়ের ছাপ দেওয়া হতো, নিচে লেখা থাকত—আপনার বিশ্বস্ত, রিন্টি)। রেডিওতেও ‘অভিনয়’ করেছে, মানে গলার আওয়াজ শুনিয়েছে; করেছে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যায় ১৯২৯-এর অস্কারে সেরা অভিনেতা বিভাগে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার গুঞ্জন। অবশ্য সেটি শুধুই গুঞ্জন ছিল, আরও অনেক হলিউডি গল্পগাথার একটি।
তবে সাদা-কালো যুগের হলিউডের তারকাদের তালিকা করতে হলে রিন টিন টিনকে রাখতেই হবে! সূত্র : এএফপি
সেই দাবি কানে তোলেননি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের কর্তাব্যক্তিরা। তবে মজার ব্যাপার হলো, চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে মর্যাদার এই পুরস্কারের প্রথম আয়োজনেই কিন্তু জড়িয়ে আছে একটি কুকুরের নাম। এমন কিংবদন্তিও প্রচলিত, ১৯২৯ সালের প্রথম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতা বিভাগের ভোটাভুটিতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল রিন টিন টিন নামের একটি কুকুর!
কিন্তু পুরস্কারের যাত্রারম্ভেই কুকুরকে এই পুরস্কার দিলে সেটি অনেকের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠত। পুরস্কারটি ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি যে পরিকল্পনা আয়োজকদের, মার খেত শুরুতেই। তাই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও রিন টিন টিন শেষ পর্যন্ত সেরা অভিনেতার অস্কার জেতেনি। জিতেছেন এমিল জেনিংস।
জেনিংস আর রিন টিন টিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল, দুজনই ‘জার্মান’। জেনিংস হলিউডে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেলে জার্মানিতে ফিরে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নাৎসি বাহিনীতে যোগ দেন। গোয়েবলসের মস্তিষ্কপ্রসূত প্রপাগান্ডামূলক বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেন।
তবে রিন টিন টিন কিন্তু সাফল্যের সঙ্গেই তার ক্যারিয়ার চালিয়ে গেছে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। পরের বছরেই মৃত্যু ইতি টেনে দেয় এই জার্মান শেফার্ডের অভিনয় ক্যারিয়ারেরও (তার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল শোক!)। অবশ্য এর পরে তার উত্তরসূরি রিন টিন টিন জুনিয়র এবং রিন টিন টিন-টু নামের দুটি কুকুর সংক্ষিপ্ত ‘ক্যারিয়ার’ গড়েছিল হলিউডে। তবে রিন টিন টিনের মতো বিখ্যাত হতে পারেনি কেউই। রিন টিন টিন যে অভিনয় করেছিল তে-ই-শটি হলিউডের ছবিতে! শুধু তা-ই নয়, হলিউডের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রোসকে এই রিন টিন টিনই উদ্ধার করেছিল ধ্বংসের হাত থেকে!
এই সারমেয়র জীবনের গল্পটাও দুর্দান্ত। আক্ষরিক অর্থেই পথ থেকে রাজপ্রাসাদে উঠে আসার কাহিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন প্রায় বেজেই গেছে। চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের রণসজ্জা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মানবজাতি লিপ্ত হবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একে অন্যকে মুছে ফেলার দানবীয় এক খেলায়। সে সময় লি ডানকান নামের এক মার্কিন সেনা ফ্রান্সের এক শহর থেকে দুটো কুকুরছানা উদ্ধার করেন। তখনো ছানা দুটির চোখই ফোটেনি।
দুটো ছানার নাম ডানকান দেন রিন টিন টিন আর নেনেত্তে। ফ্রান্সের শিশুরা এই নামেই ডাকত মার্কিন সেনাদের। যুদ্ধ শেষ হলে রিন টিন টিনকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন লস অ্যাঞ্জেলেসবাসী ডানকান; নেনেত্তে আগেই মারা যায়।
ডানকানের এক বন্ধুই প্রথম প্রস্তাব দেয় রিন টিন টিনকে ছবিতে নামানোর। নির্বাক যুগের সময়টায় স্ট্রংহার্ট নামের আরেক জার্মান শেফার্ড বেশ তারকা হয়ে উঠেছিল। ডানকানের বন্ধু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রিন টিন টিন হয়ে উঠবে এর চেয়েও বড় তারকা। বলতেই হচ্ছে, চার্লস জোন্স নামের সেই বন্ধুটি পাকা জহুরি ছিলেন বটে।
১৯২২ সালে দ্য ম্যান ফ্রম দ্য হেলস রিভার ছবি দিয়ে হলিউডে অভিষেক রিন টিন টিনের। তবে প্রথম বড় কোনো ভূমিকায় অভিনয় করে পরের বছর। নির্বাক যুগের তারকা অভিনেত্রী ক্লেয়ার অ্যাডামসের সঙ্গে অভিনয় করে হয়্যার দ্য নর্থ বিগিনস ছবিতে। বক্স অফিসে ঝড় তুলে দেয় এই ছবি; এবং দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়ার্নার ব্রাদার্স পায় নতুন জীবন।
দ্রুতই তারকা হয়ে ওঠে রিন টিন টিন। হাজার হাজার সইশিকারির আবদারও মেটাতে হয় (তার পায়ের ছাপ দেওয়া হতো, নিচে লেখা থাকত—আপনার বিশ্বস্ত, রিন্টি)। রেডিওতেও ‘অভিনয়’ করেছে, মানে গলার আওয়াজ শুনিয়েছে; করেছে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যায় ১৯২৯-এর অস্কারে সেরা অভিনেতা বিভাগে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার গুঞ্জন। অবশ্য সেটি শুধুই গুঞ্জন ছিল, আরও অনেক হলিউডি গল্পগাথার একটি।
তবে সাদা-কালো যুগের হলিউডের তারকাদের তালিকা করতে হলে রিন টিন টিনকে রাখতেই হবে! সূত্র : এএফপি
No comments