বিষের নহর!-কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নদীর মতো প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া একটি দেশের জন্য বর সমতুল্য। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় অনেক দেশ রয়েছে, যারা শীতলক্ষ্যার মতো একটি নদী থাকলে বর্তে যেত। একটি নদী, বিশেষ করে শীতলক্ষ্যার মতো মিষ্টি পানি প্রবাহিত নদীর মৎস্য, কৃষি উন্নয়ন থেকে শুরু করে যাবতীয় সাংসারিক জীবনের ব্যবহারে বিশেষ ভূমিকা রাখার কথা।
কিন্তু কী দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, ব্যক্তি উদ্যোগে শিল্পোন্নয়নের নামে এমন একটি নদীর মিষ্টি পানির স্রোতোধারাকে বিষের নহরে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। নিটিং, টেঙ্টাইল, কসমেটিকস ও ওষুধ কম্পানির বর্জ্য, বিশেষ করে ভয়াবহ ক্ষতিকর কেমিক্যাল বর্জ্যের কারণে গোটা নদীর পানি নানা রঙের বিষের ধারায় পরিণত হয়েছে। কম্পানিগুলোর পাশাপাশি কিছু অসচেতন মানুষ নদীকে বর্জ্যের আধারে পরিণত করে চলেছে। এতে শুধু যে কৃষিজমির সেচ বা দেশ মৎস্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা-ই নয়, দুই কূলের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনও এতে এক চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শুধু নদীকূলের জনগণই নয়, এর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে গোটা দেশের কেউ না কেউ। দিনের পর দিন অন্যায়ভাবে এই জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে দুপাড়ে গড়ে তোলা কম্পানিগুলোর মালিকরা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ যেন সরকারের জন্য একটি দুঃসাধ্য কাজে পরিণত হয়েছে। শুধু শীতলক্ষ্যাই নয়, একই দুরবস্থা দাঁড়িয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদের। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে শীতলক্ষ্যাসহ ঢাকা ও এর আশপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করার। কিন্তু সেসব পরিকল্পনার ১ শতাংশও বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। মাননীয় আদালত ২০০৯ সালে নদী বাঁচাতে নদীর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ বেশ কিছু অতিপ্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নদীগুলোকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে এখনো কোনো উন্নতি ঘটেনি। কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোন কোন কম্পানি কিভাবে নদী দূষণ করছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সহযোগী দৈনিকগুলোতেও প্রায়ই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না।
এসব নদী রক্ষার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলে থাকে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা এই 'নেওয়া হবে' অবস্থার পরিবর্তন চাই। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কেউ কঠোরভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আমরা এখন ব্যবস্থা নেওয়া দেখতে চাই। শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজন আছে। কিন্তু নদী ধ্বংস করে যে শিল্পোন্নয়ন, তার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের প্রতি আমাদের জোর অনুরোধ, অচিরে নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে শিল্পমালিকদের বাধ্য করতে হবে। নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেসব প্রতিষ্ঠান করতে পারবে না, তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান শীতলক্ষ্যাসহ মহামূল্য নদীগুলোর ক্ষতিসাধন করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে সরকারকে মনে রাখতে হবে, ব্যবস্থা গ্রহণে যদি বৈষম্যের আশ্রয় নেওয়া হয়, তাহলে কোনো পদক্ষেপ কার্যকর হয়ে উঠবে না।
No comments