চারদিক-আজ বসবে প্রাণের মেলা
হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন’বিরোধী আন্দোলনে যখন সারা বাংলা উত্তাল, শিক্ষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন আর বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে যখন ছাত্রসমাজ সোচ্চার, সে রকম একটি ঐতিহাসিক লগ্নে বাংলার ‘শিক্ষাশহর’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।
প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এ কলেজ এবং তৎসংলগ্ন হাসপাতাল বৃহত্তর ময়মনসিংহের দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। ১৯৬২ সালের এ রকমই কোনো এক আগুনঝরা ফাগুনে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। আজ ২ মার্চ, কলেজটি তার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ তার সুদীর্ঘ পথ চলায় তৈরি করেছে দেশবরেণ্য অসংখ্য চিকিৎসক, শিক্ষক ও দক্ষ সংগঠক। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন আর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের ছাত্রদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-চিকিৎসক। মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের অজস্র সেবিকা, কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ কলেজের চিকিৎসকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
এ কলেজের একজন কৃতী চিকিৎসক তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ধর্মান্ধতা ও নারীবিদ্বেষী নীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীলতার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখা থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এখানকার চিকিৎসকদের ভূমিকা সুবিদিত। আজও আমরা দেখতে পাই, দক্ষ সংগঠকের তালিকায় সর্বোচ্চসংখ্যক নাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের।
প্রতিষ্ঠাকালে কলেজটি গড়ে উঠেছিল লিটন মেডিকেল স্কুল ও সূর্যকান্ত হাসপাতালকে কেন্দ্র করে। ছোট্ট পরিসরে শুরু হলেও মেধাবী ছাত্র-শিক্ষকদের পদচারণে দ্রুত নজর কেড়ে নেয়। ধীরে ধীরে ছাত্র বাড়তে থাকল। রোগীদের আকাঙ্ক্ষা ও পরিচিতি বাড়ল দ্রুতলয়ে। স্বল্পপরিসর ছেড়ে বৃহৎ ক্যাম্পাস নিয়ে চরপাড়া নামক স্থানে অপরূপ স্থাপত্যশৈলী নিয়ে গড়ে উঠল সুবিশাল হাসপাতাল আর এককেন্দ্রিক কলেজ। গড়ে তোলা হলো ছাত্রদের আবাসস্থল, আধুনিক ছাত্রীনিবাস। শিক্ষকদের থাকার জায়গা হলো, কর্মচারী ও সেবিকারা পেলেন ক্যাম্পাসসংলগ্ন আবাসিক এলাকা। নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হলো। ছাত্রছাত্রীদের জন্য গড়ে তোলা হলো জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ ও পুকুর। সে সময় এ দেশে ক্রিকেট তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেই সত্তরের দশকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ টিম স্থানীয় ক্রিকেট লিগে দাপটের সঙ্গে অংশ নিত। উপহার দিয়েছে জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড়। ফুটবলে হয়েছে আন্তকলেজ চ্যাম্পিয়ন, বিতর্কে জাতীয় পর্যায়ে ছিনিয়ে এনেছে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান। এ কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস ঘিরে চলত নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বের হতো দেয়ালিকা, বসত সাহিত্যবাসর; নবীনবরণ আর শিক্ষাসমাপনী অনুষ্ঠান তো ছিল হররোজ ঘটনা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কলেজটি প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক তৈরি করেছে, গড়ে তুলেছে অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। বর্তমানে একই সঙ্গে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষকের সংখ্যাগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরীক্ষাগার হিসেবে হাসপাতালটির ভূমিকা অনন্য। গবেষণার ক্ষেত্রে এ কলেজের রয়েছে আন্তর্জাতিক সুনাম। দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে একমাত্র এ মেডিকেল কলেজের জার্নালটিই সর্বোচ্চ সম্মান ‘ইনডেক্স জার্নাল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। সারা দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক গবেষকের প্রথম পছন্দ এ জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা। ইতিমধ্যে নানা বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু হয়েছে। বিভাগগুলো শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়েছে। লাগসই প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিস্তৃত হয়েছে সেবার পরিধি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আজ সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন এই প্রাণের মেলা। আজ আনন্দে উদ্বেলিত হবেন সাড়ে তিন হাজার সমবেত চিকিৎসক। অনেক দিন পর দেখা হলে আপন মনেই বলে উঠবেন, ‘বন্ধু, কী খবর বল!’ ‘কেমন ছিলি’, ‘কোথায় আছিস’। মনে পড়বে তারুণ্যের নানা উজ্জ্বল স্মৃতি। তর্পিত হবে অনেক উজ্জ্বল ঘটনা, রচিত হবে বয়সতাড়িত উচ্ছ্বাস। নস্টালজিক হবেন কেউ কেউ। কেউ আবার মনের গভীরে একটু ‘স্মরণে রংধনু’ এঁকে বিদায় জানাবেন সহপাঠীকে, সহযোদ্ধাকে; আবার দেখা হবে—এ আশায়।
ডা. এ বি এম জামাল
সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ তার সুদীর্ঘ পথ চলায় তৈরি করেছে দেশবরেণ্য অসংখ্য চিকিৎসক, শিক্ষক ও দক্ষ সংগঠক। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন আর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের ছাত্রদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-চিকিৎসক। মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের অজস্র সেবিকা, কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ কলেজের চিকিৎসকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
এ কলেজের একজন কৃতী চিকিৎসক তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ধর্মান্ধতা ও নারীবিদ্বেষী নীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীলতার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখা থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এখানকার চিকিৎসকদের ভূমিকা সুবিদিত। আজও আমরা দেখতে পাই, দক্ষ সংগঠকের তালিকায় সর্বোচ্চসংখ্যক নাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের।
প্রতিষ্ঠাকালে কলেজটি গড়ে উঠেছিল লিটন মেডিকেল স্কুল ও সূর্যকান্ত হাসপাতালকে কেন্দ্র করে। ছোট্ট পরিসরে শুরু হলেও মেধাবী ছাত্র-শিক্ষকদের পদচারণে দ্রুত নজর কেড়ে নেয়। ধীরে ধীরে ছাত্র বাড়তে থাকল। রোগীদের আকাঙ্ক্ষা ও পরিচিতি বাড়ল দ্রুতলয়ে। স্বল্পপরিসর ছেড়ে বৃহৎ ক্যাম্পাস নিয়ে চরপাড়া নামক স্থানে অপরূপ স্থাপত্যশৈলী নিয়ে গড়ে উঠল সুবিশাল হাসপাতাল আর এককেন্দ্রিক কলেজ। গড়ে তোলা হলো ছাত্রদের আবাসস্থল, আধুনিক ছাত্রীনিবাস। শিক্ষকদের থাকার জায়গা হলো, কর্মচারী ও সেবিকারা পেলেন ক্যাম্পাসসংলগ্ন আবাসিক এলাকা। নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হলো। ছাত্রছাত্রীদের জন্য গড়ে তোলা হলো জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ ও পুকুর। সে সময় এ দেশে ক্রিকেট তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেই সত্তরের দশকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ টিম স্থানীয় ক্রিকেট লিগে দাপটের সঙ্গে অংশ নিত। উপহার দিয়েছে জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড়। ফুটবলে হয়েছে আন্তকলেজ চ্যাম্পিয়ন, বিতর্কে জাতীয় পর্যায়ে ছিনিয়ে এনেছে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান। এ কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস ঘিরে চলত নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বের হতো দেয়ালিকা, বসত সাহিত্যবাসর; নবীনবরণ আর শিক্ষাসমাপনী অনুষ্ঠান তো ছিল হররোজ ঘটনা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কলেজটি প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক তৈরি করেছে, গড়ে তুলেছে অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। বর্তমানে একই সঙ্গে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষকের সংখ্যাগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরীক্ষাগার হিসেবে হাসপাতালটির ভূমিকা অনন্য। গবেষণার ক্ষেত্রে এ কলেজের রয়েছে আন্তর্জাতিক সুনাম। দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে একমাত্র এ মেডিকেল কলেজের জার্নালটিই সর্বোচ্চ সম্মান ‘ইনডেক্স জার্নাল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। সারা দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক গবেষকের প্রথম পছন্দ এ জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা। ইতিমধ্যে নানা বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু হয়েছে। বিভাগগুলো শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়েছে। লাগসই প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিস্তৃত হয়েছে সেবার পরিধি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আজ সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন এই প্রাণের মেলা। আজ আনন্দে উদ্বেলিত হবেন সাড়ে তিন হাজার সমবেত চিকিৎসক। অনেক দিন পর দেখা হলে আপন মনেই বলে উঠবেন, ‘বন্ধু, কী খবর বল!’ ‘কেমন ছিলি’, ‘কোথায় আছিস’। মনে পড়বে তারুণ্যের নানা উজ্জ্বল স্মৃতি। তর্পিত হবে অনেক উজ্জ্বল ঘটনা, রচিত হবে বয়সতাড়িত উচ্ছ্বাস। নস্টালজিক হবেন কেউ কেউ। কেউ আবার মনের গভীরে একটু ‘স্মরণে রংধনু’ এঁকে বিদায় জানাবেন সহপাঠীকে, সহযোদ্ধাকে; আবার দেখা হবে—এ আশায়।
ডা. এ বি এম জামাল
সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
No comments