প্রশাসনে দুর্নীতি-বিধান মেনে ব্যবস্থা নিন

বিশ হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটভুক্ত_ এ তথ্য উদ্বেগজনক। বুধবার সমকালে 'দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ১০ হাজার কর্মচারী চাকরিতে বহাল' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের প্রায় অর্ধেক ইতিমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। যারা রয়ে গেছেন তাদের অনেকেই সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার বিধান এড়াতে পারছেন।


কেউ কেউ বিচার কাজ স্থগিত রাখার জন্য উচ্চ আদালতের রায় পেয়ে চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি পদোন্নতিও মিলছে।
দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হলেই তা আদালতে প্রমাণিত হবে, এমন কথা নেই। এমনকি চার্জশিটে নাম থাকলেও বেকসুর খালাস মিলতে পারে কিংবা হতে পারে লঘুদণ্ড। তবে সার্ভিস রুলে এমন একটি বিধান রাখার উদ্দেশ্য স্পষ্ট_ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই মামলাকে প্রভাবিত করতে না পারেন। দুর্নীতি দমন বিভাগ অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চার্জশিটভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আদেশ জারি হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়গুলো এখন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। এখন ফলের প্রত্যাশা থাকবে।
সরকারি প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি_ এমন অভিযোগ বহুদিনের। সচিবালয় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের হয়রানি-ভোগান্তির শেষ নেই। এই কালান্তক ব্যাধির হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কেই বিশেষভাবে তৎপর থাকতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদককে কারও অনুমতি গ্রহণ করতে হবে না_ এমন বিধান রেখে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১১ বিলটি পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতির মামলা পরিচালনায় দুদকের কর্তৃত্ব বেড়ে যাবে এবং অন্য আইনে যাই থাককু না কেন, তাদের আইনই গ্রহণযোগ্য হবে। এ বিলটি জাতীয় সংসদে দ্রুত অনুমোদন পাবে, এটাই আশা করব। এক বছর আগে ২০০৪ সালের আইনটি সংশোধন করার জন্য দুদক (সংশোধন) আইন সংসদে উপস্থাপন করা হলে এর 'সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক' ধারাটি খোদ দুদক কর্তৃপক্ষের সমালোচনার মুখে পড়ে। নাগরিক সমাজের তরফেও বলা হয়, এভাবে দুর্নীতি মোকাবেলার প্রতিষ্ঠানটিকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাধারণভাবে কোনো দুর্নীতির তথ্য বা অভিযোগ পেলে যথেষ্ট অনুসন্ধান চালানোর পরই দুদক মামলা করে থাকে। এ অবস্থায় প্রশাসনের কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে চাকরিতে বহাল রাখার যুক্তি থাকতে পারে না। তবে এ ক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত করার বিষয়ে আদালত, দুদক এবং মামলা সংক্রান্ত সব এজেন্সির সক্রিয়তা থাকতে হবে। দুদকের মামলার বিরুদ্ধে কেউ সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে তা মোকাবেলাতেও একই মনোভাব প্রত্যাশিত। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমনে 'ধর-মার-কাট' কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছিল। এ ধরনের ব্যবস্থা সাময়িক এবং তাতে আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে আমাদের চাই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতি দূর করার প্রতি।

No comments

Powered by Blogger.