প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞান বাড়ানো এখন জাতীয় প্রয়োজন-গোমতীর পাড় কেটে সাবাড়

নদী নিয়ে বহু দিন কোনো সুসংবাদ নেই। কেবলই দুঃসংবাদ আর অপঘাতের খবর। এবার কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড় কেটে সাবাড় করার খবর প্রকাশ করেছে বৃহস্পতিবারের প্রথম আলো। নদীর পাড়ের মাটি কাটা দ্রুত বন্ধ না করলে নদীর ক্ষতি তো হবেই, পাশের রেলসেতুটিও হুমকির মুখে পড়বে।


অবাধে নদীর এ রকম ক্ষতিসাধন হতে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের টনক নেই।
গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৩৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এই মাটি কাটার উৎসব। কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা কটক বাজার থেকে বুড়িচং উপজেলার কংসনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শত শত ট্রাক্টরে করে প্রতিদিন পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নদীর দেখভালের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু তাদের বক্তব্য যথারীতি দায়সারা: লোকবল নেই, চেষ্টা করা হচ্ছে ইত্যাদি।
খেয়াল করার বিষয়, অভিযোগ আছে যে এই নদীর মাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের মাটি ভরাটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে মাটি শুধু দুর্মূল্যই নয়, দুর্লভও বটে। অন্যদিকে অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি নির্মাণে বিপুল পরিমাণ নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। মাটির ব্যবসাও তাই জমজমাট। সাধারণত খাল-বিল-নদী-মাঠ ইত্যাদি কেটে ধ্বংস করেই এই মাটি জোগানো হয়। মূলত সরকারি খাসজমি তথা জনগণের সম্পত্তি এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেই এভাবে উন্নয়ন ও মুনাফার খোরাক জোগানো চলছে। প্রশ্ন তাহলে এই: সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কি এই মুনাফার ভাগীদার? এসব জায়গা সরকারের এখতিয়ারের অধীন হলেও প্রকৃতির ক্ষতিসাধন প্রতিরোধের কার্যকর কোনো চেষ্টা তারা করছে বলে মনে হয় না। তাই একের পর এক নদী-বন-জলাশয়-পাহাড় ধ্বংসের ঘটনার পরও এসব রক্ষায় কোনো জাতীয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যাচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কিছু তৎপরতার কথা বললেও সেগুলো যে কার্যত অর্থহীন, ৩৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর পাড় কাটা অব্যাহত থাকাই তার প্রমাণ। এসব মাটি কাটার ঠিকাদার এবং তাঁদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক বলেছেন পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জনমত গঠনের প্রয়োজনের কথা। জনমত গঠিতই রয়েছে, প্রশাসন ও প্রশাসকদের দায়িত্বজ্ঞান ঠিক করাই বেশি প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.