যোগাযোগ-দেশে তো গৃহযুদ্ধ নেই by শাহ্দীন মালিক

অধম প্রায় সবাই দু-একটা পত্রিকা পড়ি। পুরো না পড়লেও অন্তত চোখ বুলাই। সময় থাকলে একটা ইংরেজি পত্রিকায়ও চোখ বুলাই। আরও দু-একটা পত্রিকার সৌজন্য সংখ্যাও মেলে। তবে সৌজন্য সংখ্যাগুলো যাঁদের উপহার দেওয়া হয়, তাঁরা পত্রিকাগুলো পান সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার দিকে।


সৌজন্য সংখ্যাগুলো পত্রিকার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে বিলি করা হয়, নিয়মিত হকারের মাধ্যমে নয়। তাই পেতে পেতে ১০টা-১১টা। আর তাই সাধারণত পড়া হয় না শুক্র ও শনিবার ছাড়া।
রাতে ১১টা থেকে বিভিন্ন ‘চ্যানেল-সার্চিং’ অর্থা ৎ এই চ্যানেল, ওই চ্যানেল করে ঘণ্টা খানেক টেলিভিশনের খবর দেখি। টক শোও শুনি। সময় থাকলে বিবিসি, সিএনএন ইত্যাদিও দেখি মাঝেমধ্যে।
পাঠকের বিরক্তির কারণ ঘটিয়ে হলেও সংবাদ ইত্যাদি-সংক্রান্ত অধমের পরিচিতি জাহির করার একমাত্র কারণ হলো এটা প্রমাণ করা যে অধম দেশ-বিদেশের হালচালের সঙ্গে সামান্য হলেও পরিচিত। অল্পস্বল্প হলেও প্রায় প্রাত্যহিকভাবে সংবাদপত্র পড়ি, টেলিভিশনে খবর শুনি, অর্থা ৎ আবারও প্রমাণ করার চেষ্টা করছি যে খোঁজখবর রাখি।
খোঁজখবর রাখতে গিয়ে বর্তমানে আমাদের এই বাংলাদেশে যে গৃহযুদ্ধ চলছে, যা অন্তত কিছু কিছু অংশে বা অঞ্চলে গৃহযুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান, তেমন খবরটি চোখে পড়েনি বা স্বকর্ণে শুনিনি।
খবরাখবর-সংক্রান্ত বিদ্যা জাহির করতে অকপটে স্বীকার করেছি, সব পত্রিকা পড়ি না এবং সব চ্যানেলের খবর শুনি না। অতএব, না-পড়া কোনো পত্রিকায় বা না-দেখাশোনা কোনো টিভি চ্যানেলের খবরে দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ ধরনের সংবাদ-খবর ‘মিস’ হলেও হতে পারে। কোনো পাঠক যদি দেশে গৃহযুদ্ধের খবর জেনে থাকেন, তাহলে জানালে ভীষণভাবে বাধিত হব। তবে ধারণা করেছি, বিজ্ঞ পাঠকজনও দেশে গৃহযুদ্ধ-সংক্রান্ত কোনো সংবাদ-খবর জানেন না।

২.
অবশ্য বর্তমানে বাংলাদেশে না থাকলে কী হবে, এন্তার দেশে গৃহযুদ্ধ আছে। বহালতবিয়তে বিদ্যমান।
ইদানীং ছোট-বড় কত কারণেই যে গৃহযুদ্ধ হুট-হঠা ৎ করে লেগে যায়, তার হদিস রাখা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।
সিরিয়ার রাজা-বাদশারা—জানি আসলে রাষ্ট্রপতি, কিন্তু ভাবখানা তো রাজা-বাদশার মতো বংশপরম্পরায়-গোছের অসীম ক্ষমতা—প্রায় প্রতিনিয়ত নিজ দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে। প্রায় সপ্তাহেই শুনি, শত শত লোক ওই দেশের সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা পড়েছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফি সাহেব তো ট্যাংক-বিমান সবই ব্যবহার করেছেন নিজ দেশ জয় করার জন্য।
কয়েক মাস আগে আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর দু-দুজন ঘোষণা দিলেন যে প্রত্যেকেই নির্বাচনে জিতেছেন। তারপর আসলে কে জিতছেন, সেটা ফয়সালা করতে প্রায় মাস চারেক গৃহযুদ্ধ-গৃহযুদ্ধাবস্থা সে দেশে। শেষতক ফ্রান্স ঠিক করে দিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কে জিতেছেন।
গৃহযুদ্ধ কাহাকে বলে উহা কত প্রকার ইত্যাদি এই লেখার প্রতিপাদ্য নয়। মোদ্দাকথা হলো, অন্য বেশ কিছু দেশে হরেক রকমের গৃহযুদ্ধ চলছে, তবে বাংলাদেশে আমাদের জানামতে কোনো গৃহযুদ্ধ নেই, রহস্যটা সেখানেই। গৃহযুদ্ধ নেই কিন্তু সংবাদপত্র পাঠে মনে হতে পারে যে দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে।
গৃহযুদ্ধ হলে কী হয়? দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে, বিশেষ করে দেশের রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন শহর বা অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বা যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে—এখন যেমন সুদান দুই দেশে ভাগ হওয়ার পর সেখানে হচ্ছে—গৃহযুদ্ধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়লে যুদ্ধ শেষে আন্তর্জাতিক সহায়তায় সেই ভেঙে পড়া যোগাযোগব্যবস্থা পুনর্গঠিত করা হয়।
যোগাযোগব্যবস্থার মাপকাঠিতে দেশে নিঃসন্দেহে গৃহযুদ্ধসম অবস্থা বিদ্যমান—এ কথা যদি কেউ ভাবে, তাহলে ‘তাহারে দুষিব কেমনে’।
আগেই বলেছি, পত্রপত্রিকা পাঠে অথবা টিভি চ্যানেলের খবর শ্রবণে দেশে গৃহযুদ্ধের সংবাদ পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই শুক্রবার সকালের অনেক সংবাদপত্রে রাজধানীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অংশের যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার খবরে সয়লাব। এমন না যে বন্যার কারণে, প্লাবনে বা ভূমিকম্পের কারণে এমনতর হয়েছে। অর্থা ৎ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের বাসচালক সমিতি ও আনুষঙ্গিক ব্যক্তি এই রাস্তায় বাস আর চালাবেন না। আশপাশের এরূপ অনেক সড়ক-মহাসড়ক অর্থা ৎ টাঙ্গাইল-শিবপুর-কালিয়াকৈর ইত্যাদি এলাকায় যাওয়ার বড়সড় সড়কগুলোও যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত। এমনকি কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত। ধারণা ছিল, অন্তত ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক থাকবে টিপটপ, ফিটফাট। সে গুড়েও বালি। এখন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কেও যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ। অবশ্য এক অর্থে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছুই নেই। কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে সুযোগ্য সন্তান—অর্থা ৎ এই রাষ্ট্রের প্রধানতম ব্যক্তি—যদি তাঁর নিজ জেলায় যেতে চান, তাহলে তিনি তো আর আমজনতার মতো সড়কপথে যাবেন না। সম্ভবত যাবেন হেলিকপ্টারে চড়ে। অতএব, সড়ক ভালো না মন্দ, তাতে তাঁর কী আসে-যায়। অনুরূপভাবে কিশোরগঞ্জের অন্যান্য অত্যন্ত বড়মাপের ব্যক্তিত্ব অর্থা ৎ সংসদের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মন্ত্রী—কতজনই তো আছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ সড়কপথে যাওয়া দুষ্কর।
এত মহারথী থেকেও যখন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, তখন সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অংশে কোনো মহারথীর আদি নিবাস হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওই অংশের শিগগির মেরামত হবে, এমন প্রত্যাশা না করাই বাস্তবসম্মত। হোক না সেটা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ।

৩.
এত দিন ধারণা ছিল, দেশে গৃহযুদ্ধ বাধলে বা গৃহযুদ্ধসম অঘটন বা সেরূপ অরাজকতা সৃষ্টি হলে কোনো দেশের রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অথবা বন্যা-প্লাবন, ভূমিকম্প ইত্যাদি কারণে হঠা ৎ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
যদিও কয়েক দিন ধরে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে। এই মহাসড়কগুলো সেই প্রাকৃতিক কারণে বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়েছে দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে। এ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের এত দীর্ঘস্থায়ী এবং এত বেশি চরম অব্যবস্থাপনা শুরু হতে পারে গৃহযুদ্ধের কারণে। গৃহযুদ্ধ ছাড়া একসঙ্গে দেশের রাজধানীর সঙ্গে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের মতো জেলার, অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল যেমন, বৃহত্তর রাজশাহী—এত জায়গায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে গৃহযুদ্ধের কারণে। কিন্তু দেশে তো গৃহযুদ্ধ নেই। পত্রিকায়, বারবার বলছি, গৃহযুদ্ধ-সংক্রান্ত কোনো খবরাখবর নেই। নাকি সাংবাদিক ভাইবোনেরা অনেক খবর বেমালুম চেপে যাচ্ছেন?
নাহ্, আসলে দেশে কোনো গৃহযুদ্ধ নেই। তবে নিঃসন্দেহে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগলে যে চরম অব্যবস্থা বা কাজকর্ম সুচারুরূপে সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, আমাদের অবস্থাও অনেকটা সে রকম ঠেকছে।
অধমের বোকার মতো ধারণা জন্মেছিল যে যখন সরকারি দলের বড় নেতা বলছেন আর সেই দলেরই সাংসদেরা তাঁদের সমালোচনা তুলে ধরছেন, তখন নিশ্চয় একটা কিছু ব্যবস্থা হবে।
মাস তিনেক পর ব্যবস্থা হয়েছে—পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এ রকম মহাসড়কে গাড়ি চালানো আর সম্ভব নয়।
দীর্ঘদিনের অদক্ষতা আর অব্যবস্থাপনায় দেশের যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গৃহযুদ্ধ ছাড়া এ রকম যে হতে পারে, সেটা এতকাল জানা ছিল না।
জানলাম, বুঝলাম এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ল।
বাণিজ্যমন্ত্রী খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমানোর জন্য কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এবার নিশ্চয় পালা যোগাযোগমন্ত্রীর। আসছে ঈদে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ইত্যাদি জেলার লোকজন নিজ নিজ জেলায় না গিয়ে ঢাকায়ই ঈদ করেন—যোগাযোগমন্ত্রীর এমন উপদেশের অপেক্ষায় রইলাম।

৪.
একটা সরকার কত অদক্ষ হতে পারে, তার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত আমরা সবাই প্রাণভরে দেখছি। এক মন্ত্রী দাম কমানোর জন্য মুখ খুললেই দাম বাড়ে। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস—ক্রমাগতভাবে এমন পারদর্শিতা খুব কম মন্ত্রীই দেখাতে পেরেছেন। সন্দেহ হয়, অস ৎ ব্যবসায়ীরাই বোধ হয় এই মন্ত্রীকে দাম কমানোর কথা বলান। কারণ, তাঁরা বুঝে ফেলেছেন, মন্ত্রী যদি মূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন, আর তার পরপরই যদি দাম বাড়ে, তাহলে কৃতিত্বটা হবে মন্ত্রীর।
আমাদের এক বিচারপতি এম এ আজিজ ছিলেন। কত যে সমালোচনা হলো। কিছুতে কিছুই হয় না। শেষতক সবাই তাঁর নাম দিল আজিজ্যা। তাও ব্যাটা যায় না। শেষে কে যেন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করল।
বাণিজ্য হোক, যোগাযোগ হোক—অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা বা আনুষঙ্গিক ব্যর্থতা আমলে নেওয়ার রেওয়াজ তো আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গড়ে ওঠেনি। তবে খুব তাড়াতাড়ি যে জবাবদিহি আর দক্ষতার একটা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, সে ব্যাপারে অন্তত এই বান্দার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
গৃহযুদ্ধ ছাড়াই যে সরকার দেশের যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর করে ফেলতে পারে, সেই সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা নিশ্চয় আর আকাশচুম্বী নয়।
উড়ালরেল, পাতালরেল, উঁচুরেল, নিচুরেল, এই ওয়ে, সেই ওয়ে—কত কিছুই তো শুনলাম গত আড়াই বছরে। আমরা শুধু শুনেই গেলাম। এখনো শুনেই যাচ্ছি। ইদানীং যোগ হয়েছে, কত যেন, শত শত কোটি টাকার মেঘনা, নাকি পদ্মা সেতু। বেল পাকলে কাকের কী? যে সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো সড়ক চালু রাখতে পারে না দেশে গৃহযুদ্ধ না থাকা সত্ত্বেও, সেই সরকার নাকি এই রেল, ওই রেল, সেতু-ফেতু কত কিছু বানাবে। কথার ফেনা তুলতে তুলতেই অর্ধেক সময় পার।
বাকি অর্ধেক সময়টা নিশ্চয়ই যাবে জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধের যারা বিচার চায় না, তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাপাতে। সেই চিঁড়ে ভিজবে না।
যে সরকার গৃহযুদ্ধ ছাড়াই যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পেরেছে, সেই সরকার বাকি সময়টা জনগণের আরও দুর্ভোগের কারণ না হতে চাইলে সিরিয়াসলি তাকে ভাবতে হবে।
দক্ষতা-যোগ্যতার পরিবর্তে শুধু দলীয় আনুগত্যনির্ভর সরকার বা প্রশাসনযন্ত্র দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে জেতা যাবে না। কাজ দেখালে জনগণ ভোট দেবে। শিক্ষা, কৃষি এবং আরও দু-একটা মন্ত্রণালয় ছাড়া ভোট পাওয়ার মতো কাজ হচ্ছে না। যোগাযোগে হচ্ছে না, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বিদ্যু ৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেও হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আইন মন্ত্রণালয়ের অবস্থা যে কতটা লেজেগোবরে, তা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন না পড়েও বোঝা যায়। জোর গুজব, গণ্ডায় গণ্ডায় আওয়ামীপন্থীরা নাকি আবার বিচারপতি হচ্ছেন।
গৃহযুদ্ধ ছাড়াই যদি রাজধানীর সঙ্গে অনেক জেলার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, তাহলে আরও অনেক কিছুই ভেঙে পড়বে।
শাহ্দীন মালিক: জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

No comments

Powered by Blogger.