আইনপ্রণেতারা কেন আইন ভাঙবেন?-সাংসদদের ব্যবসা-বাণিজ্য

আইনে সাংসদদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বাধা না থাকলেও সরকারের সঙ্গে লাভজনক কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা চুক্তি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এ স্পষ্ট বলা আছে, সরকারের সঙ্গে লাভজনক চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হতে কিংবা নির্বাচিত হিসেবে বহাল থাকতে পারবেন না।


অথচ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের সাংসদেরা প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে এ ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৩ আগস্ট প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীর বাগমারা এলাকা থেকে নির্বাচিত সাংসদ এনামুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ ১৬তলা সিটি সেন্টার নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে। ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেই তিনি সিটি করপোরেশনের কাছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দাবি করেছেন ব্যাংকঋণ নেওয়ার জন্য। যদিও চুক্তিতে সে ধরনের বিধান নেই। অন্যদিকে তাঁরই মালিকানাধীন নর্দার্ন পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড রাজশাহীর কাটাখালীতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে চুক্তি করে। পিডিবি ওই কেন্দ্র থেকে পাঁচ বছর বিদ্যুৎ কিনবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে সাত টাকা ৭৮ পয়সা।
নামে-বেনামে অনেক সাংসদই সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ আছে। এর মাধ্যমে একদিকে তাঁরা আইনের লঙ্ঘন করেছেন, অন্যদিকে জনগণকে দেওয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন। আইনপ্রণেতারাই যদি আইন ভাঙেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে? জনপ্রতিনিধিদের প্রধান দায়িত্ব আইন প্রণয়ন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে জনপ্রতিনিধিরা আইন পাসের চেয়ে আইন ভাঙতেই বেশি উৎসাহী। তাঁরা জেনেশুনেই এ কাজ করছেন। না হলে বিধান না থাকলেও কী করে সাংসদ এনামুল হক সিটি করপোরেশনের ওপর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার জন্য চাপ দেন? মেয়র দিতে রাজি না হওয়ায় হয়তো তিনি আরও ওপরের কারও কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আদায় করে নেবেন। এটি কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও।
জনপ্রতিনিধিদের সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণ হলো, তাতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাংসদদের দায়িত্ব সরকারের কাজের হিসাব নেওয়া। কিন্তু নিজেরাই যদি সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তাহলে তাঁরা কীভাবে সরকারের কাজের হিসাব নেবেন? এ কারণেই সাংসদেরা সেসব মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিরও সদস্য থাকতে পারেন না, যেসব মন্ত্রণালয়ের কাজে তাঁদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত আছে। মাননীয় স্পিকারের নির্দেশে বর্তমান সংসদে কয়েকটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনও করা হয়েছে।
সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধু সরকারের উদাহরণ টানেন। জনপ্রতিনিধি আদেশটিও জারি হয়েছিল সেই সরকারের আমলেই। আদেশের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যাঁরা সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাঁদের সম্পর্কে সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং তদন্তে যদি দেখা যায়, কোনো সাংসদ সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাহলে তাঁদের যেকোনো একটি বাদ দিতে হবে। দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.