ভুল গ্রেফতারঃ এ অনিয়ম শাস্তিযোগ্য
আইন রক্ষা পুলিশের কাজ। পুলিশ এটি করবে অপরাধের শাস্তি এবং নিরীহ মানুষের সুরক্ষার জন্য। বিচারের দর্শনও কিন্তু তাই। বিচারের বেলাতেও লক্ষ্য রাখা হয়, নিরীহ কেউ যাতে শাস্তি না পায়। কিন্তু ঝিনাইদহের মানসিক প্রতিবন্দী ৩৫ বছর বয়সী সেলিমের বেলায় যেন তা প্রযোজ্য নয়। যে যুবকটি ১৫ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বাড়ির বাইরে যায়নি, এলাকাবাসী যাকে নিরপরাধ বলে জানে, তাকে কেবল নামের মিলের জন্য আটক করে জেলহাজতে চালান দিয়েছে ঝিনাইদহের পুলিশ।
এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় রোববারের সমকালে। এরই দু'দিন আগে প্রকাশিত হয় কারাগারের দেয়ালে মাথা ঠুকে আত্নহত্যা করতে চাওয়া এক অসুস্থ যুবকের কথা। সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, সেই আত্নহত্যাকামী যুবকটিই ঝিনাইদহের সেলিম। কখনোই মায়ের কাছ-ছাড়া না হওয়া মানসিক প্রতিবন্দী সেলিমের জেলের রূঢ় পরিবেশে যা হওয়ার তা-ই হয়। তার অসুস্থতা আরো বাড়ে।
যে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় তা ঘটে ২০০৪ সালে ঢাকার শাহবাগের আজিজ মার্কেটে। সেখানে ৬০ বোতল ফেনসিডিলসহ ২৫ বছর বয়সী এক সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বলিহারি পুলিশি তদনেস্নর ক্ষমতা, তারা অপরাধের প্রত্যক্ষ প্রমাণসহ যাকে আটক করেছেন, তার নামে চার্জশিট না দিয়ে দিয়েছেন ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে বসবাসরত কোনো দিন ঢাকায় না আসা দরিদ্র পরিবারের মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান সেলিমকে_ যদিও তার বয়স ৩৫! প্রকৃত অপরাধীকে ছেড়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করার এ প্রক্রিয়াটি যে নিরীহ নয়, তা স্বাভাবিক বদুিব্দতেই ধরা পড়ে। এ রকম ভুল হওয়া কঠিন যদি দুরভিসন্দি না থাকে। সংশ্লিষ্ঠ পুলিশ সাফাই গাওয়া।
প্রায়ই দেখা যায়, নামের মিলের জন্য বা কোনো কারণ ছাড়াই বিনাবিচারে জেলবাসের ঘটনা ঘটছে। যার জীবনে এটা ঘটছে, তার এ ক্ষতির কোনো প্রতিকার সম্ভব? এসব কাজ পুলিশ বাহিনীর ভেতরে কেউ কেউ যে করে থাকেন, তা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন, আদালতের রায় এবং সংবাদপত্রের পাতায় এর ভূরি ভূরি নজির ছড়ানো। সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের উচিত, এ রকম নিষ্ঠুর হয়রানি যাতে না হয় তার জন্য নজরদারি ও জবাবদিহিতা বাড়ানো। এছাড়া অবিলল্ফে্ব আটক সেলিমের মুক্তির ব্যবস্থা করাও তাদের নৈতিক দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, সরকারি বাহিনীর একজনের সামান্য গাফিলতি বা অনিয়মের পরিণতি কারো কারো জন্য মারাত্নক হয়ে উঠতে পারে।
No comments