অটোমেশন চালুর পরদিনই বন্দরে এফসিএল কনটেইনার জট by আসিফ সিদ্দিকী,

সিটিএমএস বা অটোমেশন চালু হওয়ার এক দিনের মাথায় ১৮ হাজার একক ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল) নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ধারণক্ষমতার কাছাকাছি পরিমাণ কনটেইনার জমে যাওয়ায় এগুলো সরাতে গত ১১ অক্টোবর আবারও জরুরি চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।চিঠিতে বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর এম আনওয়ারুল ইসলাম লিখেছেন, 'সিটিএমএস চালু হওয়ার পর বন্দরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আরো অধিক পরিমানে এফসিএল কনটেইনার প্রাইভেট আইসিডিতে নিয়ে গিয়ে খালাস করা জরুরি হয়ে পড়েছে।


এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা না হলে বন্দরের অপারেশনাল কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটবে, দেশের অর্থনীতি তথা বন্দর ব্যবহারকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।'তিনি বিভিন্ন উদাহরণ ও যুক্তি তুলে ধরে বলেন, '৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এফসিএল কনটেইনার আইসিডিতে স্থানান্তর ও খালাস করা না গেলে সিটিএমএস কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এ জন্য দ্রুত ২২টি আমদানিপণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে প্রাইভেট আইসিডিতে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বন্দরের মোট ধারণক্ষমতার ৪০ শতাংশ দখল করে থাকা এসব কনটেইনার শেড থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বশেষ বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু প্রস্তাব নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও সেগুলোর অনুমতি মেলেনি। তাই অটোমেশন কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় ফাঁকা জায়গা বের করা যাচ্ছে না। উল্টো গত দুই দিনে ডেলিভারি কম হওয়ায় কনটেইনার জট বেড়ে ১৮ হাজার একক ছাড়িয়ে গেছে। অথচ এফসিএল কনটেইনার ধারণক্ষমতা ১৯ হাজার একক।
বন্দর কর্তৃপক্ষ দুমাস আগে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক লিখিত প্রতিবেদনে এফসিএল কনটেইনারের কারণে বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতার কথা তুলে ধরে বলেছে, দ্রুত এফসিএল কনটেইনার বন্দর থেকে সরানো না গেলে তা অটোমেশন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দেখা দেবে। এ জন্য তাঁরা বিদ্যমান ১৭ আইটেমের বাইরে এফসিএল কনটেইনারে আসা আরো ২২ ধরনের পণ্য বেসরকারি আইসিডিতে খালাসের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানীকৃত পণ্য সরাসরি বেসরকারি আইসিডিতে অথবা আমদানিকারকের নিজস্ব চত্বরে খালাসের অনুমতি দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা; কিন্তু সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় একমত হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আর এ কারণেই বন্দরে এফসিএল কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে কনটেইনার জটের সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা যায়, বছরে ছয় লাখ একক এফসিএল কনটেইনার বন্দরে ওঠানামা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ কনটেইনার ঢাকা আইসিডি, ১৮টি বেসরকারি আইসিডি এবং আমদানিকারকদের নিজস্ব চত্বরে সরাসরি ডেলিভারি দেওয়া হয়। বাকি ৬৫ শতাংশ এফসিএল কনটেইনার বন্দরের শেডে রেখে, কনটেইনার খুলে ডেলিভারি দেওয়া হয়। এ কাজ করতে গিয়ে বন্দরকে বেশ বেগ পেতে হয়।
বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, 'পৃথিবীর কোনো দেশেই বন্দরের ভেতর কনটেইনার থেকে পণ্য খুলে ডেলিভারি দেওয়ার নিয়ম নেই। সব দেশে বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরই ব্যতিক্রম। এ সমস্যা থেকে যত দ্রুত পরিত্রাণ মিলবে ততই বন্দরের মঙ্গল।'
বন্দরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দৈনিক গড়ে এক হাজার ২০০ একক কনটেইনার বন্দরের অভ্যন্তরে খুলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করতে হয় এবং গড়ে দুই হাজার একক কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি দিতে হয়। বন্দরে কনটেইনার রাখার চারদিন ফ্রি টাইমের পরও আরো ছয় থেকে আটদিন বাড়তি কনটেইনার পড়ে থাকায় বছরে অন্তত ৩০ শতাংশ ইয়ার্ডের স্থানকে কাজে লাগানো যায় না। বন্দরের ভেতর এ কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে প্রতিদিন তিন হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান এবং আরো ছয় হাজার শ্রমিককে বন্দরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এসব কারণে আরো ৫ শতাংশ স্থান বন্দরের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন অবস্থা এমন হয়েছে রপ্তানি কনটেইনার আইসিডি থেকে সরাসরি জাহাজের হুক পয়েন্টে গিয়ে তোলা হচ্ছে। অথচ সিটিএমএস পদ্ধতিতে জাহাজ আসার ২৪ ঘণ্টা আগে কনটেইনার ইয়ার্ডে জমা হওয়ার কথা।'
তিনি বলেন, বন্দরকে সহায়তা করতে আমরা বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি। যত দ্রুত তিনি অ্যাপয়েনমেন্ট দেবেন ততই বন্দরের জন্য মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.