ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোতে উদ্বেগজনক চিত্র by আবু আহমেদ
আল-আরাফাহ্ধসঢ়; ইসলামী ব্যাংক ৩০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেবে বলে ঘোষণা করে বুক ক্লোজার তারিখ দিয়ে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত করেছে। ৩০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড বা বোনাস শেয়ার একটা ভালো অফার। বিনিয়োগকারীরা এই বোনাস পাওয়ার জন্য অনেক উঁচু দরে এই ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করেছে। বার্ষিক সাধারণ সভার পর তারা যখন অপেক্ষা করছিল কখন তাদের কাঙ্খিত বোনাস শেয়ারগুলোতে তাদের হিসাবে ত্রেক্রডিট হবে, তখনই খবর এলো বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইসু্যর অনুমোদন দিয়েছে।
এটা আগে আর কখনো ঘটেনি অন্তত বোনাস ইসু্য এবং ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দারুণ হতাশ হয়েছেন। তারা ভাবতে লাগলেন তাদের কী দোষ, তারা তো একটা ঘোষণাকে বিশ্বাস করেই বাজার থেকে শেয়ার কিনেছেন। যদিও একটা শর্ত এই ছিল যে, বোনাস ইসু্যটা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন করতে হবে। তবুও বিনিয়োগকারীরা এতদিন দেখে আসছে সাধারণত যেটা ঘোষণা করা হয় এবং যেটা পাস হয় সেটা রেগুলেটর কর্তৃক নাকচ হয় না। এ ক্ষেত্রে কি হতে পারে যে, যার কারণে ব্যাংকের বোনাস ইসু্যর প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক নাকচ করে দিল। অবস্থা এমন হতে পারে যে, ব্যাংক তার যাবতীয় কুঋণের বিপরীতে সংস্থান না করেই স্থিতিপত্রে লাভ দেখিয়েছে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়েছে। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক বোনাস শেয়ার ইসু্যর প্রস্তাব নাকচ করার কথা নয়। কারণ বোনাস ইসু্যর মাধ্যমে অর্থ ব্যাংকের বাইরে যায় না, শুধু লাভটাই ক্যাপিটালাইজেশন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন তথা শেয়ার-ক্যাপিটাল বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে সে ক্ষেত্রে আল-আরাফাহ্ধসঢ়; ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা হবে কেন? তবে লাভ না করেও ওই কৃত্রিম লাভের বিপরীতে স্টক ডিভিডেন্ড বা বোনাস শেয়ার ইসু্য করা যায় না।
সম্মানিত পাঠকদের বোঝার জন্য বলছি, কুঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং না দেখালে ব্যাংকের লাভ বেশি হতেই পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনেক সাকর্ুলারের মাধ্যমে কোনটাকে কুঋণ বলা হবে, কোনটাকে বলা হবে না_ সেটা সঙ্ষ্ঠ করেই বলে দিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ঋণের বিপরীতেও সাকর্ুলারের শর্ত মেনে মুনাফা থেকে স্থিতি রাখতে হয়। প্রভিশনিং না করলে বা স্থিতির ব্যবস্থা না করলে অনেক ব্যাংকেরই অনেক মুনাফা কাগজে-কলমে দেখানো যেত। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা রেগুলেটর কুঋণ, সন্দেহজনক ঋণ, নিন্মমানের ঋণের বিপরীতে লাভের থেকে সংরক্ষণের নিদরাউশ দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং ব্যবসার রেগুলেশন তথা তদারকি ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নত হলেও প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ফাঁকি-ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বোধকরি, আল-আরাফাহ্ধসঢ়; ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে কী কারণে এ ব্যাংকের স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হলো তার কোনো ব্যাখ্যা ব্যাংকও দেয়নি এবং রেগুলেটরও দেয়নি। দিলে বিনিয়োগকারীরা অন্তত বিষয়টা ভালো করে বুঝত। এভাবে চললে তো আসলে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণাতেই বিশ্বাস করা মুশকিল হবে।
আর একটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে অন্য ঘটনা ঘটেছে, সেটাও ইসলামী ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংক আমার শোনা মতে, বুক ক্লোজার দিয়েছে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে বলে। এ ঘোষণার ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগকারীরা রেকর্ড ডেটের আগ পর্যন্ত ওই ব্যাংকের শেয়ারটাকে বেচাকেনা করেছে। কিন্তু আশ্চযরাউর বিষয়, এই ব্যাংক তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এজেন্ডা পাস করিয়েছে ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড নয়, এটা হবে স্টক ডিভিডেন্ড। ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং স্টক ডিভিডেন্ডের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ক্যাশ ডিভিডেন্ডের তুলনায় স্টক ডিভিডেন্ড অনেক বেশি লাভজনক। তারা এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারগুলোকে বেচে দিয়েছে, এই প্রস্তাবের ফলে তারা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার জানা মতে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটা রেগুলেশন রয়েছে, যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে বুক ক্লোজার এবং শেয়ার হস্তান্তরের জন্য রেকর্ড ডেট ঘোষণা করা হবে ওই প্রস্তাবকে বার্ষিক সাধারণ সভায় বদলাতে পারে না। আর এ ধরনের রেগুলেশন বিশেষ খবর সর্বত্রই বিরাজমান। সাধারণ সভায় কোনো প্রস্তাবই লভ্যাংশের ধরন এবং পরিমাণকে বেশি-কম করতে পারে না। এটা যদি করা যেত তাহলে কোন বিনিয়োগকারীই কোন দরে শেয়ার কিনবে সেটা স্থির করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রেও একটা শর্ত ছিল, ওই প্রস্তাব ফাইনাল হবে যদি রেগুলেটর এসইসি অনুমোদন করে। আমরা জানি না রেগুলেটর এ ধরনের একটা বেআইনি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কি-না। তবে ব্যাংক বার্ষিক সাধারণ সভার কয়েকদিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের হিসাবে ওই বোনাস শেয়ারকে ত্রেক্রডিট করে দিয়েছে। এ নিয়ে রেগুলেটরও কোনো উচ্চবাচ্য করেনি এবং কোনো সংবাদ মাধ্যমে খবরও প্রচার হয়নি। অথচ এটা রেগুলেশনের একটা বড় বরখেলাপ। অন্য দেশে হলে এটা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যেত, কোটরাউ মামলা হতো এবং রেগুলেটর ব্যাংকের অনেকের চাকরিচু্যতির হুকুম দিত। যা-ই হোক, বাংলাদেশে এসবের কোনোটি ঘটেনি। আমার এসব মন্তব্য তখনই অর্থবহ হবে যদি এক্সিম ব্যাংক রেকর্ড তারিখে যে এজেন্ডা দিয়েছিল লভ্যাংশের ক্ষেত্রে তার যদি অন্যথা পাস করে বার্ষিক সাধারণ সভায়। আমি ওপরের বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের থেকে শুনেছি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনঃতদন্ত করে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারেন।
সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়টি ঘটছে প্রথম জেনারেশনের বাণিজি্যক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক তথা ইউসিটিতে। ওই ব্যাংক বিগত আট বছর ধরে তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো বার্ষিক সাধারণ সভা করছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের কোনো পরিচালক এককভাবে বা অন্যদের সঙ্গে মিলে বোর্ড গঠন করে হাইকোটরাউ একটা মামলা ঠুকে দিয়েছেন। আর অমনি সব এজিএম বন্দ হয়ে গেল। প্রশ্ন জাগে, কোনো সঙ্ন্সর ডাইরেক্টর যদি অপর সঙ্ন্সর ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে তাদের অন্তদর্্বনাউ্টর কারণে কোটরাউ মামলা করে দেন, তাহলে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান বন্দ হবে কেন? কোর্টকে কি একথা বলা হয়েছে যে, এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে? অথচ এটা তো ব্যাংক ম্যানেজমেনাউটরই দায়িত্ব কোর্ট থেকে অন্তত এজিএম করার অনুমতিটা ত্বরিত নিয়ে আসা। কিন্তু ব্যাংকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এটা মনে হবে যে, ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট যেন র্বতমান অবস্থা নিয়ে অতি সংকটে আছে। না হলে কেউ কি বিশ্বাস করবে একটা বড় বাণিজি্যক ব্যাংক আট বছর ধরেই শেয়ারহোল্ডারদের সভা করতে পারছে না। আর এ সবই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ও অন্য রেগুলেটর এসইসির নাকের ডগার ওপর। অন্য দেশে হলে শুধু এজিএম করার ব্যর্থতার কারণে এমডির চাকরি যেত এবং বোডরাউর পুরনো সদস্যরা অপসারিত হতো। এই দেশে সবাই যেন শুয়ে আছে। এতে ফল হচ্ছে সঙ্ন্সর ডাইরেক্টর ঠিকই তাদের সুবিধাগুলো তুলে নিচ্ছেন, আর ব্যাংকে অধরাউকেরও বেশি পুঁজির জোগান দিয়েছে এমন হাজার হাজার ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডার। আমি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির কাছে অতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব ইউসিবিএল অবস্থাটা দেখার জন্য। আর এই ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টকে একটা সঙ্ষ্ঠ ম্যাসেজ দেওয়া যে, তাদের এজিএম করতেই হবে এবং অতি সহসা। আমার ধারণা, র্বতমান স্থিতি অবস্থা ব্যাংক ম্যানেজমেনাউটর কাছে অতি বাঞ্ছনীয়। শোনা যায়, হাইকোর্ট এজিএম করার হুকুম দিয়েছেন তবে রায়টা এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। কেউ কি বিশ্বাস করবে একটা রায় হাতে পেতে পাঁচ মাস সময় লেগে যাবে! অনেকে বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রায় হাতে পেতেই ইচ্ছুক নয়, নইলে এই রায় অনেক আগেই হাতে পেয়ে যেত। ইউসিবিএল একটা স্বাবলম্বী ট্রেডেড ব্যাংকিং কোম্পানি। বাজারে বিনিয়োগকারী এই ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে। তারা বিগত আট বছর ধরে জানে না তাদের ব্যাংক কীভাবে চলছে, কারা ব্যাংকের বোডরাউ আছে। যে কোনো শেয়ারও বাজারে লেনদেন হয় তথ্যের ভিত্তিতে। ইউসিবিএলের ক্ষেত্রে কী তথ্য তারা বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে যার ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে লোকজন এই ব্যাংকের শেয়ার বেচাকেনা করবে? শুধু কি বাংলাদেশ ব্যাংকের হুকুম মানতে গিয়ে একটা আর্থিক রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলেই যথার্থ তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হলো। এটা তো হলো ক্ষুদ্রতম আবশি্যকতা, এর বাইরেও বার্ষিক প্রতিবেদনে অনেক তথ্য থাকে যেগুলো এজিএম হলে শেয়ারহোল্ডাররা পেতে পারত। আজকে ওইসব তথ্যকে শেয়ারহোল্ডারদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এটার অন্য দিকও আছে। যারা বোডরাউ বসে আছেন তারা ঠিকই ইউসিবিএলের সবই জানছেন এবং তাদের পক্ষে ইনসাইডার ট্রেডিং করার সুযোগও থেকে যায়। তাহলে ইউসিবিএল কর্তৃপক্ষ কীভাবে আজকে দীর্ঘ আট বছর ওইসব বাজারের ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারের থেকে, যারা ব্যাংকের অধরাউকেরও বেশি পুঁজি সরবরাহ করেছে, তাদের তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটা বৈষম্যমূলক অবস্থানে ফেলে রেখেছে? বিষয়টা এখন অনেকদিনের অবহেলিত গরমিল ইন্টারেস্টের পর্যায়ে চলে গেছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে আবারো অনুরোধ করব ইউসিবিএলের বিষয়টা দেখার জন্য, এই ব্যবস্থাপনা যদি নিদরাউশ মানতে ব্যর্থ হয় তাহলে এ ব্যবস্থাপনাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। যতদিন এই ব্যাংক এজিএম না করে ততদিনের জন্য, ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য। আজকে ইউসিবিএলের শেয়ারবাজারে বেচাকেনা হয় সত্য, তবে সম্পূর্ণ সেঙ্কুলেশনের ভিত্তিতে। এটাও তো পুরো বাজারের জন্য একটা ক্ষতির দিক। এরপরও কি আমাদের রেগুলেশন এই ব্যাংককে একটা জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে আনতে পারবে না?
সম্মানিত পাঠকদের বোঝার জন্য বলছি, কুঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং না দেখালে ব্যাংকের লাভ বেশি হতেই পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনেক সাকর্ুলারের মাধ্যমে কোনটাকে কুঋণ বলা হবে, কোনটাকে বলা হবে না_ সেটা সঙ্ষ্ঠ করেই বলে দিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ঋণের বিপরীতেও সাকর্ুলারের শর্ত মেনে মুনাফা থেকে স্থিতি রাখতে হয়। প্রভিশনিং না করলে বা স্থিতির ব্যবস্থা না করলে অনেক ব্যাংকেরই অনেক মুনাফা কাগজে-কলমে দেখানো যেত। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা রেগুলেটর কুঋণ, সন্দেহজনক ঋণ, নিন্মমানের ঋণের বিপরীতে লাভের থেকে সংরক্ষণের নিদরাউশ দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং ব্যবসার রেগুলেশন তথা তদারকি ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নত হলেও প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ফাঁকি-ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বোধকরি, আল-আরাফাহ্ধসঢ়; ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে কী কারণে এ ব্যাংকের স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হলো তার কোনো ব্যাখ্যা ব্যাংকও দেয়নি এবং রেগুলেটরও দেয়নি। দিলে বিনিয়োগকারীরা অন্তত বিষয়টা ভালো করে বুঝত। এভাবে চললে তো আসলে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণাতেই বিশ্বাস করা মুশকিল হবে।
আর একটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে অন্য ঘটনা ঘটেছে, সেটাও ইসলামী ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংক আমার শোনা মতে, বুক ক্লোজার দিয়েছে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে বলে। এ ঘোষণার ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগকারীরা রেকর্ড ডেটের আগ পর্যন্ত ওই ব্যাংকের শেয়ারটাকে বেচাকেনা করেছে। কিন্তু আশ্চযরাউর বিষয়, এই ব্যাংক তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এজেন্ডা পাস করিয়েছে ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড নয়, এটা হবে স্টক ডিভিডেন্ড। ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং স্টক ডিভিডেন্ডের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ক্যাশ ডিভিডেন্ডের তুলনায় স্টক ডিভিডেন্ড অনেক বেশি লাভজনক। তারা এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারগুলোকে বেচে দিয়েছে, এই প্রস্তাবের ফলে তারা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার জানা মতে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটা রেগুলেশন রয়েছে, যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে বুক ক্লোজার এবং শেয়ার হস্তান্তরের জন্য রেকর্ড ডেট ঘোষণা করা হবে ওই প্রস্তাবকে বার্ষিক সাধারণ সভায় বদলাতে পারে না। আর এ ধরনের রেগুলেশন বিশেষ খবর সর্বত্রই বিরাজমান। সাধারণ সভায় কোনো প্রস্তাবই লভ্যাংশের ধরন এবং পরিমাণকে বেশি-কম করতে পারে না। এটা যদি করা যেত তাহলে কোন বিনিয়োগকারীই কোন দরে শেয়ার কিনবে সেটা স্থির করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রেও একটা শর্ত ছিল, ওই প্রস্তাব ফাইনাল হবে যদি রেগুলেটর এসইসি অনুমোদন করে। আমরা জানি না রেগুলেটর এ ধরনের একটা বেআইনি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কি-না। তবে ব্যাংক বার্ষিক সাধারণ সভার কয়েকদিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের হিসাবে ওই বোনাস শেয়ারকে ত্রেক্রডিট করে দিয়েছে। এ নিয়ে রেগুলেটরও কোনো উচ্চবাচ্য করেনি এবং কোনো সংবাদ মাধ্যমে খবরও প্রচার হয়নি। অথচ এটা রেগুলেশনের একটা বড় বরখেলাপ। অন্য দেশে হলে এটা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যেত, কোটরাউ মামলা হতো এবং রেগুলেটর ব্যাংকের অনেকের চাকরিচু্যতির হুকুম দিত। যা-ই হোক, বাংলাদেশে এসবের কোনোটি ঘটেনি। আমার এসব মন্তব্য তখনই অর্থবহ হবে যদি এক্সিম ব্যাংক রেকর্ড তারিখে যে এজেন্ডা দিয়েছিল লভ্যাংশের ক্ষেত্রে তার যদি অন্যথা পাস করে বার্ষিক সাধারণ সভায়। আমি ওপরের বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের থেকে শুনেছি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনঃতদন্ত করে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারেন।
সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়টি ঘটছে প্রথম জেনারেশনের বাণিজি্যক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক তথা ইউসিটিতে। ওই ব্যাংক বিগত আট বছর ধরে তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো বার্ষিক সাধারণ সভা করছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের কোনো পরিচালক এককভাবে বা অন্যদের সঙ্গে মিলে বোর্ড গঠন করে হাইকোটরাউ একটা মামলা ঠুকে দিয়েছেন। আর অমনি সব এজিএম বন্দ হয়ে গেল। প্রশ্ন জাগে, কোনো সঙ্ন্সর ডাইরেক্টর যদি অপর সঙ্ন্সর ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে তাদের অন্তদর্্বনাউ্টর কারণে কোটরাউ মামলা করে দেন, তাহলে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান বন্দ হবে কেন? কোর্টকে কি একথা বলা হয়েছে যে, এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে? অথচ এটা তো ব্যাংক ম্যানেজমেনাউটরই দায়িত্ব কোর্ট থেকে অন্তত এজিএম করার অনুমতিটা ত্বরিত নিয়ে আসা। কিন্তু ব্যাংকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এটা মনে হবে যে, ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট যেন র্বতমান অবস্থা নিয়ে অতি সংকটে আছে। না হলে কেউ কি বিশ্বাস করবে একটা বড় বাণিজি্যক ব্যাংক আট বছর ধরেই শেয়ারহোল্ডারদের সভা করতে পারছে না। আর এ সবই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ও অন্য রেগুলেটর এসইসির নাকের ডগার ওপর। অন্য দেশে হলে শুধু এজিএম করার ব্যর্থতার কারণে এমডির চাকরি যেত এবং বোডরাউর পুরনো সদস্যরা অপসারিত হতো। এই দেশে সবাই যেন শুয়ে আছে। এতে ফল হচ্ছে সঙ্ন্সর ডাইরেক্টর ঠিকই তাদের সুবিধাগুলো তুলে নিচ্ছেন, আর ব্যাংকে অধরাউকেরও বেশি পুঁজির জোগান দিয়েছে এমন হাজার হাজার ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডার। আমি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির কাছে অতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব ইউসিবিএল অবস্থাটা দেখার জন্য। আর এই ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টকে একটা সঙ্ষ্ঠ ম্যাসেজ দেওয়া যে, তাদের এজিএম করতেই হবে এবং অতি সহসা। আমার ধারণা, র্বতমান স্থিতি অবস্থা ব্যাংক ম্যানেজমেনাউটর কাছে অতি বাঞ্ছনীয়। শোনা যায়, হাইকোর্ট এজিএম করার হুকুম দিয়েছেন তবে রায়টা এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। কেউ কি বিশ্বাস করবে একটা রায় হাতে পেতে পাঁচ মাস সময় লেগে যাবে! অনেকে বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রায় হাতে পেতেই ইচ্ছুক নয়, নইলে এই রায় অনেক আগেই হাতে পেয়ে যেত। ইউসিবিএল একটা স্বাবলম্বী ট্রেডেড ব্যাংকিং কোম্পানি। বাজারে বিনিয়োগকারী এই ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে। তারা বিগত আট বছর ধরে জানে না তাদের ব্যাংক কীভাবে চলছে, কারা ব্যাংকের বোডরাউ আছে। যে কোনো শেয়ারও বাজারে লেনদেন হয় তথ্যের ভিত্তিতে। ইউসিবিএলের ক্ষেত্রে কী তথ্য তারা বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে যার ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে লোকজন এই ব্যাংকের শেয়ার বেচাকেনা করবে? শুধু কি বাংলাদেশ ব্যাংকের হুকুম মানতে গিয়ে একটা আর্থিক রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলেই যথার্থ তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হলো। এটা তো হলো ক্ষুদ্রতম আবশি্যকতা, এর বাইরেও বার্ষিক প্রতিবেদনে অনেক তথ্য থাকে যেগুলো এজিএম হলে শেয়ারহোল্ডাররা পেতে পারত। আজকে ওইসব তথ্যকে শেয়ারহোল্ডারদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এটার অন্য দিকও আছে। যারা বোডরাউ বসে আছেন তারা ঠিকই ইউসিবিএলের সবই জানছেন এবং তাদের পক্ষে ইনসাইডার ট্রেডিং করার সুযোগও থেকে যায়। তাহলে ইউসিবিএল কর্তৃপক্ষ কীভাবে আজকে দীর্ঘ আট বছর ওইসব বাজারের ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারের থেকে, যারা ব্যাংকের অধরাউকেরও বেশি পুঁজি সরবরাহ করেছে, তাদের তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটা বৈষম্যমূলক অবস্থানে ফেলে রেখেছে? বিষয়টা এখন অনেকদিনের অবহেলিত গরমিল ইন্টারেস্টের পর্যায়ে চলে গেছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে আবারো অনুরোধ করব ইউসিবিএলের বিষয়টা দেখার জন্য, এই ব্যবস্থাপনা যদি নিদরাউশ মানতে ব্যর্থ হয় তাহলে এ ব্যবস্থাপনাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। যতদিন এই ব্যাংক এজিএম না করে ততদিনের জন্য, ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য। আজকে ইউসিবিএলের শেয়ারবাজারে বেচাকেনা হয় সত্য, তবে সম্পূর্ণ সেঙ্কুলেশনের ভিত্তিতে। এটাও তো পুরো বাজারের জন্য একটা ক্ষতির দিক। এরপরও কি আমাদের রেগুলেশন এই ব্যাংককে একটা জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে আনতে পারবে না?
No comments