নিঃশব্দে নিলামে গান্দীর চিঠি
'কোনো অন্যায় লড়াইয়ে সত্যাগ্রহ যায় না। ন্যায়ের লড়াইয়েও সত্যাগ্রহ ব্যর্থ হতে পারে, যদি সেই ব্যক্তির মধ্যে সত্যাগ্রহের উপযুক্ত সংকল্প এবং যোগ্যতা না থাকে। শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণা সহ্য করে যাওয়ার শক্তি তার না থাকে। হিংসার নূ্যনতম ব্যবহার ন্যায়ের জন্য সত্যাগ্রহকে নষ্ঠ করে দিতে পারে...।' মুলসি গ্রামের অধিবাসীদের সত্যাগ্রহ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকার জন্য ১৯২১ সালে গান্দীর লেখা। ১৯৩১ সালে মহাত্না গান্দীকে শ্রী অরবিন্দের লেখা। এমন বহু অমূল্য চিঠি, পান্ডুলিপি মিলিয়ে মোট ৭৯ পাতার দলিল। ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাসের মোড়কে ৪৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড মূল্যে নিলাম হয়ে গেল।
কয়েক দিন আগে গান্দীর লেখা শেষ চিঠি যাতে নিলামে না ওঠে, তার জন্য প্রচুর হৈচৈ হয়। এ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন মহলে কথাবার্তাও কম হয়নি। ক্রিসি্ট নিলাম সংস্থার কাছ থেকে শেষ পর্যন্ত চিঠিটি উদ্ধার করে ভারত সরকার। শুক্রবার সোদবির নিলামে উঠল গান্দীর সই করা ১১টি চিঠি, একটি পোস্টকার্ড। রয়েছে ৬টি চিঠি কংগ্রেসকর্মী বদরুল হাসানকে লেখা। একটিতে গান্দী প্রায় পোড়-খাওয়া আইনজীবীর মতোই বলেছেন, 'স্বদেশি নিয়ে তোমার লেখাটা পড়লাম। লেখার ধরন ভালো। ভাবনাও ভালো। কিন্তু সেটা আমার কাছে যথেষ্ঠ নয়। তথ্য পাঠাও... ।' জাফর হোসেনকে লেখা চিঠি হিন্দি ও উর্দু সাহিত্য বিষয়ে। রয়েছে শ্রী অরবিন্দ, মহম্মদ ইকবাল, সরোজিনী নাইডু প্রমুখের ১২টি চিঠি গান্দীকে লেখা। সেসব চিঠি পড়ার পর সেখানেই আবার মন্তব্য লিখে রেখেছেন গান্দী। রয়েছে গান্দীর নিজের সম্পাদিত সাপ্তাহিক 'ইয়ং ইন্ডিয়া'র জন্য লেখা বেশকিছু খসড়া পা-ুলিপি। জাতপ্রথা, সত্যাগ্রহ, খাদি প্রভৃতি বিষয়ে সেখানে নিজের মতাদশরাউর কথা বলছেন তিনি। বলছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ বিদেশনীতি নিয়ে তার স্বপম্নভঙ্গ এবং ক্ষোভের কথা। সোদবি শুক্রবার আলাদা করে উল্লেখ করেছে, গান্দীর নিজের হাতে লেখা এসব পা-ুলিপি কালেভদ্রে নিলামে আসে। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো তা নিয়ে খুব ঢাকঢোল পেটায়নি। নিঃশব্দে সেরে ফেলা হয়েছে নিলামের প্রক্রিয়া। গান্দীর শেষ চিঠি নিয়ে এত কাঠখড় পোড়ানোর পর, এতগুলো দুর্লভ দলিল সংগ্রহ করার চেষ্ঠা হলো না কেন। এ প্রশ্নের বিপরীতে ভারতের দায়িত্বশীলরা এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। এই দুর্লভ দলিলগুলো সংরক্ষণ করতে না পারার কারণটিকে অনেকেই খুব সঙ্গত কারণেই ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করতে ছাড়েননি। এ নিয়ে অনেকের রয়েছে চাপা ক্ষোভও। এখন সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্বশীলদের ব্যাখ্যাই ক্ষুব্ধদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমন করতে পারে।
No comments