শেয়ারবাজার চাঙ্গা

তন ঠেকাতে গত বুধবারের নানা উদ্যোগে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের উভয় শেয়ারবাজারে বেশ তেজি ভাবের মধ্যে শেষ হওয়া লেনদেনে এর প্রতিফলনও দেখা গেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৬টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে ২৪৫টিরই দর বেড়েছে। এদিন সাধারণ সূচক ২০৮ পয়েন্টেরও বেশি বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ৫৫৬৮ পয়েন্টে। সূচক বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।


অপর শেয়ারবাজার সিএসইতেও একই রকম তেজি ভাব লক্ষ্য করা গেছে। দু'দিনের দরবৃদ্ধি দেখে বাজার স্বাভাবিক হয়ে গেছে, এমনটি ধরে নেওয়া
ঠিক হবে না বলে সতর্ক করেছেন বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তারা বলেছেন, এই ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা ধরে রাখতে এখনই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ কর রেয়াতসহ ব্যাংকগুলোকে তাদের গত বছরের মুনাফা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ও ব্রোকারেজ কমিশন কমানোর তাগিদ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে টানা নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে গত দু'দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও গতকাল রাজধানীতে ডিএসই কার্যালয়ের সামনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কিছুসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিএসই প্রধান কার্যালয়ের সামনেও ইনভেস্টটর ফোরাম অব চট্টগ্রামের ব্যানারে বিনিয়োগকারীরা পূর্বঘোষিত অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এসব অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিনিয়োগকারীরা বাজার স্থিতিশীল করতে গত বুধবার যেসব পদক্ষেপ নেওয়া ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।
বাজার পরিস্থিতি : শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে গত বুধবারের নানা উদ্যোগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও বেশ আশার সঞ্চার করেছে। লেনদেন শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর সাধারণ সূচক বেড়ে যায় ১৯৪ পয়েন্টেরও বেশি। লেনদেন হওয়া ১৭৭টি কোম্পানির শেয়ার দরই বৃদ্ধি পায়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সূচক সর্বোচ্চ ২৮৬ পয়েন্টেরও বেশি বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা শেষে অর্ধেকসংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায় বুধবারের তুলনায় ৫ শতাংশেরও বেশি। এই সময় লেনদেন হওয়া ২৪৯টি কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ শেয়ারের দর ৩ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে অন্তত ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের যথেষ্টসংখ্যক ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা না থাকায় শেয়ার লেনদেন এক অর্থে থমকে ছিল। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯টিতে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিএসআরএম স্টিল, ফার্স্ট লিজ ইন্টারন্যাশনাল, জেমিনি সি ফুড, আইসিবি, গ্রামীণ ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, পপুলার ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সাভার রিফ্রেক্টরিজ।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত : কর রেয়াত সুবিধা পুনর্বহালসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গত বছরের মুনাফা শেয়ারবাজারে পুনঃবিনিয়োগের আশ্বাসে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা। এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগ আনতে হবে। আইনি সীমার মধ্যে ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে, সে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে হবে। ডিএসইর সাবেক সিইও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খানও বলেন, গতকালের লেনদেন দেখে মনে হয়েছে, এতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগ ছিল না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারকে স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না।

No comments

Powered by Blogger.