সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে সংসদ শক্তিশালী হয় না
দেশের প্রধান দুই দলের বিরোধপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে শক্তিশালী সংসদ গড়ে উঠতে পারে না। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সংসদের অবস্থা এক চাকাবিহীন বাইসাইকেলের মতো। বিরোধী দলবিহীন সংসদ এক অর্থে অকার্যকর। সবাই মিলে সংসদকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছি। যে কারণে গণতন্ত্র এখন সংকটে।গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে 'বাংলাদেশের সংসদ: প্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতা' শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে অধ্যাপক রেহমান সোবহান সংসদ কার্যকরের সুপারিশ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, এম কে আনোয়ার এমপি, অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি, ফজলুল আজিম এমপি, গোলাম মাওলা রনি এমপি, তারানা হালিম এমপি, ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান, এম এম আকাশ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিরা সংলাপে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, 'গণতন্ত্র একটি বিকাশমান ধারা। এ গণতান্ত্রিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই সংসদকে কার্যকরী করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে দেশের সমস্যাবলি নিয়ে গঠনমূলক বিতর্ক। সংসদ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সংসদীয় রীতি অনুসরণ করেন না।'
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'গণতন্ত্রের মূল কথা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু আমাদের দেশের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। সংসদের অবস্থা এক চাকাবিহীন বাইসাইকেলের মতো। আমরা সবাই মিলে সংসদকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছি। যে কারণে গণতন্ত্র এখন সংকটে।'
এম কে আনোয়ার বলেন, 'বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতির শাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর শাসনে ফিরে এসেছে। কিন্তু এতে রাষ্ট্রের গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ করা হলেও সেসব পরামর্শ আমলে নেওয়া হয়নি। এভাবে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না।' সংসদের ক্ষমতা নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, 'সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন আবশ্যক। গণতন্ত্রের বিকাশে অর্থ বিল, জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যতীত বাকি সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের ভোটাধিকার থাকা উচিত।'
সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্যের প্রসঙ্গ তুলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেন, 'ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি দোষের নয়। সমস্যা হলো, তাঁরা সংসদে বসেও ব্যবসার কথা ভাবেন।' সরকারি দলের এমপি আলী আশরাফ বলেন, 'এমপিরা সংসদে যান না। কিন্তু বেতন-ভাতা সবই নেন, বিদেশ সফরও করেন। এটা অনৈতিক।'
এম এম আকাশ বলেন, 'নির্বাচনে জেতার পর এমপিদের লক্ষ হয়ে থাকে পরবর্তী নির্বাচনে কিভাবে জেতা যাবে। সে জন্য তাঁরা টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এসব করতে গিয়ে তাঁরা সংসদের কথা ভুলে যান।' ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'সংসদকে কার্যকর করতে হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।'
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, 'সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা বলা থাকলেও ৪০ বছরেও তা হয়নি। মন্ত্রী-আমলাদের অনিচ্ছার কারণেই এটি হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশের সংসদে কমিটির কোনো ক্ষমতা নেই। বিরোধী দলের হেরে যাওয়া প্রার্থীরা দলীয়প্রধানকে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করেন। এটিই সংসদ বর্জনের অন্যতম কারণ।' তারানা হালিম বলেন, 'দলগুলোতে গণতন্ত্রের সংকট আছে বলেই তারা সংসদ বর্জন করে।' অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন রওনক জাহান।
রেহমান সোবহানের সুপারিশ : অতীতের যেকোনো সংসদের তুলনায় এবারের সংসদের কমিটিগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। তবে ক্ষমতা সীমিত। বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে তলবের ক্ষমতা তাদের নেই। কমিটির কাজ নিয়ে গবেষণা করার মতো লোক নেই। কমিটিগুলো পরামর্শ নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায় না। সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব কোনো জনবল নেই। আমলাদের ওপর নির্ভর করেই তাদের কাজ করতে হয়।
নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব এবং ব্যয় কমাতে প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের মনোনয়ন দিতে হবে। বর্তমানে সংসদ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিরোধপূর্ণ। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তাদের সমঝোতায় আসতে হবে। নির্বাহী বিভাগকে দলনিরপেক্ষ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি রোধ করা সম্ভব।
প্রধান অতিথি ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, 'গণতন্ত্র একটি বিকাশমান ধারা। এ গণতান্ত্রিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই সংসদকে কার্যকরী করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে দেশের সমস্যাবলি নিয়ে গঠনমূলক বিতর্ক। সংসদ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সংসদীয় রীতি অনুসরণ করেন না।'
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'গণতন্ত্রের মূল কথা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু আমাদের দেশের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। সংসদের অবস্থা এক চাকাবিহীন বাইসাইকেলের মতো। আমরা সবাই মিলে সংসদকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছি। যে কারণে গণতন্ত্র এখন সংকটে।'
এম কে আনোয়ার বলেন, 'বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতির শাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর শাসনে ফিরে এসেছে। কিন্তু এতে রাষ্ট্রের গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ করা হলেও সেসব পরামর্শ আমলে নেওয়া হয়নি। এভাবে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না।' সংসদের ক্ষমতা নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, 'সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন আবশ্যক। গণতন্ত্রের বিকাশে অর্থ বিল, জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যতীত বাকি সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের ভোটাধিকার থাকা উচিত।'
সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্যের প্রসঙ্গ তুলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেন, 'ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি দোষের নয়। সমস্যা হলো, তাঁরা সংসদে বসেও ব্যবসার কথা ভাবেন।' সরকারি দলের এমপি আলী আশরাফ বলেন, 'এমপিরা সংসদে যান না। কিন্তু বেতন-ভাতা সবই নেন, বিদেশ সফরও করেন। এটা অনৈতিক।'
এম এম আকাশ বলেন, 'নির্বাচনে জেতার পর এমপিদের লক্ষ হয়ে থাকে পরবর্তী নির্বাচনে কিভাবে জেতা যাবে। সে জন্য তাঁরা টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এসব করতে গিয়ে তাঁরা সংসদের কথা ভুলে যান।' ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'সংসদকে কার্যকর করতে হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।'
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, 'সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা বলা থাকলেও ৪০ বছরেও তা হয়নি। মন্ত্রী-আমলাদের অনিচ্ছার কারণেই এটি হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশের সংসদে কমিটির কোনো ক্ষমতা নেই। বিরোধী দলের হেরে যাওয়া প্রার্থীরা দলীয়প্রধানকে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করেন। এটিই সংসদ বর্জনের অন্যতম কারণ।' তারানা হালিম বলেন, 'দলগুলোতে গণতন্ত্রের সংকট আছে বলেই তারা সংসদ বর্জন করে।' অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন রওনক জাহান।
রেহমান সোবহানের সুপারিশ : অতীতের যেকোনো সংসদের তুলনায় এবারের সংসদের কমিটিগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। তবে ক্ষমতা সীমিত। বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে তলবের ক্ষমতা তাদের নেই। কমিটির কাজ নিয়ে গবেষণা করার মতো লোক নেই। কমিটিগুলো পরামর্শ নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায় না। সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব কোনো জনবল নেই। আমলাদের ওপর নির্ভর করেই তাদের কাজ করতে হয়।
নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব এবং ব্যয় কমাতে প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের মনোনয়ন দিতে হবে। বর্তমানে সংসদ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিরোধপূর্ণ। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তাদের সমঝোতায় আসতে হবে। নির্বাহী বিভাগকে দলনিরপেক্ষ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি রোধ করা সম্ভব।
No comments