তিস্তার পানি কমছেই, দিল্লির সাড়া নেই by রাহীদ এজাজ
বাংলাদেশে
তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে
তিস্তার পানিনির্ভর এলাকায় সেচকাজসহ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব
পড়ছে।
অভিন্ন নদীটির পানি বণ্টনে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সইয়ের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত এবং নদী রক্ষার লক্ষ্যে ‘যুক্তিসংগত’ ও ‘ন্যায়সংগত’ পরিমাণ পানি দিতে দিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু দিল্লি কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
যৌথ নদী কমিশনের (বাংলাদেশ) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের পুরো জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ডালিয়া পয়েন্টে যে পানি পাওয়া গেছে তার ১৯৭৩-৮৫ সময়কালের গড়ে পানি প্রবাহের মাত্র প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাহ আরও কমছে। পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ শুরুর আগে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানির প্রবাহ বেশ ভালো ছিল বলে তুলনার জন্য ওই সময়কালের হিসাব উল্লেখ করা হয়।
ডালিয়া পয়েন্টে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন ও শেষ ১০ দিনে গড়ে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৭০১০, ৬০১০ ও ৫৬৬৮ কিউসেক। এ বছরের জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন ও শেষ ১০ দিনে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ২৩৮৪, ১৭৬০ ও ১১৯০ কিউসেক। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে এ প্রবাহ ১ হাজার কিউসেকে নেমে এসেছে। ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে এই সময়ে পানির প্রবাহ ছিল ৫৯৮৬ কিউসেক।
জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তার পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে দ্রুত চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নেওয়া অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সংগত পরিমাণ পানি ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এ ছাড়া সম্প্রতি পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলেছেন। তিনি জানান, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ডিসেম্বরে যে চিঠি দিয়েছে, ভারত এখনো তার কোনো জবাব দেয়নি।
এদিকে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। অভিন্ন নদীটির পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে আস্থায় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়ার বিষয়টিও এসেছে। ওই আলোচনা থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা খুব কম। এ বছরের এপ্রিলে শুরু হয়ে মে মাসে ওই নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পরবর্তী বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হয়েছে। বিশেষ করে চুক্তি সইয়ের আগে সেচকাজের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে দুই দেশ কথা বলতে পারে। দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর এ বছরের মাঝামাঝি জেআরসির বৈঠক হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
তিস্তা ৩৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ভারতে প্রবাহিত ২৪৯ কিলোমিটার ও বাংলাদেশে ১১৭ কিলোমিটার। তিস্তার আওতায় মোট সেচ এলাকার পরিমাণ ১৯ দশমিক ৬৩ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৪৯ লাখ হেক্টর ও ভারতে ১২ দশমিক ১৪ লাখ হেক্টর।
অভিন্ন নদীটির পানি বণ্টনে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সইয়ের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত এবং নদী রক্ষার লক্ষ্যে ‘যুক্তিসংগত’ ও ‘ন্যায়সংগত’ পরিমাণ পানি দিতে দিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু দিল্লি কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
যৌথ নদী কমিশনের (বাংলাদেশ) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের পুরো জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ডালিয়া পয়েন্টে যে পানি পাওয়া গেছে তার ১৯৭৩-৮৫ সময়কালের গড়ে পানি প্রবাহের মাত্র প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাহ আরও কমছে। পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ শুরুর আগে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানির প্রবাহ বেশ ভালো ছিল বলে তুলনার জন্য ওই সময়কালের হিসাব উল্লেখ করা হয়।
ডালিয়া পয়েন্টে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন ও শেষ ১০ দিনে গড়ে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৭০১০, ৬০১০ ও ৫৬৬৮ কিউসেক। এ বছরের জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন ও শেষ ১০ দিনে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ২৩৮৪, ১৭৬০ ও ১১৯০ কিউসেক। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে এ প্রবাহ ১ হাজার কিউসেকে নেমে এসেছে। ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে এই সময়ে পানির প্রবাহ ছিল ৫৯৮৬ কিউসেক।
জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তার পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে দ্রুত চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নেওয়া অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সংগত পরিমাণ পানি ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এ ছাড়া সম্প্রতি পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলেছেন। তিনি জানান, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ডিসেম্বরে যে চিঠি দিয়েছে, ভারত এখনো তার কোনো জবাব দেয়নি।
এদিকে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। অভিন্ন নদীটির পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে আস্থায় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়ার বিষয়টিও এসেছে। ওই আলোচনা থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা খুব কম। এ বছরের এপ্রিলে শুরু হয়ে মে মাসে ওই নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পরবর্তী বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হয়েছে। বিশেষ করে চুক্তি সইয়ের আগে সেচকাজের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে দুই দেশ কথা বলতে পারে। দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর এ বছরের মাঝামাঝি জেআরসির বৈঠক হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
তিস্তা ৩৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ভারতে প্রবাহিত ২৪৯ কিলোমিটার ও বাংলাদেশে ১১৭ কিলোমিটার। তিস্তার আওতায় মোট সেচ এলাকার পরিমাণ ১৯ দশমিক ৬৩ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৪৯ লাখ হেক্টর ও ভারতে ১২ দশমিক ১৪ লাখ হেক্টর।
No comments