‘আমারে যৌনকর্মী বানাইছে কে?’ by মানসুরা হোসাইন
‘ছোট
বেলায় এক বাসায় আমারে কাজ করতে পাঠায় বাপ-মা। ওই বাসার মালিক ও তার ছেলে
জোর কইরা খারাপ কাজ করে। বাপ-ছেলের সঙ্গেই যদি এই কাজ করমু, তাইলে পেশা
হিসেবে নিতে আর দোষ কী? তারপরই পথে নামি। আপনিই কন, তাইলে আমারে যৌনকর্মী
বানাইছে কে?’
রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কর্মরত একজন এভাবেই জানালেন তাঁর কথা। তাঁর আপনজনেরা জানেন তিনি চাকির করেন।
আরেকজনের অভিজ্ঞতাও প্রায় কাছাকাছি। তিনি জানালেন, মাত্র ১১ বছর বয়সে এক বাসায় কাজ করতে গেলে বাড়ির মালিক ধর্ষণ করেন। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে মালিকের স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে দেন। তত দিনে পেটের সন্তানকে নষ্ট করার উপায় নেই। মালিকের ওই সন্তানকে খাওয়ানো পড়ানোর জন্যই যৌনকর্ম পেশাকে বেছে নেন। সন্তান জানে তার বাবা মারা গেছে। স্কুলে বাবার একটি কাল্পনিক নাম দেওয়া হয়েছে। কেননা বাবার নাম না দিলে সন্তানকে কেউ স্কুলে ভর্তি করবে না।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভাসমান যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্জয় নারী সংঘ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানেই কথা হয় এই নারীদের সঙ্গে। নারীদের অনেকেই জানালেন, তাঁরা ইচ্ছে করে এ পেশা বেছে নেননি। তাঁরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এ পেশায় জড়িয়ে যান। তারপর জীবনের নানান দিকের কথা চিন্তা করে আর ফিরতে পারেননি।
একজন জানালেন, সৎ মা শরীরে গরম তেল ঢেলে দেন। পরে পরিচিত একজন ঢাকায় কাজ দেবে বলে নিয়ে আসে, তারপর জোর করে এ ব্যবসায় নামায়।
রাতের বেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে একজন জানালেন, বর্তমানে পুলিশ আর ততটা যন্ত্রণা করে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র পরিচয় দেওয়া যুবকেরা চরম অত্যাচার করেন। প্রায় সময় যৌনকর্ম শেষে টাকা দেন না। টাকা চাইতে গেলে মারধর করেন।
একজন বলেন, ‘নিজের ছেলের বয়সীদের সঙ্গেও যখন যৌনকাজ করি তখন মাঝে মধ্যে গলায় ফাঁস দিতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু পেট তো বাঁচান লাগব।’
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একজন এসেছেন বেশ বয়স্ক নারী। তিনি দুর্জয় নারী সংঘে কাজ করছেন। তিনি হেসে জানালেন, তিনি তাঁর বয়স কত তা জানেন না। তাঁর সঙ্গে ১০ বছর বয়সী নাতিও এসেছে। কেন এই পেশায় এসেছিলেন জানতে চাইলে মাথার চুল সরিয়ে মাথার বেশ খানিকটা জায়গা দেখালেন। সেখানে চুল নেই। ভেতরের দিকে দেবে গেছে। তিনি জানালেন, স্বামী তাঁকে নির্যাতন করতেন। তারপর সহ্য করতে না পেরে পথে নামেন।
এই নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় আরেক নারী এগিয়ে এলেন। দুই পা দেখিয়ে বললেন, ইট দিয়ে তাঁর স্বামী দুই পা থেঁতলে দিয়েছে। ওই স্বামীকে ছেড়ে এ পেশায় আসেন। এখানে টাকা-পয়সা জমানোর পর এক খদ্দের তাঁকে বিয়ে করার জন্য এগিয়ে আসেন। বিয়ে করার পর পেটে সন্তান আসে। তখন সন্তান ও তাঁকে ফেলে জমানো টাকা নিয়ে চম্পট দেন।
এ পেশায় নির্যাতনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বলেন, ‘একেক জনের একেক রকম চাহিদা থাকে। সাধ্যমতো তা মেটানোর চেষ্টা করি। মুখ দিয়া কোনো শব্দও করি না।’
ভাসমান যৌনকর্মীদের একজন জানালেন, তাঁকে ছোট বেলায় নারায়ণগঞ্জে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন একজন। তারপর সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি জানালেন, ভাসমান যৌনকর্মীদের সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হয়। যেকোনো সময় যে কেউ ধাওয়া দেবে। প্রতিদিন গোসলেরও কোনো জায়গা পান না তাঁরা।
যৌনকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও কাজ করছে। তাঁরা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। তবে যৌনকর্ম করার সময় সব পুরুষকে কনডম ব্যবহারে বাধ্য করতে পারেন না। ফলে এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তাঁরা।
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসা নারীদের অনেকে হিজাব বা বোরকা গায়ে দিয়ে এসেছেন। তাঁরা জানালেন, সারাক্ষণই তাঁদের পরিচয় গোপন করে চলতে হয়। পরিচয় পেলে কেউ বাসা ভাড়া দেয় না। দিলেও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নেয়।
বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বয়স হয়ে গেলে এ পেশায় আর টেকা যাবে না।
একজন তাঁর মেয়ের কথা বলছিলেন। নিজে কষ্ট করে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। রেখেছেন তাঁর কাছ থেকে অনেক দূরে। মেয়েকেও কি এ পেশায় আনবেন কি না জানতে চাইলে এই যৌনকর্মীর চোখে পানি এসে গেল। তিনি জানালেন, কোনো দিনই মেয়েকে যেন তাঁর মতো জীবন বেছে নিতে না হয়।
রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কর্মরত একজন এভাবেই জানালেন তাঁর কথা। তাঁর আপনজনেরা জানেন তিনি চাকির করেন।
আরেকজনের অভিজ্ঞতাও প্রায় কাছাকাছি। তিনি জানালেন, মাত্র ১১ বছর বয়সে এক বাসায় কাজ করতে গেলে বাড়ির মালিক ধর্ষণ করেন। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে মালিকের স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে দেন। তত দিনে পেটের সন্তানকে নষ্ট করার উপায় নেই। মালিকের ওই সন্তানকে খাওয়ানো পড়ানোর জন্যই যৌনকর্ম পেশাকে বেছে নেন। সন্তান জানে তার বাবা মারা গেছে। স্কুলে বাবার একটি কাল্পনিক নাম দেওয়া হয়েছে। কেননা বাবার নাম না দিলে সন্তানকে কেউ স্কুলে ভর্তি করবে না।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভাসমান যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্জয় নারী সংঘ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানেই কথা হয় এই নারীদের সঙ্গে। নারীদের অনেকেই জানালেন, তাঁরা ইচ্ছে করে এ পেশা বেছে নেননি। তাঁরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এ পেশায় জড়িয়ে যান। তারপর জীবনের নানান দিকের কথা চিন্তা করে আর ফিরতে পারেননি।
একজন জানালেন, সৎ মা শরীরে গরম তেল ঢেলে দেন। পরে পরিচিত একজন ঢাকায় কাজ দেবে বলে নিয়ে আসে, তারপর জোর করে এ ব্যবসায় নামায়।
রাতের বেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে একজন জানালেন, বর্তমানে পুলিশ আর ততটা যন্ত্রণা করে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র পরিচয় দেওয়া যুবকেরা চরম অত্যাচার করেন। প্রায় সময় যৌনকর্ম শেষে টাকা দেন না। টাকা চাইতে গেলে মারধর করেন।
একজন বলেন, ‘নিজের ছেলের বয়সীদের সঙ্গেও যখন যৌনকাজ করি তখন মাঝে মধ্যে গলায় ফাঁস দিতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু পেট তো বাঁচান লাগব।’
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একজন এসেছেন বেশ বয়স্ক নারী। তিনি দুর্জয় নারী সংঘে কাজ করছেন। তিনি হেসে জানালেন, তিনি তাঁর বয়স কত তা জানেন না। তাঁর সঙ্গে ১০ বছর বয়সী নাতিও এসেছে। কেন এই পেশায় এসেছিলেন জানতে চাইলে মাথার চুল সরিয়ে মাথার বেশ খানিকটা জায়গা দেখালেন। সেখানে চুল নেই। ভেতরের দিকে দেবে গেছে। তিনি জানালেন, স্বামী তাঁকে নির্যাতন করতেন। তারপর সহ্য করতে না পেরে পথে নামেন।
এই নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় আরেক নারী এগিয়ে এলেন। দুই পা দেখিয়ে বললেন, ইট দিয়ে তাঁর স্বামী দুই পা থেঁতলে দিয়েছে। ওই স্বামীকে ছেড়ে এ পেশায় আসেন। এখানে টাকা-পয়সা জমানোর পর এক খদ্দের তাঁকে বিয়ে করার জন্য এগিয়ে আসেন। বিয়ে করার পর পেটে সন্তান আসে। তখন সন্তান ও তাঁকে ফেলে জমানো টাকা নিয়ে চম্পট দেন।
এ পেশায় নির্যাতনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বলেন, ‘একেক জনের একেক রকম চাহিদা থাকে। সাধ্যমতো তা মেটানোর চেষ্টা করি। মুখ দিয়া কোনো শব্দও করি না।’
ভাসমান যৌনকর্মীদের একজন জানালেন, তাঁকে ছোট বেলায় নারায়ণগঞ্জে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন একজন। তারপর সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি জানালেন, ভাসমান যৌনকর্মীদের সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হয়। যেকোনো সময় যে কেউ ধাওয়া দেবে। প্রতিদিন গোসলেরও কোনো জায়গা পান না তাঁরা।
যৌনকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও কাজ করছে। তাঁরা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। তবে যৌনকর্ম করার সময় সব পুরুষকে কনডম ব্যবহারে বাধ্য করতে পারেন না। ফলে এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তাঁরা।
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসা নারীদের অনেকে হিজাব বা বোরকা গায়ে দিয়ে এসেছেন। তাঁরা জানালেন, সারাক্ষণই তাঁদের পরিচয় গোপন করে চলতে হয়। পরিচয় পেলে কেউ বাসা ভাড়া দেয় না। দিলেও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নেয়।
বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বয়স হয়ে গেলে এ পেশায় আর টেকা যাবে না।
একজন তাঁর মেয়ের কথা বলছিলেন। নিজে কষ্ট করে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। রেখেছেন তাঁর কাছ থেকে অনেক দূরে। মেয়েকেও কি এ পেশায় আনবেন কি না জানতে চাইলে এই যৌনকর্মীর চোখে পানি এসে গেল। তিনি জানালেন, কোনো দিনই মেয়েকে যেন তাঁর মতো জীবন বেছে নিতে না হয়।
No comments