মোদি ও নওয়াজ পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন? by হামিদ মির
ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা |
নরেন্দ্র
মোদির পাকিস্তান সফরের পর ভারত–পাকিস্তানের সম্পর্কে যে উষ্ণতা দেখা
যাচ্ছিল, ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় তা শীতল হয়ে
পড়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন পাকিস্তান ও ভারতের দুই সাংবাদিক
ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সম্প্রতি যে হামলা হলো, তা ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বড় পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৫ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে লাহোর সফর করে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা সেদিন শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য হুমকি নিয়েও আলোচনা করেন। দুই প্রধানমন্ত্রীই সেদিন একে অপরকে আশ্বস্ত করেছিলেন, ভারত বা পাকিস্তানে কোনো হামলা হলে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তাঁরা কেউ কাউকে দোষারোপ করবেন না। তাঁদের আশঙ্কাই সত্য হলো। সেই বৈঠকের কয়েক দিন পরেই ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে হামলা হলো, আর দুই প্রধানমন্ত্রীরও আসল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে, কিন্তু তারা কখনোই পাকিস্তানের সরকারকে দায়ী করেনি। পাকিস্তানি সরকার শুধু হামলার নিন্দাই করেনি, তারা এটাকে শান্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা অতীতের মতো অপরিণামদর্শী মন্তব্য করেনি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫ জানুয়ারি বিকেলে নওয়াজ শরিফকে ফোন করে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, তিনি চান পাকিস্তান আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাঠানকোট হামলার মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। নওয়াজ শরিফ মোদিকে বলেন, তিনি তখন শ্রীলঙ্কায়, ইসলামাবাদে ফিরেই তিনি এর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন। ভারত সরকার যে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই পাঠানকোট হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেনি, তার জন্য তিনি ভারত সরকারের পরিপক্বতার প্রশংসা করেন। পরের দিন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা অধিনায়কদের এক সম্মেলনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। নওয়াজ শরিফ ৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে ফিরে পরের দিন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। লাহোরের বিশ্বাসযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, ভারতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাঞ্জাব পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা ওই প্রদেশের দক্ষিণ অংশে অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জয়েশ–ই–মোহাম্মদের নেতারা। ভারতীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার পর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাকিস্তান বড় কোনো ঘোষণা দিতে পারে।
পাঠানকোট হামলা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাদের গণমাধ্যম প্রতিটি পদক্ষেপে পাকিস্তানের সমালোচনা করছে। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, কারণ তিনি পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি যেন টিভির শিরোনাম দেখে নীতি প্রণয়ন না করেন। কিছু কিছু ভারতীয় টিভি চ্যানেল নওয়াজ শরিফের সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্বৈত নীতি’ অনুসরণের অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু তিনি এতে উদ্বিগ্ন নন। নওয়াজ মনে করেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীই এসব সামাল দেবেন। নওয়াজ শরিফ এটা ভালোমতোই বোঝেন যে পাঠানকোট হামলার অভিযুক্ত হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভারত সরকারের পক্ষে মধ্য জানুয়ারিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়া কঠিন হবে। কয়েকজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি নওয়াজকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভারত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, তিনি যেন চোখ বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন। নওয়াজও বলেছেন, তাঁর সরকার যাচাই-বাছাই না করে কিছু করবে না, আর কারও বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁকে ভারতের শত্রু নয়, পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ মহল আশা করছে, পাঠানকোট হামলার ব্যাপারে শিগগিরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দুই দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া বদলে দিতে পারে। এই বদল শুরু হয়েছে গত বছর প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন থেকে, আর মোদির লাহোর সফর তাতে আরেকটু রং চড়িয়েছিল। কিন্তু পাঠানকোটের হামলায় দুই প্রধানমন্ত্রীই বিব্রত হয়েছেন। পাকিস্তানের অনেক সমালোচক মনে করেন, শরিফ ভারতকে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। পাকিস্তান যদি এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করে, তাহলে ভারত তখন দাবি করবে, তাদের দ্রুত বিচার করা হোক। কিন্তু আইনিব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এত দ্রুত আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। নওয়াজকে আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, এই দোষীদের সম্প্রতি গঠিত সামরিক আদালতে বিচার করা হোক। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, সম্ভাব্য কোন কোন উপায়ে এদের বিচার করা যায়, তাঁরা যেন তা খতিয়ে দেখেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আছেন। তাঁরা গণমাধ্যমকে না জানিয়ে অনেক মূল্যবান কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছেন। তাঁদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ তাঁরা ইসলামাবাদ ও দিল্লির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন। গত মাসে ব্যাংককে তাঁরা চার ঘণ্টাব্যাপী যে বৈঠক করেছেন, তার মধ্য দিয়ে দুই দেশের কূটনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিস্ময়করভাবে কোনো পক্ষই অতীতের অবস্থান নেয়নি। তারা নতুন চিন্তা নিয়ে নতুন পথে সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে মোদি যখন নওয়াজের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি পাকিস্তানি এনএসএ লে. জেনারেল (অব.) নাসির খান জানজুয়ার প্রশংসা করেছেন, আর শরিফও যখন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি অজিত দোভালের প্রশংসা করেন।
নওয়াজ ও মোদির মধ্যকার বৈঠক ও টেলি আলোচনা আয়োজনের জন্য সজ্জন জিন্দাল গোছের লোকের দরকার নেই। দুই এনএসএ যে বাস্তবসম্মত অবস্থান নিয়েছেন, তার ফলে উভয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নতুন পদক্ষেপ ও অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নওয়াজ পাঠানকোট হামলাকে তাঁর জন্য প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। নিজের দেশে কী পরিণতি হতে পারে সেটা তিনি জানেন, কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে পাকিস্তানের সব বিরোধী দলই এককাট্টা হয়ে তাঁর পেছনে দাঁড়াবে। পাঠানকোট হামলা ভারতের জন্য এক বিয়োগান্ত ঘটনা। এই বিয়োগান্ত ঘটনাই আবার পাকিস্তানের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে, তারা এখন সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ভারতীয় জনগণের মন জয় করতে পারে। ভারতের আস্থা অর্জন করার পর নওয়াজ মোদিকে বলতে পারেন, এবার কাশ্মীরের বিষয়টি আমলে নিয়ে মোদি তাঁকে সহযোগিতা করতে পারেন। পাঠানকোটের পরীক্ষায় উতরে গেলে তাঁরা কাশ্মীরের মতো আরও বড় কিছু পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেন। পাঠানকোট স্রেফ শুরু, যার শেষ হোক কাশ্মীর।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
হামিদ মির: পাকিস্তানের জিয়ো টেলিভিশনের সাংবাদিক।
ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সম্প্রতি যে হামলা হলো, তা ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বড় পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৫ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে লাহোর সফর করে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা সেদিন শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য হুমকি নিয়েও আলোচনা করেন। দুই প্রধানমন্ত্রীই সেদিন একে অপরকে আশ্বস্ত করেছিলেন, ভারত বা পাকিস্তানে কোনো হামলা হলে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তাঁরা কেউ কাউকে দোষারোপ করবেন না। তাঁদের আশঙ্কাই সত্য হলো। সেই বৈঠকের কয়েক দিন পরেই ভারতের পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে হামলা হলো, আর দুই প্রধানমন্ত্রীরও আসল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে, কিন্তু তারা কখনোই পাকিস্তানের সরকারকে দায়ী করেনি। পাকিস্তানি সরকার শুধু হামলার নিন্দাই করেনি, তারা এটাকে শান্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা অতীতের মতো অপরিণামদর্শী মন্তব্য করেনি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫ জানুয়ারি বিকেলে নওয়াজ শরিফকে ফোন করে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, তিনি চান পাকিস্তান আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাঠানকোট হামলার মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। নওয়াজ শরিফ মোদিকে বলেন, তিনি তখন শ্রীলঙ্কায়, ইসলামাবাদে ফিরেই তিনি এর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন। ভারত সরকার যে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই পাঠানকোট হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেনি, তার জন্য তিনি ভারত সরকারের পরিপক্বতার প্রশংসা করেন। পরের দিন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা অধিনায়কদের এক সম্মেলনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। নওয়াজ শরিফ ৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে ফিরে পরের দিন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। লাহোরের বিশ্বাসযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, ভারতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাঞ্জাব পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা ওই প্রদেশের দক্ষিণ অংশে অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জয়েশ–ই–মোহাম্মদের নেতারা। ভারতীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার পর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাকিস্তান বড় কোনো ঘোষণা দিতে পারে।
পাঠানকোট হামলা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাদের গণমাধ্যম প্রতিটি পদক্ষেপে পাকিস্তানের সমালোচনা করছে। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, কারণ তিনি পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি যেন টিভির শিরোনাম দেখে নীতি প্রণয়ন না করেন। কিছু কিছু ভারতীয় টিভি চ্যানেল নওয়াজ শরিফের সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্বৈত নীতি’ অনুসরণের অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু তিনি এতে উদ্বিগ্ন নন। নওয়াজ মনে করেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীই এসব সামাল দেবেন। নওয়াজ শরিফ এটা ভালোমতোই বোঝেন যে পাঠানকোট হামলার অভিযুক্ত হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভারত সরকারের পক্ষে মধ্য জানুয়ারিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়া কঠিন হবে। কয়েকজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি নওয়াজকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভারত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, তিনি যেন চোখ বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন। নওয়াজও বলেছেন, তাঁর সরকার যাচাই-বাছাই না করে কিছু করবে না, আর কারও বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁকে ভারতের শত্রু নয়, পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ মহল আশা করছে, পাঠানকোট হামলার ব্যাপারে শিগগিরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দুই দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া বদলে দিতে পারে। এই বদল শুরু হয়েছে গত বছর প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন থেকে, আর মোদির লাহোর সফর তাতে আরেকটু রং চড়িয়েছিল। কিন্তু পাঠানকোটের হামলায় দুই প্রধানমন্ত্রীই বিব্রত হয়েছেন। পাকিস্তানের অনেক সমালোচক মনে করেন, শরিফ ভারতকে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। পাকিস্তান যদি এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করে, তাহলে ভারত তখন দাবি করবে, তাদের দ্রুত বিচার করা হোক। কিন্তু আইনিব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এত দ্রুত আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। নওয়াজকে আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, এই দোষীদের সম্প্রতি গঠিত সামরিক আদালতে বিচার করা হোক। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, সম্ভাব্য কোন কোন উপায়ে এদের বিচার করা যায়, তাঁরা যেন তা খতিয়ে দেখেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আছেন। তাঁরা গণমাধ্যমকে না জানিয়ে অনেক মূল্যবান কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছেন। তাঁদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ তাঁরা ইসলামাবাদ ও দিল্লির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন। গত মাসে ব্যাংককে তাঁরা চার ঘণ্টাব্যাপী যে বৈঠক করেছেন, তার মধ্য দিয়ে দুই দেশের কূটনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিস্ময়করভাবে কোনো পক্ষই অতীতের অবস্থান নেয়নি। তারা নতুন চিন্তা নিয়ে নতুন পথে সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে মোদি যখন নওয়াজের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি পাকিস্তানি এনএসএ লে. জেনারেল (অব.) নাসির খান জানজুয়ার প্রশংসা করেছেন, আর শরিফও যখন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি অজিত দোভালের প্রশংসা করেন।
নওয়াজ ও মোদির মধ্যকার বৈঠক ও টেলি আলোচনা আয়োজনের জন্য সজ্জন জিন্দাল গোছের লোকের দরকার নেই। দুই এনএসএ যে বাস্তবসম্মত অবস্থান নিয়েছেন, তার ফলে উভয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নতুন পদক্ষেপ ও অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নওয়াজ পাঠানকোট হামলাকে তাঁর জন্য প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। নিজের দেশে কী পরিণতি হতে পারে সেটা তিনি জানেন, কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে পাকিস্তানের সব বিরোধী দলই এককাট্টা হয়ে তাঁর পেছনে দাঁড়াবে। পাঠানকোট হামলা ভারতের জন্য এক বিয়োগান্ত ঘটনা। এই বিয়োগান্ত ঘটনাই আবার পাকিস্তানের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে, তারা এখন সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ভারতীয় জনগণের মন জয় করতে পারে। ভারতের আস্থা অর্জন করার পর নওয়াজ মোদিকে বলতে পারেন, এবার কাশ্মীরের বিষয়টি আমলে নিয়ে মোদি তাঁকে সহযোগিতা করতে পারেন। পাঠানকোটের পরীক্ষায় উতরে গেলে তাঁরা কাশ্মীরের মতো আরও বড় কিছু পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেন। পাঠানকোট স্রেফ শুরু, যার শেষ হোক কাশ্মীর।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
হামিদ মির: পাকিস্তানের জিয়ো টেলিভিশনের সাংবাদিক।
No comments