নয়া সংবিধানের পথে শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গত শনিবার পার্লামেন্টে এক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে নয়া সরকার। গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার সুসংহত করা এবং সরকারি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও জাতিগত উত্তেজনা নিরসন এ সংবিধানের অন্যতম লক্ষ্য। রয়টার্স, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গতকাল রোববার প্রকাশিত খবরে বলা হয়, নতুন এই পরিকল্পনা পেশের আগে শ্রীলঙ্কার সংস্কারবাদী নতুন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সরকার দেশটিতে গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া গতিশীল করা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের ঘটনাগুলো বিবেচনায় নেওয়ার পদক্ষেপ নেন। মূলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও জাতিগত উত্তেজনাকে ঘিরেই শ্রীলঙ্কায় সরকার ও তামিল গেরিলাদের মধ্যে ওই গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারান। গত বছর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে পরাজিত করে ক্ষমতাসীন হওয়া সিরিসেনা দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার সুসংহত করতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার করেছিলেন। এ অঙ্গীকার পূরণের পদক্ষেপ হিসেবে গত শনিবার পার্লামেন্টে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরিকল্পনা পেশ করে সিরিসেনার সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্য, দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার জোরদার ও জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়, মানবীয় মর্যাদা নিশ্চিত করতে জনগণকে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেবে নতুন সংবিধান। দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি সরকার গড়তেও সহায়তা করবে এটি। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ক্ষমতাসীন দলের একজন আইনপ্রণেতা রয়টার্সকে বলেন,
‘এ পরিকল্পনার মূল ধারণাই হলো তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও আরেকটি গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ।’ অবশ্য বিরোধীদলীয় কয়েকজন আইনপ্রণেতার অভিযোগ, কিছু পশ্চিমা দেশকে খুশি করতে ও দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রভাব কমাতেই নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সরকার। শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু তামিলরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পদপদবিতে অগ্রাধিকার পেত। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ক্ষমতাসীন সরকারগুলো ভাষা ও অন্যান্য নীতির আওতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠীকে আনুকূল্য দেওয়া শুরু করলে অনেক তামিল তাঁদের শীর্ষ পদ হারান। এ অবস্থায় উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কায় পুরোদমে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ব্যাপক রক্তক্ষয়ের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের (এলটিটিই) নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ এলাকা দখলের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালের ১৮ মে সরকারি সেনারা গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সক্ষম হন। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে পার্লামেন্টে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলেন, ‘দেশের উত্তর ও দক্ষিণের চরমপন্থীরা হাজারো তরুণের জীবন কেড়ে নিয়েছে। দেশের পুনর্গঠনকাজ ও মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আর কখনো আমাদের গৃহযুদ্ধে ফিরতে না হয়।’ সিরিসেনা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এমন এক সংবিধান দরকার, যা একুশ শতকের চাহিদা মেটাবে। নিশ্চিত করবে সব সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস।’
No comments