হাওরে ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ by মো: আল আমিন
কিশোরগঞ্জ সদরের চাঁদেরহাসি গ্রামের হাওরে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয় : নয়া দিগন্ত |
দুপুর
গড়িয়ে বিকেল। ভাদ্রের তালপাকা গরম কিছুটা কমে সহনীয় হয়ে এসেছে। বইছে
মৃদুমন্দ হাওয়া হাওরের বুকে তুলছে ছোট ছোট ঢেউ। যেন হাওরজুড়ে ছন্দের
দুলুনি! এ দুলুনির মধ্যেই পানি কেটে কেটে ছিপছিপে দীঘল সব নৌকার সে কী ছুটে
চলা! কে কাকে পেছনে ফেলবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা। নৌকায় দুই পাশে সারি বেঁধে
বসা মাঝিরা গানের তালে তালে টেনে চলছেন বৈঠা। নৌকার গলুইয়ে বসা গায়েনের
কণ্ঠে দরাজ সুর, ...‘আল্লাহ বলিয়া নাও খোলরে ভাই সক্কলি। আল্লাহ বলিয়া খোল।
ওরে আল্লাহ বলিয়া নাও খোল, শয়তান যাবে দূরে...’। একেকটা কলি শেষ হতেই
মাঝিদের সমস্বরে চিৎকার ‘হই হই’। পেছনের নৌকা কাছাকাছি চলে আসছে! গায়েন
কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেন। সেই সাথে গানের গতিও বাড়িয়ে
দেন। অসম্ভব দ্রুততায় ছুটে চলেছে নৌকা! হাওরপাড়ের হাজারো মানুষ সে দৃশ্য
দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। উত্তেজনায় তারাও চিৎকার করছেন ‘হই হই... হই হই,
আ¹য়া যাও আ¹য়া যাও’ (এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও)।
কিশোরগঞ্জের বড় হাওর এলাকায় এমনই একটি উৎসবমুখর ও নৌকাবাইচ হয়ে গেল গত শনিবার। সদরের দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রামের ‘বড় হাওরে’ এমন নৌকাবাইচের আয়োজন করে উপজেলা পরিষদ।
নৌকাবাইচ দেখতে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন। এবারই প্রথম এ গ্রামের সামনে নৌকাবাইচ হলো। তবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে একাধিক নৌকাবাইচ হয়ে থাকে। এর মধ্যে নিকলীর সোয়াইজনি নদীর নৌকাবাইচ অন্যতম।
নৌকাবাইচের ইতিহাস : আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ নৌকাবাইচ। তবে কবে এ দেশে গণবিনোদন হিসেবে নৌকাবাইচের প্রচলন সে সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না।
বাইচ শব্দটি ফারসি। এটি ‘বাজি’ শব্দজাত। যার বিবর্তন এরূপ : বাজি>বাইজ>বাইচ। এর অর্থ খেলা। মুসলিম যুগের নবাব-বাদশাহদের আমলে নৌকাবাইচ বেশ জনপ্রিয় ছিল। এ কারণে অনেকে মনে করেন, নবাব বাদশাহদের নৌবাহিনী থেকে এ দেশে নৌকাবাইচের গোড়াপত্তন। পূর্ববঙ্গের ভাটি অঞ্চলের রাজ্য জয় ও রার অন্যতম কৌশল ছিল নৌশক্তি। বাংলার বারো ভূঁইয়ারা নৌ বলেই মোগলদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। মগ জলদস্যুদের দমনে নৌশক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব রণবহর বা নৌবহরে দীর্ঘাকৃতির ছিপ জাতীয় নৌকা থাকত। বর্তমানে নৌকাবাইচে নৌকার আকৃতিও ওই রকমই।
বাংলাদেশের নৌকাবাইচের ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। তবে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে ‘মেসোপটেমিয়ার’ লোকেরা ইউফ্রেটিস নদীতে এক ধরনের নৌকাবাইচের আয়োজন করতেন বলে জানা যায়। এর কয়েক শতাব্দী পর মিসরের নীলনদে নৌকা প্রতিযোগিতা শুরু। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে নৌকাবাইচ। তবে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ এখনো তুমুল জনপ্রিয়। ১৯০০ সাল থেকে অলিম্পিকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৫টি ফাইনাল হয়েছে।
বাইচের নৌকার গঠন : বাইচের নৌকার গঠনও শৈল্পিক। এ নৌকা হয় ছিপছিপে। সরু ও বেশ লম্বাটে। ফলে নদীর পানি কেটে তরতরিয়ে দ্রুত লয়ে চলে। নৌকার সামনের গলুই খুব সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। তাতে কখনো করা হয় ময়ূরের মুখ, কখনো বা রাজহাঁস অথবা অন্য কোনো পাখির মুখাবয়ব। এসব নৌকা উজ্জ্বল রঙের কারুকাজে বিভিন্ন নকশায় তৈরি। এসব নৌকাকে দর্শকের সামনে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা থাকে। একেকটা নৌকা লম্বায় ১০০-২০০ ফুট হয়। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে নৌকার কিছুটা পার্থক্যও দেখা যায়।
ঢাকা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বাইচের জন্য সাধারণত কোশা আকৃতির নৌকা ব্যবহৃত হয়। এ নৌকার সামনের ও পেছনের অংশ থাকে সোজা। কোশা নৌকা তৈরিতে শাল, শীল কড়াই, চাম্বুল কাঠ ব্যবহার করা হয়। টাঙ্গাইল ও পাবনার বাইচের নৌকার সামনের দিকটা পানির সাথে মিশে থাকে। পেছনের অংশটি পানি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এ নৌকায় সামনের ও পেছনের মাথায় চুমকির বিভিন্ন কারুকাজ থাকে। নৌকাগুলো তৈরিতে সাধারণত শাল, গর্জন, শীল কড়ই, চাম্বুল কাঠ ব্যবহৃত হয়।
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আজমিরিগঞ্জ ও সিলেটে বাইচের জন্য সারেঙ্গী নৌকা ব্যবহৃত হয়। এর আকারও কোশা ও ছিপ জাতীয় নৌকার মতোই সরু। লম্বায় ১৫০-২০০ ফুট। তবে প্রস্থ একটু বেশি। এ অঞ্চলের নৌকার সামনের ও পেছনের দিকটা পানি থেকে দুই-তিন ফুট উঁচু থাকে। মুখটা হাঁসের মুখের মতো চ্যাপ্টা। চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর নিন্মাঞ্চল ও সনদ্বীপে বাইচে সাম্পান ব্যবহৃত হয়। এটি জাহাজের মতো। ঢাকা ও ফরিদপুরে ব্যবহৃত হয় গয়নার নৌকা। বাইচের নৌকার নামও বাহারি। যেমনÑ অগ্রদূত, ঝরের পাখি, পঙ্খিরাজ, ময়ূরপঙ্খী, সাইমুম, তুফান মেল, সোনার তরী, দ্বীপরাজ ইত্যাদি।
বাইচের নিয়ম বা আনুষ্ঠানিকতা : নৌকাবাইচের আনুষ্ঠানিকতাও চমৎকার। নৌকায় ওঠার আগে সবাই পবিত্র হয়ে গেঞ্জি গায়ে মাথায় একই রঙের রুমাল জড়িয়ে নেন। সবার মাঝে থাকেন নৌকার নির্দেশক। দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা চালান পেছনের মাঝিরা। অন্য মাঝিরা নৌকার দুই পাশে সারি বেঁধে বসে একত্রে জয়ধ্বনিসহ বৈঠা টানেন। প্রতিটি নৌকায় ২৫, ৫০ বা ১০০ মাঝি থাকতে পারেন।
মাঝিদের বৈঠা টানাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে একজন পরিচালক থাকেন। যাকে বলা হয় গায়েন। তিনি বসেন নৌকার গলুইয়ে। গায়েনের নির্দেশে মাঝিরা একত্রে গান গাইতে আরম্ভ করেন। গানের তালে তালে বৈঠা টানেন; ফলে কারো বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে এক সাথে পানিতে অভিঘাত তৈরি করে। গায়েন কাঁসির শব্দে এ বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করেন। অন্য সব নৌকা পেছনে ফেলে নিজেদের সবার আগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজনে কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সাথে গানের গতিও বেড়ে চলে। বাইচের নৌকায় সারিবদ্ধভাবে বসে মাঝিরা গান করেন বলে একে সারিগান বলা হয়।
আবহমানকাল থেকে বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ বিভিন্নভাবে নদী দখল ও কারখানার বর্জ্যে নদ-নদী মেরে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। নদী হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতি। ফলে পানি শুকিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদী। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে নৌকাবাইচ।
তবে এখনো হাওরাঞ্চলে আয়োজন করতে দেখা যায় নৌকাবাইচ। শনিবার কিশোরগঞ্জের নৌকাবাইচে বিভিন্ন এলাকার নয়টি নৌকা অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে নিকলীর গোবিন্দপুরের আলী হোসেনর নৌকা। দ্বিতীয় হয়েছে নিকলীর ফজলুর রহমানের নৌকা। তৃতীয় হয়েছে নিকলীর কারার বোরহান উদ্দিনের নৌকা।
নৌকাবাইচে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফর উল্লাহ প্রধান অতিথি থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
কিশোরগঞ্জের বড় হাওর এলাকায় এমনই একটি উৎসবমুখর ও নৌকাবাইচ হয়ে গেল গত শনিবার। সদরের দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রামের ‘বড় হাওরে’ এমন নৌকাবাইচের আয়োজন করে উপজেলা পরিষদ।
নৌকাবাইচ দেখতে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন। এবারই প্রথম এ গ্রামের সামনে নৌকাবাইচ হলো। তবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে একাধিক নৌকাবাইচ হয়ে থাকে। এর মধ্যে নিকলীর সোয়াইজনি নদীর নৌকাবাইচ অন্যতম।
নৌকাবাইচের ইতিহাস : আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ নৌকাবাইচ। তবে কবে এ দেশে গণবিনোদন হিসেবে নৌকাবাইচের প্রচলন সে সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না।
বাইচ শব্দটি ফারসি। এটি ‘বাজি’ শব্দজাত। যার বিবর্তন এরূপ : বাজি>বাইজ>বাইচ। এর অর্থ খেলা। মুসলিম যুগের নবাব-বাদশাহদের আমলে নৌকাবাইচ বেশ জনপ্রিয় ছিল। এ কারণে অনেকে মনে করেন, নবাব বাদশাহদের নৌবাহিনী থেকে এ দেশে নৌকাবাইচের গোড়াপত্তন। পূর্ববঙ্গের ভাটি অঞ্চলের রাজ্য জয় ও রার অন্যতম কৌশল ছিল নৌশক্তি। বাংলার বারো ভূঁইয়ারা নৌ বলেই মোগলদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। মগ জলদস্যুদের দমনে নৌশক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব রণবহর বা নৌবহরে দীর্ঘাকৃতির ছিপ জাতীয় নৌকা থাকত। বর্তমানে নৌকাবাইচে নৌকার আকৃতিও ওই রকমই।
বাংলাদেশের নৌকাবাইচের ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। তবে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে ‘মেসোপটেমিয়ার’ লোকেরা ইউফ্রেটিস নদীতে এক ধরনের নৌকাবাইচের আয়োজন করতেন বলে জানা যায়। এর কয়েক শতাব্দী পর মিসরের নীলনদে নৌকা প্রতিযোগিতা শুরু। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে নৌকাবাইচ। তবে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ এখনো তুমুল জনপ্রিয়। ১৯০০ সাল থেকে অলিম্পিকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৫টি ফাইনাল হয়েছে।
বাইচের নৌকার গঠন : বাইচের নৌকার গঠনও শৈল্পিক। এ নৌকা হয় ছিপছিপে। সরু ও বেশ লম্বাটে। ফলে নদীর পানি কেটে তরতরিয়ে দ্রুত লয়ে চলে। নৌকার সামনের গলুই খুব সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। তাতে কখনো করা হয় ময়ূরের মুখ, কখনো বা রাজহাঁস অথবা অন্য কোনো পাখির মুখাবয়ব। এসব নৌকা উজ্জ্বল রঙের কারুকাজে বিভিন্ন নকশায় তৈরি। এসব নৌকাকে দর্শকের সামনে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা থাকে। একেকটা নৌকা লম্বায় ১০০-২০০ ফুট হয়। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে নৌকার কিছুটা পার্থক্যও দেখা যায়।
ঢাকা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বাইচের জন্য সাধারণত কোশা আকৃতির নৌকা ব্যবহৃত হয়। এ নৌকার সামনের ও পেছনের অংশ থাকে সোজা। কোশা নৌকা তৈরিতে শাল, শীল কড়াই, চাম্বুল কাঠ ব্যবহার করা হয়। টাঙ্গাইল ও পাবনার বাইচের নৌকার সামনের দিকটা পানির সাথে মিশে থাকে। পেছনের অংশটি পানি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এ নৌকায় সামনের ও পেছনের মাথায় চুমকির বিভিন্ন কারুকাজ থাকে। নৌকাগুলো তৈরিতে সাধারণত শাল, গর্জন, শীল কড়ই, চাম্বুল কাঠ ব্যবহৃত হয়।
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আজমিরিগঞ্জ ও সিলেটে বাইচের জন্য সারেঙ্গী নৌকা ব্যবহৃত হয়। এর আকারও কোশা ও ছিপ জাতীয় নৌকার মতোই সরু। লম্বায় ১৫০-২০০ ফুট। তবে প্রস্থ একটু বেশি। এ অঞ্চলের নৌকার সামনের ও পেছনের দিকটা পানি থেকে দুই-তিন ফুট উঁচু থাকে। মুখটা হাঁসের মুখের মতো চ্যাপ্টা। চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর নিন্মাঞ্চল ও সনদ্বীপে বাইচে সাম্পান ব্যবহৃত হয়। এটি জাহাজের মতো। ঢাকা ও ফরিদপুরে ব্যবহৃত হয় গয়নার নৌকা। বাইচের নৌকার নামও বাহারি। যেমনÑ অগ্রদূত, ঝরের পাখি, পঙ্খিরাজ, ময়ূরপঙ্খী, সাইমুম, তুফান মেল, সোনার তরী, দ্বীপরাজ ইত্যাদি।
বাইচের নিয়ম বা আনুষ্ঠানিকতা : নৌকাবাইচের আনুষ্ঠানিকতাও চমৎকার। নৌকায় ওঠার আগে সবাই পবিত্র হয়ে গেঞ্জি গায়ে মাথায় একই রঙের রুমাল জড়িয়ে নেন। সবার মাঝে থাকেন নৌকার নির্দেশক। দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা চালান পেছনের মাঝিরা। অন্য মাঝিরা নৌকার দুই পাশে সারি বেঁধে বসে একত্রে জয়ধ্বনিসহ বৈঠা টানেন। প্রতিটি নৌকায় ২৫, ৫০ বা ১০০ মাঝি থাকতে পারেন।
মাঝিদের বৈঠা টানাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে একজন পরিচালক থাকেন। যাকে বলা হয় গায়েন। তিনি বসেন নৌকার গলুইয়ে। গায়েনের নির্দেশে মাঝিরা একত্রে গান গাইতে আরম্ভ করেন। গানের তালে তালে বৈঠা টানেন; ফলে কারো বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে এক সাথে পানিতে অভিঘাত তৈরি করে। গায়েন কাঁসির শব্দে এ বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করেন। অন্য সব নৌকা পেছনে ফেলে নিজেদের সবার আগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজনে কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সাথে গানের গতিও বেড়ে চলে। বাইচের নৌকায় সারিবদ্ধভাবে বসে মাঝিরা গান করেন বলে একে সারিগান বলা হয়।
আবহমানকাল থেকে বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ বিভিন্নভাবে নদী দখল ও কারখানার বর্জ্যে নদ-নদী মেরে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। নদী হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতি। ফলে পানি শুকিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদী। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে নৌকাবাইচ।
তবে এখনো হাওরাঞ্চলে আয়োজন করতে দেখা যায় নৌকাবাইচ। শনিবার কিশোরগঞ্জের নৌকাবাইচে বিভিন্ন এলাকার নয়টি নৌকা অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে নিকলীর গোবিন্দপুরের আলী হোসেনর নৌকা। দ্বিতীয় হয়েছে নিকলীর ফজলুর রহমানের নৌকা। তৃতীয় হয়েছে নিকলীর কারার বোরহান উদ্দিনের নৌকা।
নৌকাবাইচে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফর উল্লাহ প্রধান অতিথি থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
No comments