একার লড়াই by মারিয়া সুলতানা
অনেক চেষ্টা করেছিল অনুশা। ক্রমাগত ৮ বছর। কিন্তু কোনভাবেই টিকিয়ে রাখতে পারল না তার বিয়েটা। ঘুমভাঙ্গা শীতের সকালে ৬ বছরের আসিফকে নিয়ে লতিফের ফ্যাট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে একটাই কথা সে ভেবে চলছিল বারংবার যে, তার ভুলটা কোথায়।
ফুলশয্যার রাতেই অনুশা জানতে পারে যে, তার স্বামী লতিফ মদকাসক্ত। কলেজবেলা থেকেই গাঁজা, হেরোইন, চরস ইত্যাদি খাওয়ায় সে সিদ্ধহসত্ম। চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, রিহ্যাবিলিটেশন, কোনও কিছুই লতিফকে সর্বনাশা নেশার কবল থেকে মুক্ত করাতে পারল না। যখন অনুশাকে মারধর করে টাকা পয়সা কেড়ে নেয়া শুরম্ন করল লতিফ, তখনই ও বুঝতে পারল যে লতিফকে ছাড়াই এবার ওকে এগিয়ে যেতে হবে।চিত্র- ২
বন্দনাও একা। স্বামী আশেককে নিয়ে সংসার করতে পেরেছিল ৫ বছর। তারপর লিভার ক্যান্সারে এক বছর ভোগার পর মারা গেল। ৪ বছরের টুকুন আর ৫ মাসের টুসীকে নিয়ে খড়কুটোর মতো আশেকের রেখে যাওয়া ব্যবসাটা অাঁকড়ে জীবনটাকে নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করছে বন্দনা। অনুশা আর বন্দনার সমস্যার ভিন্নতা থাকলেও, এক জায়গায় ওরা দুজনেই এক। অনুশা এবং বন্দনা দুজনেই সিঙ্গল মাদার। যারা স্বামীর সাপোর্ট ছাড়াই সনত্মানদের বড় করে তুলছে।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, কাজটা খুব একটা সহজ নয়। বাবা, মা দুজনেরই সাহচর্য সনত্মানদের প্রয়োজন। কিন্তু দু'জনের সেই কাজটাই অনেক সিঙ্গল মাদার একাই করে চলেছেন সাহসে বুক বেঁধে।
সনত্মানের সঙ্গে
* ওয়ার্কিং মাদাররা চেষ্টা করম্নন অফিসের টেনশন বাড়িতে বয়ে না আনতে। বাড়িতে থাকার সময়টুকু ওদের সঙ্গে গল্প করে, খেলা করে, হোমওয়ার্কে সাহায্য করে কাটান। খেয়াল রাখুন বাবা সঙ্গে না থাকার কারণে ওরা যাতে কোনও রকম নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে।
* সনত্মানের কাছে নিজের অবস্থানটা সব সময় পরিষ্কার রাখুন। যদি আপনার ভিভোর্স হয়ে থাকে, বাবার দোষটাকে কখনওই বড় করে দেখিয়ে দোষারোপ করার চেষ্টা করবেন না। কে ঠিক বা কে ভুল সেটা ওদেরই বুঝে নিতে দিন।
* কোনভাবেই বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের বাবার সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করবেন না। বাবা যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার কথা, গল্প তাদের শোনাবেন যাতে ওরা ওকে চিনতে শেখে। যদি আপনি ডিভোর্সি হন, তাহলেও নিয়মিত বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলা, দেখা করা, ছুটি কাটানো থেকে ওদের বঞ্চিত করবেন না। আইনি লড়াই থেকেও যতটা সম্ভব বাচ্চাদের দূরে রাখুন।
* বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই স্বাবলম্বী, করে তুলুন। নিজের জামা-জুতো, বইপত্র ঠিকঠাক রাখা, সহজ সরল রান্না করা, দরকার পড়লে ইমার্জেন্সি হ্যান্ডেল করা _এগুলো ছেলেবেলা থেকেই শেখান। বড় ভাই বা আপাকে ছোট ভাই বা বোনের ন্যাপি পালটানো, দুধ গরম করা, জামা কাপড় গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি শিখিয়ে দিন।
* নিজের চারদিকে একটা সুরতি সামাজিক বলয় গড়ে তুলুন। বাবা-মা-আত্মীয়স্বজন, অফিসে কলিগ, প্রতিবেশী বাচ্চাদের স্কুলের টিচার, বাড়ির কাজের লোকের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন এবং সর্বদা যোগাযোগ রা করে চলুন।
* সিঙ্গল মাদাররা অনেক সময় নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সনত্মানদের অাঁকড়ে রাখা এর অন্যতম লণ। সনত্মানের প্রতি টান এবং ভালবাসা অবশ্যই থাকবে কিন্তু সেটা যেন কখনওই মাত্রাতিরিক্তে পরিণত না হয়।
আর কি করা দরকার
* যে কোনও একটা পেশা নিজের জন্য বেছে নিন। কারণ আংশিকভাবে হলেও সনত্মানদের এবং নিজের খরচ আপনাকেই সামলাতে হবে। শুধু স্বামীর রেখে যাওয়া টাকা পয়সা ও এ্যালিমনির ওপর নির্ভর করা কাজের কথা নয়।
* ব্যাংকের সেভিংস এ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট, ইনসিওরেন্সে থাকা টাকা পয়সার হিসেব ভাল করে বুঝে নিন।
* প্রথম থেকেই বাজেট করে চলতে শিখুন। মাসের বিভিন্ন খরচ যেমন ইলেকট্রিক বিল, স্কুলের ফি, পুরো মাসের বাজারের টাকা আলাদা আলাদা খামে ডুকিয়ে রাখুন যাতে হিসেবে গোলমাল না দেখা দেয়। সাধ্যের অতিরিক্ত খরচ পারতপ েকরবেন না। খরচ সম্বন্ধে স্ট্রিক্ট হওয়ার কারণটা বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলুন এবং ওদের থেকেও সাহায্য চান। দেখবেন বায়না করা কমিয়ে দেবে।
* ছেলেমেয়ে টিনএজে পেঁৗছলে তাদের পার্ট টাইম জব করতে এনকারেজ করম্নন। পড়ানো, এনজিওর কাজ করতে পারে। এতে কাজের এক্সপেরিয়েন্সও বাড়বে, পকেট মানিরও সুরাহা হবে।
* সপ্তাহে একটা সন্ধে নিজের জন্য রাখুন। কোনও বিশ্বাসভাজন বেবি সিটার বা কাজের লোকের দায়িত্বে বাচ্চাদের রেখে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, নিজস্ব শপিং বা পার্লারে যাওয়ার মতো কাজগুলো সেরে নিন।
* একা সংসার চালাতে হচ্ছে বলে হবি বা শখগুলো শিকেয় তুলে রাখবেন না। ছুটির দিনে বা বাচ্চারা বাড়ির বাইরে থাকলে নিজের শখের চর্চা করম্নন। চেষ্টা করম্নন বাচ্চাদের মধ্যে আপনার শখের প্রতি উৎসাহ জাগাতে।
* বছরে একবার বেড়াতে যান। কাছাকাছির মধ্যে হলেও বাচ্চাদের নিয়ে দু-তিনদিনের জন্য হই-হই করে কাটান। যদি অন্য কোনও পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যান, তাহলে কিছুটা আর্থিক সাশ্রয়ও হবে। অন্যান্য সমস্যাও কমে যাবে।
* একা লাগলে বন্ধুদের ফোন করে খানিকণ গল্প করম্নন। ডায়েরিও লিখতে পারেন। অযথা হীনম্মন্যতায় ভুগলে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।
্#৬১৬২৩; বাচ্চার স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন স্পোর্টস, এ্যানুয়াল ডে, প্যারেন্টস ডেতে অবশ্যই অংশগ্রহণ করম্নন। ্য
No comments