বদলে যাচ্ছে হারামাইনের চেহারা by জহির উদ্দিন বাবর
মুসলমানদের প্রিয় স্থান ও ইসলামের পবিত্র দুই মসজিদ হারামাইন শরিফাইনের অবয়ব পাল্টে যাচ্ছে। বিস্তৃত ও দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববি। গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মুসলিম জাহানের পবিত্রতম প্রাণকেন্দ্রটি চোখ ধাঁধানো বিস্ময়কর এক স্থাপত্যের রূপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রসারণ প্রকল্প উদ্বোধনকালে সৌদি বাদশাহ ঘোষণা করেছেন, নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুসলিম বিশ্ব মসজিদুল হারামের সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলী নিয়ে গর্ব করবে।
২০২০ সালের মধ্যে ৫০ লাখ লোকের ধারণক্ষমতায় উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ। আপাতত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় মসজিদে হারামে মুসলিল্গর ধারণক্ষমতা ২৫ লাখে উন্নীত করার কাজ চলছে পুরোদমে। গত কয় বছরে হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হজ ও ওমরাহ পালন আরও আরামদায়ক ও নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। চলমান সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুসলিল্গর ধারণক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। ১৬০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৮০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয়ে চলমান প্রকল্প শেষ হলে মসজিদের বর্তমান চেহারা পাল্টে যাবে।
৮৮ দশমিক ২ একর ভূমির ওপর অবস্থিত মসজিদে হারামের বর্তমান আয়তন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার। সম্প্রসারিত প্রকল্পে আরও ৪ লাখ বর্গমিটার এলাকাকে মসজিদের আওতায় আনা হচ্ছে।
সাধারণভাবে মসজিদে হারামের ভেতরে এখন ৯ লাখ মুসলিল্গর একসঙ্গে নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হজের সময় মসজিদের চারপাশের খোলা জায়গা ও সড়কে ৪০ লাখ মুসলিল্গ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। বর্তমানে ২৯২ ফুট উচ্চতার ৯টি সুদৃশ্য মিনার মাথা উঁচু করে আল্লাহর ঘরের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব জানান দিচ্ছে। সম্প্রসারিত এলাকায় আরও দুটি মিনার নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এতে মোট মিনারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১টি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সাহায্যে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে চলছে নির্মাণ কাজ। জাবালে কাবা পর্যন্ত সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে হারাম। বাকুবা এলাকার আবু সুফিয়ান সড়ক, শামিয়ার আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের সড়ক, জাবালে হিন্দি, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ সড়ক এবং সুবাইকা সড়ক পর্যন্ত সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে হারাম।
এদিকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে নববি। রাসূলের (সা.) স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদের সম্প্রসারণ কাজ তিন পর্বে সম্পন্ন হবে। পূর্ব-পশ্চিমে সম্প্রসারিত এ কাজ শেষ হলে মসজিদে নববিতে একসঙ্গে ২৮ লাখ লোক নামাজ পড়তে পারবে। এর পাশাপাশি জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত রেললাইনের কাজও চলছে। এটি সম্পন্ন হলে হজ ও ওমরাহর যাত্রীরা জেদ্দা থেকে সহজে মক্কা আসতে পারবেন। এমনকি জেদ্দার লোকেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে হারামে এসে পড়তে পারবেন।
এর আগে সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের নির্দেশে ১৯২৫ সালে প্রথম মক্কায় মসজিদুল হারাম এবং মদিনায় মসজিদে নববির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হয়। ১৯৮২ থেকে '৮৮ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বাদশাহ ফাহাদ দুই পবিত্র মসজিদের বড় ধরনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ করেন। ১৯৮৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তৃতীয় দফায় মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ কাজ চলে। এ সময় ১৮টি নতুন গেট নির্মাণের ফলে মসজিদের প্রবেশদ্বারের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৯৫টিতে।
বর্তমানে পঞ্চম দফায় ইতিহাসের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন কাজ চলছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত চলবে এ দফার সম্প্রসারণ কাজ। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিশ্বের অন্যতম উঁচুতম ভবন আবরাজ আল বাইত টাওয়ার নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। মসজিদে হারাম ছাড়াও হজ ও ওমরাহ করতে আসা মুসলিল্গদের সুবিধার্থে গোটা মক্কা নগরীতে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আল্লাহর ঘরের মেহমানরা আরও প্রশান্তভাবে প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারবেন।
zahirbabor@yahoo.com
২০২০ সালের মধ্যে ৫০ লাখ লোকের ধারণক্ষমতায় উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ। আপাতত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় মসজিদে হারামে মুসলিল্গর ধারণক্ষমতা ২৫ লাখে উন্নীত করার কাজ চলছে পুরোদমে। গত কয় বছরে হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হজ ও ওমরাহ পালন আরও আরামদায়ক ও নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। চলমান সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুসলিল্গর ধারণক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। ১৬০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৮০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয়ে চলমান প্রকল্প শেষ হলে মসজিদের বর্তমান চেহারা পাল্টে যাবে।
৮৮ দশমিক ২ একর ভূমির ওপর অবস্থিত মসজিদে হারামের বর্তমান আয়তন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার। সম্প্রসারিত প্রকল্পে আরও ৪ লাখ বর্গমিটার এলাকাকে মসজিদের আওতায় আনা হচ্ছে।
সাধারণভাবে মসজিদে হারামের ভেতরে এখন ৯ লাখ মুসলিল্গর একসঙ্গে নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হজের সময় মসজিদের চারপাশের খোলা জায়গা ও সড়কে ৪০ লাখ মুসলিল্গ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। বর্তমানে ২৯২ ফুট উচ্চতার ৯টি সুদৃশ্য মিনার মাথা উঁচু করে আল্লাহর ঘরের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব জানান দিচ্ছে। সম্প্রসারিত এলাকায় আরও দুটি মিনার নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এতে মোট মিনারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১টি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সাহায্যে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে চলছে নির্মাণ কাজ। জাবালে কাবা পর্যন্ত সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে হারাম। বাকুবা এলাকার আবু সুফিয়ান সড়ক, শামিয়ার আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের সড়ক, জাবালে হিন্দি, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ সড়ক এবং সুবাইকা সড়ক পর্যন্ত সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে হারাম।
এদিকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ হচ্ছে মসজিদে নববি। রাসূলের (সা.) স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদের সম্প্রসারণ কাজ তিন পর্বে সম্পন্ন হবে। পূর্ব-পশ্চিমে সম্প্রসারিত এ কাজ শেষ হলে মসজিদে নববিতে একসঙ্গে ২৮ লাখ লোক নামাজ পড়তে পারবে। এর পাশাপাশি জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত রেললাইনের কাজও চলছে। এটি সম্পন্ন হলে হজ ও ওমরাহর যাত্রীরা জেদ্দা থেকে সহজে মক্কা আসতে পারবেন। এমনকি জেদ্দার লোকেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে হারামে এসে পড়তে পারবেন।
এর আগে সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের নির্দেশে ১৯২৫ সালে প্রথম মক্কায় মসজিদুল হারাম এবং মদিনায় মসজিদে নববির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হয়। ১৯৮২ থেকে '৮৮ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বাদশাহ ফাহাদ দুই পবিত্র মসজিদের বড় ধরনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ করেন। ১৯৮৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তৃতীয় দফায় মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ কাজ চলে। এ সময় ১৮টি নতুন গেট নির্মাণের ফলে মসজিদের প্রবেশদ্বারের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৯৫টিতে।
বর্তমানে পঞ্চম দফায় ইতিহাসের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন কাজ চলছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত চলবে এ দফার সম্প্রসারণ কাজ। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিশ্বের অন্যতম উঁচুতম ভবন আবরাজ আল বাইত টাওয়ার নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। মসজিদে হারাম ছাড়াও হজ ও ওমরাহ করতে আসা মুসলিল্গদের সুবিধার্থে গোটা মক্কা নগরীতে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আল্লাহর ঘরের মেহমানরা আরও প্রশান্তভাবে প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারবেন।
zahirbabor@yahoo.com
No comments