শামস কিবরিয়ার আজ অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী by রফিকুল হাসান চৌধুরী
আজ সেই ভয়াল দিন ২৭ জানুয়ারি। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে ঘাতকের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সফল জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী শামস্ কিবরিয়া নির্মমভাবে প্রাণ হারান।
সেই সঙ্গে তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা মঞ্জুসহ প্রাণ হারান কৃষক সিদ্দিক আলী, আব্দুর রহিম ও আবুল হোসেন। আহত হন হবিগঞ্জ সদর আসনের বর্তমান এমপি তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আবু জাহির, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ সরদারসহ অন্তত শতাধিক লোক। এদের মধ্যে অনেকেই এখন পঙ্গুত্ব বরণ করে অসহায়ত্ব জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে নিহত কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা অনাহার-অর্ধাহারে প্রতিনিয়ত করছেন দিনাতিপাত। আজও বাস্তবায়ন হয়নি জনগণের প্রাণের দাবি শামস্ কিবরিয়া হত্যার বিচার। বরং পার হয়ে গেল কয়েক বছর আর চলে এলো শামস কিবরিয়া ও নিহত সহযোগীদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। যা সাধারণ মানুষ ভুলতে পারছে না।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কিবরিয়া হত্যার বিচার নিয়ে তখন চালায় নানা লোক দেখানো কর্মকা-। ফলে তাদের আমলে এ বিচার শুধু নীরবে নির্ভৃতে কাঁদছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ ভেবেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই জঘন্য হত্যাকা-ের বিচার প্রথমেই শুরু করবে। শুধু তাই নয়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামস্ কিবরিয়া হত্যাকা-কে পুঁজি করে হবিগঞ্জসহ গোটা বাংলাদেশে অনেক আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে আজ জাতীয় সংসদের সদস্য। এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বার কয়েক কিবরিয়া হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বললেও দু’বছর পেরিয়ে তা আদৌ হিমাগারেই। মনে হচ্ছে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা কোন কারণে এমন নির্মম হত্যার বিচার হোক তা তারা চাচ্ছেন না। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের একটি কুফল হতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্ষোভ ও হতাশা। আর কিবরিয়া পরিবারতো এ নিয়ে আন্দোলনের পর আন্দোলন এবং নানান চেষ্টা করে এখনও সফল না হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছেই এমন নির্মম হত্যার বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছেন বলে বহুবার জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আছমা কিবরিয়াসহ সন্তান ড. রেজা কিবরিয়া। অথচ আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের প্রত্যেকটি আসনেই সাধারণ মানুষের অতি প্রিয় প্রাণপুরুষ শামস্ কিবরিয়ার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অথচ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী (বর্তমান এমপি) শামস্ কিবরিয়ার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, তার সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন ও হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যে হত্যাকা-ের বিচার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ৪ বছরেও সম্পন্ন করার লক্ষণ নেই। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
হবিগঞ্জের সুশীল সমাজসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন, প্রচলিত আইনে নয় একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কিবরিয়ার মতো একজন ক্ষণজন্মা প্রাণপুরুষের এমন নির্মম হত্যাকা-ের বিচার এ সরকারের আমলেই সম্পন্ন করা হউক। বর্তমানে এই হত্যা মামলার কার্যক্রম অত্যন্ত ধীর গতিতে চলার কারণেই সাধারণ মানুষের এমন ধারণার সৃষ্টি বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে শামস্ কিবরিয়ার বিচার নিয়ে টালবাহানা আর কতদিন চলবে? জাতির জনকের কন্যা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত, এখনই গণমানুষের প্রাণের চেয়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি মজমুত করার মূল চালিকা দ্রষ্টা আর উন্নয়নের রূপকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস্ কিবরিয়ার হত্যার বিচার কার্যক্রম নতুন করে শুরুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যথায় আসছে নির্বাচনে হবিগঞ্জের ৪টি আসনেই ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া সেদিনকার গ্রেনেড হামলার শিকার অসহায় পরিবারগুলোর পাশেও নতুন করে সাহায্যের হাত বাড়াবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে শামস্ কিবরিয়ার ৮ম মৃত্যু বার্ষিকীতে আজ রবিবার নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী।
সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার একান্ত ঘনিষ্টজন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমুদুল হক জনকণ্ঠকে জানান, কিবরিয়া হত্যার বিচার না হওয়ায় আমরা হতাশ। আমরা ভেবেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসায় কিবরিয়া হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে। অথচ সাড়ে ৪ বছরেও তা হয়নি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কিবরিয়া কি আওয়ামী লীগ বা দেশের জন্য কোন কাজ করেননি। আমরা কিবরিয়া পরিবারের ওপর এমন নিষ্ঠুর আচরণের হেতু কি তা জানতে চাই। দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এমন জঘন্য হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন হউক এটাই, শেখ হাসিনার নিকট এখন হবিগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা।
ওই দিন সকালে হবিগঞ্জের শহীদ শামস্ কিবরিয়া ও মঞ্জুরুল হুদা স্মৃতি পর্ষদ ছাড়াও সকাল ৯টায় বৈদ্যের বাজার কিবরিয়া স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক এবং আলোচনাসভার আয়োজন করেছেন সদর উপজেলা পরিষদ। এ ছাড়া সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একই দিন বাদ মাগরিব কিবরিয়াসহ অন্য নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সদর উপজেলার পক্ষ থেকে সৈয়দ আহমুদুল হক এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। এদিকে একই দিন সকালে বৈদ্যের বাজারে জেলা শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে কিবরিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজন করা হয়েছে এক মানববন্ধন কর্মসূচী। এ ছাড়া শহীদ কিবরিয়া যুব সংঘের উদ্যোগে জেলার নবীগঞ্জের জালালসাফ আদর্শ গ্রামে ২৭ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শামস্ কিবরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বার্ষিক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল। ধারণা করা হচ্ছে এতে হাজার হাজার কিবরিয়াপ্রেমী ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগম ঘটবে।
No comments