শিশুর আত্মবিশ্বাসে বেড়ে ওঠা
আমার ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে আমার বিশেষ কোন চিন্তা নেই। এই বয়সেই ও বেশ দায়িত্ববান। পড়াশোনা সব নিজে নিজেই করার চেষ্টা করে। কারও কাছে না শিখে চমৎকার ছবি আঁকে, গান গাইতে ভালবাসে।
কিন্তু ওর এত গুণ থাকা সত্ত্বেও একটাই সমস্যা সব মাটি করে দেয়। ওর আত্মবিশ্বাসে ঘর একেবারে শূন্য। বাড়িতে খুব ভাল করে পড়া তৈরি করলেও ওর মনে হয় ও পরীক্ষায় কিছুই লিখতে পারবে না। ক্লাসটেস্ট বা স্কুলের কোন কমপিটিশনের আগে ওর নার্ভাসনেস বেড়ে যায়। আমরা ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, কনফিডেন্ট হতে হবে। সব ব্যাপারে এত ভয় পেলে চলবে না। ও তখনকার মতো বোঝে কিন্তু পরিস্থিতির সামনে পড়লে আবার যে কে সেই। মাঝে মাঝে মনে হয় এত আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে বড় হয়ে কমপিটিটিভ পৃথিবীতেও লড়বে কেমন করে? সাফল্য এবং আত্মবিশ্বাসের মধ্যে যে একটা নিবিড় সংযোগ রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আর ছেলেবেলাই হচ্ছে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল সময়। শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের মধ্যে যে একটা নিবিড় সংযোগ রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আর ছেলেবেলাই হচ্ছে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল সময়। শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাবের একাধিক কারণ থাকতে পারে। অনেক সময় ওদের প্রতি বড়দের ব্যবহার, কঠোর সমালোচনা, নিষ্ঠুর মন্তব্য শিশুর স্বাভিমান এবং আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়। সেই জন্য আপনার প্রশংসা এবং সমালোচনার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখাই কারেক্ট পেরেন্টিংয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াবার কয়েকটি সহজ উপায়। আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার প্রথম ধাপই হলো নিজের একটা পজিটিভ সেলফ ইমেজ তৈরি করা। ছোটরা সব সময় সেটা করতে পারে না, সেই জন্য ওর হয়ে আপনাকে খানিকটা কনফিডেন্স ফিল্ড করতে হবে। ছেলেবেলা থেকেই ওকে ছোটখাটো কাজের দায়িত্ব দিন যাতে ও তার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। নিজের কাজ ঠিকঠাক করতে পারলে বা আপনাকে বাড়ির কাজে হেলপ করতে সবার সামনে ওর প্রশংসা করুন। পরেরবার সেই কাজটা যখন নিজে করবেন তখন ওর থেকে পরামর্শ নিন। ও খুশি হবে, আত্মবিশ্বাসও খুঁজে পাবে। অন্যদের সঙ্গে তুলনা না টেনে স্কুলে, খেলার মাঠে বা হবি ক্লাসে ওকে ভাল ফল করতে উৎসাহিত করুন। তবে এর সঙ্গে এটাও মনে রাখুন, আপনার সন্তান যেমন ধরনের ওকে তার জন্যই ভালবাসুন। নিজের উচ্চাকাক্সক্ষার বোঝা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে ওকে ইঁদুর দৌড়ে শামিল করবেন না। বাচ্চাকে নিজের মতো করে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ দিন। লক্ষ্য করুন অবসর সময়েও কী কী করতে ভালবাসে। যত তুচ্ছই হোক না কেন, সে ব্যাপারে উৎসাহ দিন। পাশের বাড়ির ছেলেটি ক্রিকেট কোচিংয়ে যায় বা কলিগদের ছেলেমেয়ে রিয়ালিটি শো ভাল পারফর্ম করেছে বলে আপনার সন্তানকেও সেরকম দরের একটা কিছু করে পরিবারের সম্মান বজায় রাখতে হবে, এই ধরনের চিন্তার বশবতী হবে না। আপনার সন্তান যেভাবে, যতটুকু করছে সেটার জন্যেই ওর কদর করুন। ওর পছন্দের বিষয়টিকে ভাল করে জানতে বুঝতে সাহায্য করুন। ওর পছন্দের যদি একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশ করে দেন, তাহলে ওর ব্যক্তিত্বের একটা বিশেষ দিক উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ওর পছন্দের বিষয় নিয়ে চর্চা করতে পারবে। বাচ্চার ৫-৬ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওকে একটু সেপস দিতে শুরু করুন, সব সময় চোখে চোখে না রেখে একটু নিজের মতো খেলতে, বেড়াতে পড়াশোনা করতে দিন। দৃষ্টি রাখুন, তবে একটু দূর থেকে, পাজন জেগ সরুবিকস কিউবের মতো খেলনা কিনে দিন যার জন্য ধৈর্য এবং অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন হয়, ওকে নিজের মতো খেলতে দিন এবং ভুল করতে দিন। পারতপক্ষে সাহায্য করবেন না। ও এই মজার সমস্যা সলভ করতে পারলে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবে। আপনার সন্তানের রোড মডেল কিন্তু আপনিই। যদি কোন পারিবারিক সমস্যা বা বিপদের সময় ও আপনাকে আতঙ্কিত হতে দেখে, তা হলে ওর মধ্যেও ভীতি ঢুকে যাবে। আর আপনি যদি ঠা-া মাথায় সমস্যার সঙ্গে বুঝতে পারেন। আপনার সন্তানের মধ্যেও সেই গুণ প্রোথিত হয়ে যাবে। সেই জন্য ওর সামনে নিজের ব্যবহার নিয়ে একটু সচেতন থাকুন। একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ত ও নিজের স্কুল, বন্ধুবান্ধব বা নিজের মনোজগতের নানা সমস্যা নিয়ে আপনার দ্বারস্থ হবে। পরামর্শ দিন, যাতে ও নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে সেগুলোর সমাধান করতে পারে।রিমা
No comments