ভারতের সঙ্গে চুক্তি
বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুপ্রতিম দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুটি দেশের অবস্থানগত তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারতীয় ভূখ-।
রয়েছে ২ হাজার ৪২৯ মাইলের সুদীর্ঘ সীমান্তরেখা। এ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা দিক দিয়ে ভারতের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক থাকা জরুরি ও বাস্তবসম্মত। এই প্রেক্ষিতে দু’দেশের মধ্যে বেশকিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে এখনও বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে; এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তিস্তাচুক্তি। প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে ভারত এ চুক্তির বিষয়টি সুরাহা করবেÑএটাই বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা।ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দু’দেশের মধ্যে আটক বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিভিন্ন সহিংস আন্দোলন-সৃষ্ট নৈরাজ্য জনজীবনের শান্তি ও স্বস্তি বিঘিœত করে চলেছে বছরের পর বছর। এই বিদ্রোহীরা নিকট-অতীতে তাদের দেশবিরোধী তৎপরতা চালানোর জন্য বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে দশ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্র আটক হয়েছিল, তা ওই ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্যই বিদেশ থেকে এসেছিল বলে সাক্ষ্যপ্রমাণে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেআইনি অনুপ্রবেশ ও নানা তৎপরতা চালানোর অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা নেতা (উলফার সাধারণ সম্পাদক) অনুপ চেটিয়াকে। তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশেরও অনেক অপরাধী ভারতে লুকিয়ে আছে বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের কেউ কেউ এবং বেশকিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী এখন ভারতে আত্মগোপন করে আছে বলে বিভিন্ন সময়ে খবর বেরিয়েছে পত্রপত্রিকায়। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে কোন বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় অপরাধীদের ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়নি কোন দেশের পক্ষে। এখন সেই অসুবিধা দূর হতে যাচ্ছে। দৈনিক জনকণ্ঠসহ জাতীয় দৈনিকগুলোয় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দু’দেশের বন্দি বিনিময়ে উভয় সরকারের মধ্যে আগামী সোমবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই চুক্তির বলে ভারত যেমন অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চেয়ে আবেদন করতে পারবে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীসহ ভারতের অভ্যন্তরে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের অন্য অপরাধীদের ফেরত পাওয়ার পথও সুগম হবে। তবে, চুক্তি সম্পাদন করাই সব নয়; চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন এবং সীমান্তে যাতে বিএসএফের গুলিতে কোন বাংলাদেশী নিহত না হয়, সে বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির পথ ধরে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও অনুরূপ চুক্তি সম্পাদনের জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দিন এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর অবশিষ্ট সাজাপ্রাপ্ত খুনিরা যেসব দেশে পালিয়ে রয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বেগবান কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে; তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
No comments