ডা. নূরুল ইসলাম
দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক, জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম আর নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
ডা. নূরুল ইসলাম ছিলেন দেশের সর্বমহলে একজন শ্রদ্ধেয় এবং শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। দীর্ঘদিন তিনি বহু সাধারণ এবং একই সঙ্গে বিশিষ্ট বহু মানুষের চিকিৎসা করেছেন। অগণিত মানুষ পেয়েছে তাঁর চিকিৎসাসেবা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক। মওলানা ভাসানীরও চিকিৎসা করেছেন তিনি। এছাড়া দেশের নানা অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তির চিকিৎসা করেছেন তিনি। সাধারণ বহু মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে তাঁর কাছ থেকে। সেদিক থেকে বলা যায়, অগণিত মানুষের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পেয়েছেন তিনি।চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেমন তাঁর রয়েছে দেশে ব্যাপক অবদান, তেমনি এদেশের তরুণ চিকিৎসকদের উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান যথেষ্ট।
দেশের উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিজি হাসপাতালকে তিনি যেভাবে প্রায় শূন্য থেকে একটি আধুনিক স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্র তথা একটি আধুনিক মেডিক্যাল হিসেবে গড়ে তুলেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি চাইতেন এদেশের ছেলেমেয়েরা চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করুক। চিকিৎসা শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটুক। এই স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেখানকার কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি নিজেই। দীর্ঘদিন তিনি সেখানে কাজ করার পর সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন। দেশে যক্ষ্মা নির্মূলের কাজও তিনি উদ্যোগী হয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৫৭ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন জাতীয় যক্ষ্মা সমিতি। উদ্দেশ্য যক্ষ্মা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং যক্ষ্মা নিরোধ করা।
তাঁর একটি বিরাট উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ‘আধূনিক’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা। আধূনিক-এর অর্থ হচ্ছে ‘আমরা ধূমপান নিরোধ করি।’ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি; ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করা। এক কথায় ধূমপানবিরোধী একটি আন্দোলন সৃষ্টি করা।
‘আধূনিক’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধূমপানবিরোধী আন্দোলনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে তিনবার পদক প্রদান করে।
চট্টগ্রাম তাঁর জন্ম। সেখানে তিনি গড়ে তোলেন দেশের প্রথম বেসরকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
তাঁর আরেকটি বিশেষ কৃতিত্ব দেশের জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন। ১৯৮২ সালে তিনি এই ওষুধনীতি প্রণয়ন করেন। এটি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
ডা. নূরুল ইসলাম যে বয়সে চলে গেলেন সেটাকে পরিণত বয়স বললেও তাঁর মতো গুণী কর্মী মানুষের চলে যাওয়াকে অকালেই যাওয়া বলা যায়।
একজন অভিজ্ঞ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ছিলেন তিনি। তাঁর চলে যাওয়া সারাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের ক্ষতি। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
No comments