সামরিক সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক সমাধানের প্রেক্ষাপট- কর্নেল হামিদুর রহমান পিএসসি (অব.)
২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকা- এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিডিআর ইউনিটে সংঘটিত বিদ্রোহ ও উচ্ছৃঙ্খলতা নিঃসন্দেহে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশে একটি জঘন্যতম কালো অধ্যায় সূচীত করেছে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকির স্মারক হিসেবে যুগ যুগ ধরে বিবেচিত হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীসমূহের মধ্যকার একটি অংশের ক্ষুব্ধতার বহির্প্রকাশ হিসেবে সরকার তথা জনগণের সামনে প্রতিভাত হলেও বিদ্রোহসংশিস্নষ্ট পরবতর্ী নৃশংস হত্যাকা- এবং অস্ত্র গোলাবারম্নদসহ অফিসারদের বাসস্থানে লুটপাট ও ভাঙচুর নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, বিষয়টি দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীসমূহের ভিতরে অনত্মর্ঘাত সৃষ্টিপূর্বক সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টির প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই ছিল না। দেশের এই ক্রানত্মিলগ্নে এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকা-ে সংশিস্নষ্ট হত্যাকারীদের এবং তাদের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে যথাযথ বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির ব্যবস্থা করে এমন নজির স্থাপন করা যাতে আর কোন দিন দেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অথচ পর্যবেৰিত হয় যে, এই ক্রানত্মিলগ্নেও আমরা একটি দ্বিধাবিভক্ত জাতি হিসেবে পারস্পরিক দোষারোপে লিপ্ত রয়েছি যা প্রকারানত্মরে বিদ্রোহের ইন্ধনদাতা ও হত্যাকারীদের হীনস্বার্থকে চরিতার্থ করার পথকেই সুগম করবে।বিডিআর বিদ্রোহ দমনে রাজনৈতিক সমাধানের যৌক্তিকতা : গত ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ বিডিআর সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহে প্রেৰিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতর্ৃক সামরিক অভিযান পরিচালনা না করে কৌশলগতভাবে সংশিস্নষ্ট সকল বিডিআর সদস্যকে সাধারণ ৰমা ঘোষণাপূর্বক রাজনৈতিকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্রোহ দমনের পদৰেপ গ্রহণ করা হয়। বাসত্মব অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব, আবেগ এবং উস্কানিমূলক প্রচারণার কারণে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক সেনা সদস্যসহ অনেক বেসামরিক জনগণই ধারণা পোষণ করেন যে, বিডিআরের বিদ্রোহ দমনের বিষয়টি যথাযথভাবে পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়নি। উলেস্নখ্য, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহসংশিস্নষ্ট হুমকিসমূহের যথাযথ বিচারবিশেস্নষণপূর্বক সেনাবাহিনীপ্রধানসহ উর্ধতন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনাসাপেৰে যথাযথ পদৰেপ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশেরই একটা সাধারণ ধারণা জন্মেছিল যে, পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যাকা- একটি ঢাকাকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা মোটেই সত্য নয়। গত ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার পর পরই সমন্বিতভাবে ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বিডিআর ইউনিটেও বিদ্রোহ ও উচ্ছৃঙ্খলতার বহির্প্রকাশ ঘটে যা প্রধানমন্ত্রী কতর্ৃক ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ ঘোষিত সাধারণ ৰমার প্রেৰিতে আতিশয্য পেতে পারেনি। কাজেই সামরিক পদ্ধতিতে এই বিদ্রোহের সমাধান করার চেষ্টা করা হলে এবং পিলখানায় সেনাবাহিনী কতর্ৃক আক্রমণ করা হলে পিলখানায় এবং দেশের অন্যান্য বিডিআর ব্যাটালিয়নের বিডিআর সদস্যরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে হত্যা এবং নৃশংসতাকে আরও হৃদয়বিদারক রূপ দিতে পারত। এদের বিরম্নদ্ধে ঐ সময়ে যদি কোন সামরিক আক্রমণ করা হতো তাহলে তা হতো আরও রক্তৰয়ী এবং এ ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে সেটাই স্বাভাবিক। নিম্নের বিষয়সমূহের দিকে একটু নিবিড়ভাবে দৃষ্টিপাত করলেই যে কোন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন যে, ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ দমনের লৰ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হলে তার পরিণতি কি ধরনের ভয়াবহ রূপ নিতে পারত!
বিদ্রোহের দিন পিলখানায় অবস্থানরত বিডিআর সদস্য সংখ্যা : ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ বিডিআর বিদ্রোহের দিনে বিডিআর সদর দফতরে অবস্থিত ইউনিটসমূহে এবং বিডিআর সপ্তাহ-২০০৯ উপলৰে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ইউনিট থেকে আগত মোট জনবল ছিল প্রায় ৭০০০-এর অধিক। উলেস্নখ্য, পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরসহ ৫টি ইউনিট, ১টি সেক্টর সদর দফতর, ১টি সিগন্যাল সেক্টর, রাইফেল স্পোর্টস বোর্ড এবং রাইফেল সিকিউরিটি ইউনিটের প্রায় তিন সহস্রাধিক জনবল অবস্থান করে থাকে। উলেস্নখ্য, প্রাথমিক পর্যায়ে পিলখানায় উপস্থিত জনবলের ৪০/৫০ জন অস্ত্র ধারণ করলেও বিদ্রোহ শুরম্ন হয়ে যাওয়ার অব্যবহিত পর অধিকাংশ বিডিআর সদস্যই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অথবা হুমকির মুখে প্রত্যৰ ও পরোৰভাবে বিদ্রোহ, নৃশংস হত্যাকা-, ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটে জড়িয়ে পড়ে।
বিদ্রোহের দিন পিলখানায় মজুদ অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ : ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ বিডিআর বিদ্রোহের দিনে বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় মজুদ ছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ যা চলে গিয়েছিল সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। পিলখানায় ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ তারিখের বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যাকা-ের দিন বিদ্রোহীদের কাছে পিলখানায় বিপুল পরিমাণ গোলাবারম্নদের মজুদসহ নিম্নলিখিত অস্ত্রসমূহের মজুদ ছিল:
ক) ৫০০০টি রাইফেল (আনুমানিক), খ) ৫০০টি এসএমজি (আনুমানিক), গ) ৪০০টি এলএমজি (আনুমানিক), ঘ) ২৪টি মেশিনগান, ঙ) ২৪টি রিকয়েললেস রাইফেল, চ) ২৪টি ৮২ মিলিমিটার মর্টার, ছ) ৬০টি ৬০ মিলিমিটার মর্টার, জ) ৪টি আর্মড পার্সনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), ঝ) ৭০০০টি গ্রেনেড (আনুমানিক) এবং, ঞ) শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
পিলখানায় সামরিক অভিযান শুরম্ন করা হলে স্বাভাবিক কারণেই বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা নিজেদের প্রতিরৰা তথা জীবন বাঁচানোর জন্য মারমুখী হয়ে উঠত। এমতাবস্থায় পিলখানায় মজুদ বিপুল সংখ্যক অস্ত্র এবং গোলাবারম্নদ মজুদের কিয়দংশও যদি বিদ্রোহীদের দ্বারা ব্যবহার করা হতো, তবে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় আধুনিক প্রথাগত ঘনবসতি এলাকায় সংঘর্ষের ফলে সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহী বিডিআর উভয় পৰের মধ্যেই প্রচ- সংঘাত হতো যার কারণে ব্যাপক প্রাণহানি এবং রক্তপাত ঘটতে পারত। শুধু তাই নয়, এর কারণে বেসামরিক জনবলের জানমালের ৰয়ৰতিসহ প্রচুর পরিমাণে অবকাঠামোগত ৰয়ৰতি হতো। উলেস্নখ্য, উপরে বর্ণিত অস্ত্রসমূহের মধ্যে মর্টারসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী নিবাস ও ধানম-ির আবাসিক এলাকার দিকে তাক করা ছিল এবং যে কোন সামরিক হুমকি/আক্রমণের মুখে বেসামরিক এই এলাকাসমূহে বিদ্রোহীদের কর্তৃক রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল। একই সাথে পিলখানার অভ্যনত্মরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে অনত্মরীণ ৩৩ জন অফিসারসহ তাদের প্রায় শতাধিক পরিবারবর্গের সদস্যদের যে কোন সামরিক আক্রমণের মুখে তাৎৰণিকভাবে মেরে ফেলার হুমকি/পরিকল্পনা বিদ্রোহীদের কতর্ৃক করা হয়েছিল।
বিদ্রোহের দিন পিলখানায় উপস্থিত সপরিবারে বসবাসরত অফিসারদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা : পিলখানায় ওই সময় আনুমানিক ৩০ জন সামরিক অফিসারের পরিবারবর্গ অফিসার্স পারিবারিক বাসস্থানে এবং বিডিআর সদর দফতর অফিসার্স মেসে অবস্থান করেছিলেন। যাদের মোট জনবল ছিল আনুমানিক দেড় শতাধিক। এদের প্রায় সকলকেই পরবতর্ীতে কোয়াটর্ারগার্ড এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
বিদ্রোহের দিন বসবাসরত জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল: সেদিন পিলখানায় আনুমানিক ১০০ জন বিডিআর-এর জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যদের পরিবারবর্গ পিলখানার অভ্যনত্মরে পারিবারিক বাসস্থান এলাকায় অবস্থান করছিলেন যাদের মোট জনবল ছিল আনুমানিক ৫ শতাধিক।
এমতাবস্থায়, ঢাকার কেন্দ্রস্থলে নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজারীবাগ ও ধানম-ি এলাকার সনি্নকটে অবস্থিত বিডিআর সদর দফতর, পিলখানার ওপর যে কোন ধরনের সামরিক আক্রমণ স্বাভাবিকভাবেই প্রচ-রকম আত্মঘাতী ও রক্তাক্ত হতো যাতে সেনাবাহিনী ও বিডিআর সদস্যদের হতাহত হওয়ার পাশাপাশি পিলখানায় কোয়াটর্ারগার্ডে বন্দী ৩৩ জন অফিসার ও তাদের দেড় শতাধিক স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং পিলখানার সনি্নকটে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানম-ি, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় বেসামরিক জনগণের রক্তের বন্যা বয়ে যেত। এ ধরনের একটা সামরিক অভিযান আমাদের বর্তমান স্বজনহারানোর বেদনাকে তো কমাতই না বরং আরও শতগুণে বাড়িয়ে দিত। আরও উলেস্নখ্য যে, প্রাথমিক তথ্য প্রাপ্তির পর সেনা সদরের নির্দেশ মোতাবেক কোনক্রমেই ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯ তারিখ দুপুর ১২০০ ঘটিকার পূর্বে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না অথচ উদ্ধারপ্রাপ্ত জীবিত অফিসারদের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, দরবার হলের ভেতরে অনত্মরীণ অধিকাংশ অফিসারকেই জোহরের নামাজের আযান শুরম্ন হওয়ার পূর্বেই হত্যা সম্পন্ন হয়েছিল। উপরন্তু সামরিক অপারেশন পরিচালনার কারণে দেশব্যাপী বিডিআর এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অনিয়ন্ত্রিত গৃহযুদ্ধ শুরম্ন হয়ে বেসামরিক পরিম-লে ছড়িয়ে যেত, যা বিপন্ন করত গণতন্ত্রের পথে আমাদের নবযাত্রাকে এবং উন্নতির পথে আমাদের ক্রমাগত উত্তরণকে।
উপসংহার
উপরোক্ত অতুলনীয় একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সংঘাতের পথকে পরিহারপূর্বক কৌশলগতভাবে সাধারণ ৰমার ঘোষণা দিয়ে সমঝোতার পথে বিদ্রোহ দমনের পদৰেপ যদি গ্রহণ না করা হতো তবে পিলখানা, ঢাকার বিদ্রোহ তো সত্মিমিত হতোই না, বরং রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে স্ফুলিঙ্গের মতো সারাদেশের বিভিন্ন বিডিআর ব্যাটালিয়নে ছড়িয়ে গিয়ে আমাদের সকলের তথা দেশের জন্য অসত্মিত্বের সঙ্কট তৈরি করত এবং দেশকে একটি উদ্ধারবিহীন অগি্নগর্ভে নিৰেপ করত। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সকলেরই অনুধাবন করা উচিত যে, কি হতে পারত না সেটা কোনভাবেই বড় কথা নয়, এ ধরনের রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিয়ে আমাদের দেশ তথা জাতি একটা সমূহ গৃহযুদ্ধের অগি্নমুখ থেকে আপাতত ফিরে আসতে পেরেছে। অথচ আমরা তা অনুধাবন/উপলব্ধি করার চেষ্টা না করে এখনও জাতির এই দুঃসময়ে বিদ্রোহ দমনের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে দোষারোপ করে কালৰেপণ করছি। এই ক্রানত্মিকালে আমাদের সবারই মুখ্য ভূমিকা হওয়া উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকরী থেকে বিদ্রোহীদের এবং তাদের সকল ইন্ধনকারীকে বিচারের জন্য অনুসন্ধানে সহায়তা প্রদান করা। বর্তমান প্রেৰাপটে আমাদের বাসত্মবতা বুঝতে হবে। শুধু শুধু আবেগতাড়িত হয়ে বা মিথ্যা ব্যক্তিস্বার্থের বশবতর্ী হয়ে অথবা কোন ধরনের উস্কানির শিকার হয়ে এই মুহূর্তে এমন কোন কাজ, কথা বা মতামত প্রদান করা উচিত হবে না, যা আমাদের শত্রম্নদের উদ্দেশ্যকেই পুনরায় বাসত্মবায়িত করবে। কেননা, আমাদের শত্রম্নরা স্বাভাবিকভাবেই চায় আমরা যেন দ্বিধাবিভক্তিতে থাকি, আর ভাইয়ে ভাইয়ে সহিংসতায় লিপ্ত হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের মধ্যে নিৰেপ করি। সুতরাং, আমাদের সকলের উচিত আর কোন বিতর্কে জড়িত না হয়ে বা একে অন্যকে দোষারোপ না করে প্রত্যেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনের দিনগুলোতে দেশকে উত্তরণের পথে নিয়ে যেতে চেষ্টা করা, যাতে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হয়ে আমরা দেশকে উত্তরোত্তর উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারি এবং শত্রম্নর সকল হীন চেষ্টাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্পূর্ণভাবে পযর্ুদসত্ম করতে পারি। অন্যথায় জাতি বা দেশ হিসেবে আমাদের এক চরম ধ্বংসময় ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হবে, যা আমরা এই মুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারছি না, কিন্তু যখন উপলব্ধি করতে পারব তখন হাতে আর কোন সময় থাকবে না।
সুতরাং, দেশের এই ক্রানত্মিলগ্নে আমাদের সকলের একমাত্র করণীয় হবে জাতীয়ভাবে ঐকমত্য গড়ে তুলে পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকা-ের এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত বিদ্রোহের সকল ইন্ধনদাতা ও সংশিস্নষ্টদের সামরিক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি আমাদের শহীদ ও উদ্ধারপ্রাপ্ত অফিসারগণের এবং নিহত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের পরিবারসমূহকে পুনর্বাসিত করা, যাতে করে তাদের উত্তরসূরিরা গর্বভরে আবার দেশের জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এর মাধ্যমেই আমরা বিডিআর বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যা ঘটনায় শহীদ অফিসারগণের এবং অন্য ভুক্তভোগীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি। আমরা জানি, যাদের আমরা হারিয়েছি তাদেরকে আর কোনদিন ফিরিয়ে আনতে পারব না কিন্তু যে দেশপ্রেমকে বুকে ধারণ করে তারা অসময়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে শহীদ হলেন সেই দেশ যেন কোন ব্যর্থ রাষ্ট্র বা জনপদে পরিণত না হয়_ স্মরণকালের এই দুযের্াগলগ্নে এটাই হোক আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা।
No comments