ডায়াবেটিস রোগ বাড়ছে
সরকারের জরিপ বলছে, বাংলাদেশের ৫০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের রোগী। প্রাক-ডায়াবেটিস অবস্থায় আছে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। এই এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রয়োজন দুই হাজার ৯৬ কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্য বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ।
দেশে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে (বিডিএইচএস ২০১১) এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী তিনজন নারীর একজন এবং পাঁচজন পুরুষের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে অস্ত্রোপচারে জন্ম নিচ্ছে প্রতি পাঁচটি নবজাতকের একটি।গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বিডিএইচএস ২০১১-এর মূল প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও নীতিবিষয়ক আলোচনার আয়োজন করে। আয়োজনে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি।
অনুষ্ঠানে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের তথ্য উপস্থাপন করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম এইচ তালুকদার ও মেজর ইভ্যালুয়েশনের জ্যেষ্ঠ আবাসিক উপদেষ্টা কারার জুনায়েদ আহসান। উপস্থাপনায় বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এখন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ আছে আরও এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ দুটি রোগে আক্রান্ত মানুষের জীবনভর পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দরকার হয়। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাব (একজন রোগীর একটি মৌলিক ওষুধের জন্য বার্ষিক খরচ ২৮ মার্কিন ডলার) উদ্ধৃত করে জরিপে বলা হয়, ডায়াবেটিসের ন্যূনতম মৌলিক চিকিৎসায় বছরে দুই হাজার ৯৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা ২০১০-১১ অর্থবছরের স্বাস্থ্য বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ। গবেষকেরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান রক্ষণশীল হিসাবের ভিত্তিতে করা। ইনসুলিন বা অন্য চিকিৎসার খরচ এই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়নি।
বিডিএইচএস ২০১১-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল গত বছর এপ্রিলে। যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফ-ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তায় মিত্র অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস মাঠপর্যায়ে ২০১১ সালের ৮ জুলাই থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে। দেশের ৬০০ জরিপ এলাকায় (শহর ২০৭ ও গ্রাম ৩৯৩) ১৮ হাজার খানা থেকে তথ্য নেওয়া হয়। জরিপে ৫০ বছরের কম বয়সী ১৭ হাজার ৮০০ মহিলা এবং ১৫-৫৪ বছর বয়সী প্রায় চার হাজার বিবাহিত পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। প্রতি চার বছর অন্তর এই জরিপ হয়। শেষ জরিপ হয়েছিল ২০০৭ সালে।
জরিপের মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপস্থাপনায় সেভ দ্য চিলড্রেনের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান ইশতিয়াক মান্নান বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ৭৩ শতাংশ নবজাতকের জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রার (১৫ শতাংশ) চেয়ে এটা অনেক বেশি। এই পরিসংখ্যান সেবার মান, আইনকানুনের প্রয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
প্রথম উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন কেন্দ্রের প্রধান কিম স্ট্রিটফিল্ড বলেন, ২০০৭ সালের তুলনায় মানুষ এখন পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক তথ্য কম পাচ্ছে। ২০১১ সালের জরিপ বলছে, তিনজন নারীর একজন রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র, সাময়িকী ও স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য পান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
পুষ্টিবিষয়ক উপস্থাপনায় আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা কেন্দ্রের পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা, প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও পয়োব্যবস্থার উন্নতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও পক্ষকে যুক্ত করতে হবে।
এই প্রতিষ্ঠানের শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক শামস এল আরেফিন শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক উপস্থাপনায় বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু বছরে ৫ শতাংশ হারে কমছে। তবে দরিদ্র পরিবারে শিশুমৃত্যু ধনী পরিবারের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারে শিশুমৃত্যু কমাতে জাতীয় কর্মসূচি নতুনভাবে সাজাতে হবে।
No comments