আল-জাজিরার বিশ্লেষণ- মিসরে কি আরেকটি বিপ্লব আসন্ন?
প্রায় তিন দশকের শাসক হোসনি মোবারকের পতনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিসর। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মতভেদ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া—দুইয়ে মিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, মিসরে কি আরেকটি বিপ্লব আসন্ন? মোবারকের পতনের পর থেকে সেই অর্থে কখনোই মিসরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সংবিধান প্রণয়ন, গণভোট—সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম মতভেদ লক্ষ করা গেছে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে বারবার রাস্তায় নেমেছে বিরোধীরা। সরকারবিরোধীদেরঅভিযোগ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি মোবারকবিরোধী বিপ্লবের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি মিসরের সব জনগণের জন্য নয় বরং ইসলামি ভাবাদর্শের কাছাকাছি গিয়ে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তিনি যতটা সম্ভব একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। তবে সরকার অভিযোগ নাকচ করে বলছে, মোবারকের পতনের পর এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। মুরসি গণতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মোবারক-পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, মিসরের জনগণের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছেন—এসবই মোবারকবিরোধী বিপ্লবের পুরস্কার। কিন্তু মোবারকের পতনের পর দেশে স্থিতিশীলতা না আসায় মিসরের অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ন্যায্য মজুরি, কাজ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা না পেয়ে জনগণ হতাশ। এই হতাশা থেকেও বিভিন্ন সময় তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।বিশ্লেষকদের মতে, মুরসি জনগণকে এক সুতায় গাঁথতে ব্যর্থ হয়েছেন। যারা ফলে জনগণের মধ্যে বিভক্তি এখন চরম পর্যায়ে। অনেকের মতে, এই বিভক্তি যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, যা জনমনে সরকারবিরোধী অবস্থানকে কঠোর করেছে।
জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করেও মুরসি সহিংসতা ঠেকাতে পারছেন না। সব মিলিয়ে তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মিসরে কী আরেকটি বিপ্লব আসন্ন? এই প্রশ্ন আরও জোরালো করেছেন মিসরের সামরিক বাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ফাত্তাহ আল সিসি নিজেই। তিনি গতকাল মঙ্গলবার আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে মিসরের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাহলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা কি সত্যি হতে যাচ্ছে?
No comments