আশঙ্কা মিসরের সেনাপ্রধানের- রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে মিসরের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মিসরের সামরিক বাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কারফিউ ভেঙে মিসরের কয়েকটি শহরে গত সোমবার রাতে বিক্ষোভ করেছেন সরকারবিরোধীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত দুই বিক্ষোভকারী নিহত হন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সরকার সংলাপের আহ্বান জানালেও তা নাকচ করে দিয়েছে বিরোধীরা। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কায়রোর রাজপথে গত কয়েক দিনের মতো বিক্ষোভ দেখা যায়নি।জেনারেল ফাত্তাহ বলেন, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দ্বন্দ্ব ও মতভেদের কারণে মিসরে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে। তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মিসর যে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে, তা দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
জেনারেল ফাত্তাহ আরও বলেন, সুয়েজ শহরে সেনা মোতায়েনের মূল উদ্দেশ্য সুয়েজ খালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চলমান সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি পোর্ট সৈয়দ, ইসমাইলিয়া ও সুয়েজ শহরে এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেন। কিন্তু বিরোধীরা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন। পোর্ট সৈয়দে রাতে বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি থানায় হামলা চালান। এ সময় সহিংসতায় দুই ব্যক্তি নিহত হন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পোর্ট সৈয়দ ও সুয়েজ শহরে সেনাবাহিনী কারফিউ কার্যকরে তেমন ভূমিকা নেয়নি।
ইসমাইলিয়া শহরে বিক্ষোভকারী খালিদ আলী বলেন, ‘আমরা কারফিউ প্রত্যাখ্যান করছি। প্রেসিডেন্ট মুরসি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কারফিউর বিরোধিতা করতেন। এখন তিনিই কারফিউ জারি করছেন। আমরা সুয়েজ ও পোর্ট সৈয়দে আমাদের ভাইদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমেছি।’
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসতে মুরসির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট (এনএসএফ)। এই জোটকে ছাড়াই গত সোমবার রাতে বৈঠক করেন মুরসি। এতে উদারপন্থী বলে পরিচিত একমাত্র বিরোধী নেতা আইমান নুর অংশ নেন। বৈঠক শেষে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, আগামী সপ্তাহে তাঁরা আবার আলোচনায় বসবেন।
এনএসএফের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ এল বারাদি সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো ধরনের সংলাপের আগে মুরসিকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করতে হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হামদিন সাবাহি বলেন, ‘আমরাও সংলাপ চাই। কিন্তু সংলাপ যে সফল হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
মিসরের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ ধরনের রক্তপাত গ্রহণযোগ্য নয়।
হোসনি মোবারকের পতনের দুই বছর পূর্তিতে গত বৃহস্পতিবার মিসরের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মিসরের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে সহিংসতার ঘটনায় গত শনিবার আদালত ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে আরও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসি ও রয়টার্স।
No comments