মেদ থেকে মুক্তি
স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে ইদানীং অনেকেই দুশ্চিন্তায় দিবারাত্র এক করে ফেলেন। তবে হঁ্যা, আজকালকার ফাস্টফুডের বদৌলতে এটি একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সমস্যাই বটে।
এখন শুধু বড়রাই নয়, আজকালকার শিশুরাও এই সমস্যার শিকার হচ্ছে। বড় বড় শহরে এখন না আছে খেলার মাঠ, না আছে উন্মুক্ত জায়গা, যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করে প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তাই এখনকার বিশেষ করে ঢাকা শহরের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকে কম্পিউটার ও টেলিভিশনের সামনে বসে কী বোর্ড ও রিমোট টিপে দিন কাটাচ্ছে। ফলে এই ফ্যাট শিশুরা ক্রমশ স্থ্থূল থেকে স্থ্থূলকায় হচ্ছে।স্থ্থূলতা বা ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি 'ওবেসিটি', একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ওবেসিটি হলে অনেকেরই চিনত্মায় চিনত্মায় রাতের ঘুমও নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের জানতে হবে একজন ব্যক্তি কতখানি মুটিয়ে গেলে তাকে আমরা স্থূলতার পর্যায়ে ফেলতে পারি অথবা এটার মাপকাঠি কী? স্থ্থূলতা আমরা ইগও
এককে পরিমাপ করে থাকি। ফরমুলাটি হচ্ছে বি.এম.আই. = ওজন/(উচ্চতা)২।
একজন মানুষের শরীরের ওজন কত কেজি এবং উচ্চতা কত মিটার তা প্রথমে বের করে নিতে হবে। তারপর ওজন যত কেজি হবে তাকে উচ্চতা কত মিটার তার বর্গফল দিয়ে ভাগ দিতে হবে। বি.এম.আই. ১৮-২৫ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা দেহের অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতাকে বি.এম.আই. অনুযায়ী নিম্নোক্তভাবে শ্রেণীবিন্যাস করে।
০ বি.এম.আই. ২৫-২৯.৯ হলে প্রাক স্থূলতা।
০ বি.এম.আই. ৩০-৩৪.৯ হলে স্থূলতা কাস ও বা প্রথম শ্রেণীর স্থূলতা।
০ বি.এম.আই. ৩৫-৩৯.৯ হলে দ্বিতীয় শ্রেণীর স্থূলতা।
০ বি.এম.আই. ৪০ এর উর্ধে হলে তৃতীয় শ্রেণীর স্থূলতা।
শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে দুশ্চিনত্মার সীমা থাকে না। সর্বরোগ যেন শরীরকে অাঁকড়ে ধরে। ডায়াবেটিস মেলাইটাস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ চর্বির পরিমাণ, অসটিওআর্থ্রাইটিস, মাওকারডিয়াল ইনফ্রাশান এমনকি স্ট্রোক হয়ে মৃতু্য পর্যনত্ম ঘটতে পারে।
স্থূলতার কারণ হিসেবে দেখা যায় এটা তাঁদেরই বেশি হয় যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন অথবা কায়িক শ্রম করতে লজ্জা পান। এটা বংশপরম্পরায়ও হয়ে থাকে। হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, ধূমপান করা। সর্বোপরি যেটি সেটি হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
মুটিয়ে যাওয়া এড়াতে হলে আমাদের করণীয় বিষয়গুলোর ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যাঁরা মুটিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা ঘুম থেকে উঠে মুক্ত বাতাসে আধা ঘণ্টা পার্কে হাঁটুন, দূষণমুক্ত বায়ু সেবন করম্নন আর হাল্কা কিছু ব্যায়াম করম্নন। বেশি প্রোটিন ও ক্যালোরিযুক্ত খাবার কম খান। দাওয়াতে গেলে ভারি খাবার খান বুঝেশুনে। তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খেয়ে সালাদের পেস্নট নিয়ে বসে পড়ুন। বছরে অনত্মত দুইবার পরীৰা-নিরীৰা করে দেখুন কোন রোগ জটিলতা আছে কি-না। কোন রোগ জটিলতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়ায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করম্নন। মেদকে ভয় নয়, মোকাবেলা করতে হবে সাহসিকতার সঙ্গে।
ডা. মৌসুমী ভদ্র
ঊ-সধরষ : সড়ঁঢ়র@ুধযড়ড়.পড়স
No comments