এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সক্ষম হব- সংসদে রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বয়কট ও জ্বালাও-পোড়াও-সংঘাত-নৈরাজ্যের পথ পরিহার করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনাদের যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব, সুপারিশ ও মতামত সংসদের ভেতরে এসে বলুন এবং গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে সহায়তা করুন।
আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদীয় নির্বাচন দিতে সক্ষম হব।’তিনি বলেন, নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবে গ্রহণ করলে বিরোধী দলের কর্তব্য ছিল জাতীয় সংসদে এসে তাদের দায়িত্ব পালন করা এবং সংসদের ভেতরে ও বাইরে সংবিধান সংশোধনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রধান বিরোধী দল গত চার বছর ধরে সংসদীয় কর্মকা-ে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকে তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, কোন বিশেষ অবস্থানে আকড়ে থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত জিইয়ে রাখা কিংবা সংসদ বয়কটের ব্যাপারে অনমনীয় থেকে জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পালন না করা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী।
নবম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনের সূচনা দিন রবিবার ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই শুরু করেছিল প্রতিহিংসার রাজনীতি। কিন্তু বিশ্বের ইতিহাস বার বার প্রমাণ দিয়েছে, সন্ত্রাস ও ঘৃণার রাজনীতি কখনও সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।
তিনি বলেন, জোট সরকারের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি জন্ম দিয়েছিল একটি ভবনকেন্দ্রিক গণবিরোধী তৎপরতার। এতে সক্রিয় হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট; মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। গড়ে উঠেছিল মূলধারার অর্থনীতির মধ্যে আরেকটি অর্থনীতি, সরকারের মধ্যে সরকার এবং রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র। এভাবে বিকৃত হয়েছিল পুরো সমাজ-কাঠামো। কিন্তু এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ-তরুণ-যুবকরা এই বিকৃতি ও বিপথগামিতা সহ্য করেনি। সে কারণেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা সৃষ্টি করেছিল আরেকটি ইতিহাস।
১৬তম অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদও চার বছর পেরিয়ে মেয়াদের শেষ বছরে পদার্পণ করল। স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরুর পর সংবিধানের ৭৩ (২) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নতুন বছরের শুরুর দিনে রাষ্ট্রপতি ১৪৮ পৃষ্ঠাব্যাপী লিখিত ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বর্তমান মহাজোট সরকারের গত চার বছরের সফলতা ও উন্নয়ন কর্মকা-ের বিশদ বিবরণ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।
বিকেল সাড়ে তিনটায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। শুধু বিরোধী দলের ৩৭টি আসন ছাড়া বাকি সকল আসনই ছিল পরিপূর্ণ। বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতির আগমনী বার্তা জানিয়ে বিউগল বাজানো হয়। এরপর সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামার ওপর সাদাকোট পরিহিত রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। অসুস্থতার কারণে রাষ্ট্রপতি তাঁর আসনে বসেই ভাষণ দেন। ভাষণ চলাকালে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান।
অসুস্থতার কারণে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার মাত্র ১০ মিনিটে উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় হিসেবে তাঁর পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি পঠিত বলে ঘোষণা দেন স্পীকার। এরপর সংসদের অধিবেশন আগামী বুধবার পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। চারটা ৭মিনিটে রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ত্যাগ করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা ছিল যথারীতি অনুপস্থিত। ১৬তম অধিবেশনের প্রথম দিনে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সচিববৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ গণ্যমান্যরা ভিভিআইপি গ্যালারি থেকে সবকিছু প্রত্যক্ষ করেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, জনগণের এক বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের সূচনালগ্নে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই অভূতপূর্ব গণরায়ের ভিত্তি ছিল রূপকল্প-২০২১, দিনবদলের সদন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ের প্রতি সকল শ্রেণীর মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম-আয়ের জ্ঞান-ভিত্তিক, শান্তিময়, সমৃদ্ধশালী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষে জনগণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছিল। এসব লক্ষ্য পূরণে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গত চার বছর যাবত কঠোর ও নিরলস পরিশ্রম করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, এই সমাপনী বছরে সরকারের অবশিষ্ট অঙ্গীকার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, উন্মুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু আচরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্নকে, আকাক্সক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমান ইসি’র অধীনেই নির্বাচন ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আলোচনার প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সংলাপে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আগামীতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদীয় নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব।
এ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নির্ভরযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা, নিয়মিত নির্বাচন পরিচালনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহতিা নিশ্চিত করতে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অবদান রাখছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অভূতপূর্ব সাফল্যের সঙ্গে শেষ করার ফলে দেশে গণতন্ত্র আরও সুসংহত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের সুষ্ঠু নির্বাচন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সংসদীয় শূন্য আসনের ১৪টি নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৫ হাজার ৫১০টি। এ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জানান, দেশে সাড়ে ৮ কোটি ভোটারের এ তথ্যভা-ার প্রতিবছর হালনাগাদ করা হচ্ছে। যেখানে আরও প্রায় ৭০ লাখ ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৭ লাখ প্রয়াত ভোটারকে বাদ দিয়ে ভোটারতালিকা হালনাগাদ হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অচিরেই শেষ হওয়ার আশাবাদ ॥ রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকার দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে, যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ দু’টি ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি মামলায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রায় ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আশা করেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এই মামলাগুলোর বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে আনীত মামলা, জাতীয় চার নেতা হত্যার পুনর্বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো নিষ্পন্ন হলে দেশের আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে।
তিনি বলেন, দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করার মাধ্যমে জাতি তার কলঙ্কের দায় লাঘব করতে সমর্থ হয়েছে। তবে পলাতক খুনীদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই এই প্রয়াস পূর্ণতা পাবে। তিনি বলেন, দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রেও সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সরকারের চার বছরের তুলনায় গত চার বছরে আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন এবং অনির্বাচিত সরকারের অব্যবস্থাপনার ফলে বিপর্যস্ত ও ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে বর্তমান সরকার যাত্রা শুরু করে। সরকারের যথাযথ পরিচালনায় দেশ আজ সারা বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গত চার অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একই মেয়াদে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। বর্তমান সরকারের চার বছরে গড় রফতানি আয় ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিগত সরকারের একই সময়ে যা ছিল ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া এই চার বছরে রেমিটেন্সের বার্ষিক গড় প্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত সরকারের একই মেয়াদে ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকারের চার অর্থবছরে মাথাপিছু গড় আয় হয়েছে ৬১ হাজার ১৩৫ টাকা, যা বিগত সরকারের একই মেয়াদে ছিলো মাত্র ৩০ হাজার ৬শ’ টাকা। বর্তমান সরকারের চার অর্থ বছরের গড় রাজস্ব আয় ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার বিপরীতে বিগত সরকারের একই মেয়াদে গড় রাজস্ব আয় ছিল ৪২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সঙ্কট মোকাবেলা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চহার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, গত তিন বছরে অর্থনীতিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এই সময়ে সর্বক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে উর্ধগামী। কৃষিখাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পখাতের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি এবং সেবা খাতের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমষ্টিগত অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও রাজস্ব খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের চার বছর মেয়াদে বিগত সরকারসমূহের একই সময়সীমার তুলনায় মোট ৬ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি অর্জিত হয়েছে। বিগত সরকারসমূহের একই সময়সীমার তুলনায় মোট ৭৯৬ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি বৈদেশিক সাহায্য ছাড় হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বিদ্যুত প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াট, যা ২০১১-১২ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৪৭৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট হয়েছে। গ্রাহকসংখ্যা এক কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার থেকে বেড়ে এক কোটি ৩৫ লাখ ৪২ হাজারে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুত বিতরণ লস ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
চলতি বছরেই খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পূণতা ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালের মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। ২০১১-১২ অর্থবছরে চাল উৎপাদন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বের অর্থ বছরের তুলনায় (২০০৭-০৮) ১৯ দশমিক ৩৯ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তিন দফায় সারের মূল্য কমিয়ে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের কেজি প্রতি মূল্যে যথাক্রমে ২২, ১৫ এবং ২৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। দেশে প্রথমবারের মতো এক কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯০৯টি কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। এছাড়া ৫ শতাধিক উদ্ভিদের বিধ্বংসী রোগের জন্য দায়ী ছত্রাকের জীবনরহস্যও উন্মোচন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও রফতানি বাণিজ্যে কৃষির ভূমিকা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে প্রয়োজন কৃষির দ্রুত উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার কাজ করে চলেছে।
রাষ্ট্রপতি জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বায়নের এ যুগে বিদেশে আমাদের শ্রম বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের প্রয়োজন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে ৭৫টি দেশে বাংলাদেশ হতে কর্মী প্রেরণ করা যেত। বর্তমান সরকারের বাস্তবসম্মত শ্রম-কূটনীতির সাফল্যের কারণে বর্তমানে বিশ্বের ১৫৫ দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরিত হচ্ছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ পর্যন্ত মেয়াদে বর্তমান সরকারের আমলে ২০ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। বিগত জোট সরকারের একই সময়ে জনশক্তি প্রেরণের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১২ সারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শিক্ষাখাতে ব্যাপক সাফল্য ॥ শিক্ষাখাতে গত চার বছরের উন্নয়ন-সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষাখাতে বর্তমান সরকারের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন। বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগান্তকারী কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় উৎসাহিত করতে উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ, শিক্ষার সকল স্তরে সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য লটারি ব্যবস্থা চালু, নতুন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ইত্যাদি। তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ সমাপনান্তে দেশব্যাপী সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের সুষম মূল্যয়নের ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, বিগত চার বছরে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে প্রায় ৯২ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রের ১৫ হাজার ৪৯টি কপি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে। এক হাজার কোটি টাকা সিড মানি রেখে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে কোচিং নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত দেশের প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ কোটি ১৩ লাখ বই সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষেও ৩ কোটি ৬৮ লাখের অধিক শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ব্যাপক পদক্ষেপ ॥ ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট সমস্যা নিরসনে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রাক-সম্ভাবতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, রেলওয়ে খাতে বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত মোট প্রায় ১৮ হাজার ৩১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৮টি নতুন প্রকল্প এবং ৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করেছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত ৪৫টি নতুন রুটে ট্রেন চালু এবং বিভিন্ন রুটে ১০ জোড়া ট্রেনের সার্ভিস সম্প্রসারণ করেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ডিজিটাল বন্দরে পরিণত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় কন্টেনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। বছরে এক মিলিয়ন কন্টেনার টার্মিনাল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থান ॥ বর্তমান সরকারের মেয়াদে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে সততা ও সুনীতিকে সমুন্নত ও কার্যকর রাখা এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের একটি সুসমন্বিত কর্মকৌশল হিসেবে প্রণীত ‘সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ গত বছরের ১৮ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা সরকারের প্রতিশ্রুত দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে গুণগত ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ও সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৩৫টি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিবর্গকে শনাক্ত করে এক হাজার ৩৯৪টি মামলা রুজু করেছে। এছাড়া কমিশন দক্ষতার সঙ্গে ২ হাজার ২১৫টি মামলার চার্জশীট দাখিল করেছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে আনা হবে ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ সম্প্রীতিকে ক্ষুণœ করে এমন কোন কাজ বা উদ্যোগকে বর্তমান সরকার কোনভাবে বরদাস্ত করবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গঠিত টাস্কফোর্স তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ নিশ্চিত করতে তদন্ত সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার শুরু করা হয়েছে। সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধের লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সব ধরনের কৌশলগত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভূখন্ডের সীমানা জরিপ ও মানচিত্র প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ॥ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যে তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় ও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে বর্তমান সরকার প্রথম থেকে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং উদ্যোগ সারাবিশ্বেই দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, সরকারের গতিশীল কূটনৈতিক কর্মকা-ের সবচাইতে দৃশ্যমান অর্জন সমুদ্রসীমা নির্ধারণে সাফল্য। মায়ানমারের সঙ্গে মামলা করে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমায় বিশাল ভূখ-ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বমূলক ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলার জন্য বর্তমান সরকার কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ, ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির প্রেক্ষাপটে ‘ফোর্সেস গোল- ২০৩০’-এর আওতায় তিন বাহিনী পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরব অর্জন করেছে। বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বমোট ১১ হাজার ৯৮৫ জন জনবল ১০ দেশে কর্মরত রয়েছে।
গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শামিল হোন ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর সুদীর্ঘ ভাষণের শেষাংশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ থেকে মুক্ত করতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে এসেছে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক চর্চায় উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে উদ্যোগ নিয়েছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাঙালী জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্র মিলে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারব। এই সুমহান প্রয়াসে আমাদের অবশ্যই সফল হতে হবে।
No comments