পাহাড়ে শান্তি মিছিল- দিনে ১৪৪, রাতে কার্ফু
খাগড়াছড়ি শহরে দিনে ১৪৪ ধারা ও রাতে কার্ফু অব্যাহত রয়েছে। বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনার পর বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি শহরে পাহাড়ী-বাঙালীদের সমন্বয়ে সাদা পতাকা হাতে শান্তি মিছিল হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফায় কার্ফু বলবত করা হয়েছে। বাঙালী ছাত্র পরিষদের ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শানত্মিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মাঝেও রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিচ্ছিন্নভাবে নতুন করে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। এর একটি খাগড়াছড়ি শহরের পৌরসভা এলাকায়। অপরটি রাঙ্গামাটি জেলার জুরাইছড়ি উপজেলা সদরে সংঘটিত হয়েছে। সার্বিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে অবরম্নদ্ধ হয়ে থাকার কারণে আতঙ্কের পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।খাগড়াছড়ি থেকে জনকণ্ঠের প্রতিনিধি জীতেন বড়ুয়া জানান, খাগড়াছড়ি ও বাঘাইহাটে সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে শান্তি মিছিল হয়েছে। একই সময় পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ আহূত সকাল-সন্ধ্যার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এ সময় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পৌরসভা ও আশপাশ এলাকায় বুধবার রাত ১০টায় জারি করা কাফর্ু বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় তুলে নিলেও বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যনত্ম তৃতীয় দফায় তা বলবত করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪৪ ধারাও বলবত রয়েছে। গত বুধবার রাতে কাফর্ু বলবত হওয়ার পূর্বমুহূর্তে পৌরসভার রাজ্যমনিপাড়া এলাকায় বাঙালীদের ৩টি বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সেনা, র্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী রাত-দিন টহলের পাশাপাশি গুজবে কান না নিতে মধ্যরাত পর্যনত্ম শহরে মাইকিং করেছে। পাহাড়ী-বাঙালী গ্রামগুলোতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের সহিংস ঘটনায় তিগ্রসত্ম ৯২ পরিবারের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৩৩৬ টন চাল ও গৃহনির্মাণ বাবদ দুই লাখ ৭৮ হাজার ৫শ' টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি ঘোষণা দেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যনত্ম শহরে ১৪৪ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, পাহাড়ী-বাঙালীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। উভয় সমপ্রদায়ের নেতৃবৃন্দ নিয়ে এলাকায় এলাকায় শানত্মি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে এলাকায় শানত্মিশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও উচ্ছৃঙ্খলদের চিহ্নিত করে শানত্মি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। তিনি আরও জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও গুজব রটনাকারীদের কঠোরহসত্মে দমন করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কিছু দিনের মধ্যেই পার্বত্য এ জনপদে স্বসত্মি ফিরে আসবে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এ পর্যনত্ম পৌরসভার নৈশপ্রহরী আনোয়ার হোসেন হত্যাকা-, খাগড়াছড়ি শহরে অগি্নসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে হসত্মপে করার অভিযোগসহ পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি মামলার বাদী বাঙালী ও অপর ২টির বাদী উপজাতি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ৫ নং পৌর ওয়ার্ডের বর্তমান পৌর কাউন্সিলর আব্দুর রব রাজাকে লুটের মালামালসহ আটক করেছে পুলিশ। জানা যায়, তার নেতৃত্বে শহরে একাধিক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আটকের সংখ্যা হচ্ছে ৮০। এর মধ্যে ৬৬ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শহরে সেনাবাহিনী-র্যাব-বিডিআর-পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় শানত্মিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ল্যে এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা শিথিল করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে দুপুর ১টায় শানত্মি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এর পূর্বে জেলার বিভিন্ন কর্নার থেকে পাহাড়ী-বাঙালীর সমন্বয়ে খ- খ- শানত্মি মিছিল বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিলিত হয়। শানত্মি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পাহাড়ী-বাঙালী নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্যরা হলেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রম্নইথি কার্বারী, পৌর মেয়র জয়নাল আবেদীন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শানে আলম, জেলা পরিষদ সদস্য অনিমেষ দেওয়ান, সানুমং মারমা, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান জাহেদুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম শফি, সাংগঠনিক সম্পাদক মং ক্যচিং চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বাঁশরি মারমা এবং নারী নেত্রী ফারজানা আজম।
এদিকে জেলার দীঘিনালা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় শানত্মি মিছিল ও সমপ্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে, বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় তিগ্রসত্ম ৯৬ পরিবারের মধ্যে সরকারী ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ ৩ লাখ ৬ হাজার ৫শ' টাকা, শাড়ি, লুঙ্গি, শুকনা খাবার পরিবারপ্রতি ৫শ' কেজি করে চালসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণাথর্ী ও অভ্যনত্মরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ এবং পুনর্বাসন বিষয়ক ট্রাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ ৩ শিক পরিবারকে ডিসির ত্রাণ তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ৭৫ হাজার টাকা বিতরণ করেন। ত্রাণ গ্রহণকালে শিক পরিবারগুলো তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানের আবেদন জানান। তাদের আবেদনের প্রেেিত স্থানীয় সংসদ সদস্য যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা তিগ্রসত্মদের সানত্ম্বনা দিয়ে বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সরকার আপনাদের পাশে আছে। পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী এবং দেশী-বিদেশী সংস্থার প থেকে সাহায্য পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। যথাশীঘ্র তিগ্রসত্মদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের প থেকে ২০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়িতে সামপ্রদায়িক সহিংস ঘটনায় পার্বত্য জনপদে পরস্পরের মধ্যে নষ্ট হয়েছে আস্থা ও বিশ্বাস। গত ৩ দিন ধরে খাগড়াছড়ি ও প্রায় ৭ দিন যাবত বাঘাইছড়িবাসী অবরম্নদ্ধ রয়েছে। এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট। অবরম্নদ্ধ অবস্থায় আটকা পড়ে রয়েছে অনেক পর্যটক ও বিভিন্ন জেলার লোকজন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজনরা।
অবরম্নদ্ধ থাকায় জেলার বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি রয়েছে কম। শিা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, শহরতলি এলাকার নাগরিকদের মাঝে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। শহরতলির বাইরের লোকজনের মধ্যে এ আতঙ্ক আরও বেশি। তাদের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনীর টহল শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এদিকে খাগড়াছড়িতে বসবাসকারীদের স্বজনরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। খাগড়াছড়িতে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও স্বজনরা আসতে পারছেন না।
পুলিশের ব্যর্থতার জের ॥ বাঘাইছড়িতে সামপ্রদায়িক দাঙ্গার ঘা না শুকাতেই দু'দিনের মাথায় খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনার জন্য ঘুরেফিরে আসছে পুলিশের ব্যর্থতার বিষয়টি। তাৎণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কতটা ব্যর্থ ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে তার প্রমাণ মেলে। ঐদিন সকালে যখন ইউপিডিএফ কমর্ীরা লাঠিসোটা নিয়ে জঙ্গী মিছিল করে তখন মিছিলের আগে-পিছে কোন পুলিশ ছিল না। মিছিলটি যখন শাপলা চত্বর এলাকা অতিক্রম করছিল তখন ৮/১০ জনের সশস্ত্র যুবককে যদি পুলিশ প্রতিরোধ করতে পারত তাহলে এ সংঘর্ষের ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু দেখা গেছে, এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও দেখা গেছে, মুখোশপরা সন্ত্রাসীরা যখন লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে তখনও পুলিশের ভূমিকা ছিল নীরব। ১৪৪ ধারা ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর পুলিশের সামনে ৩/৪ জনের সশস্ত্র যুবক আদালতপাড়ায় সরকারী দু'টি এ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর করে এবং পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে তখন পুলিশের সংখ্যা ছিল ৮-১০ জন। কিন্তু তারা ছিল নীরব। পুলিশ তাদের এ ব্যর্থতা ঢাকতে ঢালাওভাবে নিরীহ জনসাধারণকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, যথাসময়ে ১৪৪ জারি ও সেনা তলব করা হলে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হতো না। শহরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে সোয়া ১১টায়। ১৪৪ ধারার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সোয়া ২টায় এবং সেনা বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে বিকেল ৩টায়। ততণে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে। খাগড়াছড়ি পরিণত হয় ধ্বংসযজ্ঞে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ১২টার দিকে মাটিরাঙ্গায় ১৪৪ ধারা জারির খবরে সেখানে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশের একটি ভুল ওয়্যারলেস মেসেজের কারণে এ বিভ্রানত্মি দেখা দেয়। পরে তা সংশোধন করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি থেকে জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী জানান, বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও সমঅধিকার আন্দোলন ডাকে বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে শানত্মিপূর্ণভাবে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালিত হয়েছে। ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ভারত সীমানত্মবতর্ী দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘইহাটের সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী-বাঙালী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষণা করে। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ।
রাঙ্গামাটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সর্বণিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছে। পার্বত্য শানত্মি চুক্তিবিরোধী আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ আহূত তিন পার্বত্য জেলায় নৌ-সড়ক অবরোধের নামে যে তা-ব চালিয়েছে, তা যাতে আর চলতে না পারে সেজন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসন বৃহসপ্রতিবার শহরে কঠোর পদপে গ্রহণ করায় অবরোধে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সময় পাহাড়ী-বাঙালীরা হেঁটে তাদের নিজ নিজ অফিসে গিয়ে কাজ করেছেন। অবরোধ চলাকালে শহরের কয়েকটি স্থানে বাঙালী ছাত্র পরিষদ মিছিল করেছে। মিছিলকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে তারা বাঘাইহাট ও খাগড়াছড়ির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি, তিগ্রসত্ম বাঙলীদের পুনর্বাসন, প্রত্যাহার করা, সেনাক্যাম্প পুনসর্্থাপন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান। এরপর জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমঅধিকার সভাপতি মোসত্মাক আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক কামারউদ্দিন পেয়ার আহমদ। অবরোধ চলাকালীন সময়ে শহরে পুলিশের পাশাপাশি সেনা টহলও মোতায়েন ছিল।
এদিকে, বাঘাইছড়িতে পাহাড়ী-বাঙালী তিগ্রসত্মরা ত্রাণ নেয়া শুরম্ন করেছে। তিগ্রসত্ম ৩৯২ পাহাড়ী ও ২৯ বাঙালী পরিবারের জন্য এ পর্যনত্ম সরকারী তরফ থেকে নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৩শ টন খাদ্যশস্য, ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন থেকে বাঘাইছড়ি নির্বাহী অফিসারের বরাবরে ছাড় করা হয়েছে। ৫০০ বান্ডেল ডেউটিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাঘাইহাটে যাবে। এর আগে তিগ্রসত্মদের মাঝে নগদ জনপ্রতি ১ হাজার টাকা, ৫ কেজি চাল, আলু, লবণ, হাঁড়িপাতিল, শাড়ি-লুঙ্গি ও গামছা বিতরণ করা হয়।
শানত্মি মিছিল ॥ পাহাড়ী-বাঙালীর সমপ্রীতি অটুট রাখার ল্যে বৃহসপতিবার বিকেল ৪টায় রাঙ্গামাটিতে শানত্মি মিছিল হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে উভয় সমপ্রদায়ের নেতৃস্থানীয় সকল পেশার লোকজন নিয়ে শহরে একটি বর্ণাঢ্য শানত্মি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে শুরম্ন হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি করে পৌরসভা চত্বরে এসে শেষ হয়। শানত্মি মিছিলে সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন সত্মরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
জুরাইছড়িতে আগুন ॥ এদিকে জেলার জুরাইছড়ি উপজেলা সদরে বুধবার রাতে কে বা কারা ১৫টি বসতবাড়ি ও দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে। এর সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি এনজিও অফিস, ইউপিডিএফ অফিসও রয়েছে। কারা এই অগি্নকা- ঘটিয়েছে প্রশাসন এখনও তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তবে এলাকাবাসীর ধারণা, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে জুরাইছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার জুরাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন এক জরম্নরী আইনশৃঙ্খলা সভা করেছে।
আমাদের বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটির বাঘাইহাট ও খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বান্দরবানে শানত্মিপূর্ণভাবে বিপ্তি অবরোধ পালিত হয়েছে। তবে কোন মিছিল সমাবেশ হয়নি। বান্দরবান বাসস্টেশনে সকাল থেকে কোন দূরপালস্নার যানবাহন ছাড়েনি। শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বান্দরবানের কোথাও বাঙালী ছাত্র পরিষদের অবরোধকারীদের দেখা যায়নি। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসন ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে। আইনশৃঙ্খলা যাতে ঠিক থাকে সেজন্য প্রশাসন কঠোর নজরদারি বলবত করে। বুধবার রাতে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলা শাখার প থেকে এক বিবৃতিতে সকল পরিবহন মালিক সমিতিকে চিঠির মাধ্যমে এ অবরোধে সহায়তার জন্য আহবান জানানো হয়। এদিকে বান্দরবানের অভ্যনত্মরীণ সড়কগুলোতেও গাড়ি চলাচলের খবর পাওয়া গেছে। তবে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-বাঙ্গালহালিয়া সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বাঙালী বসতিতে অগি্নসংযোগ, হামলা, লুটপাট ও খাগড়াছড়িতে বাঙালীদের ওপর হামলার ঘটনায় বান্দরবানের সর্বত্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
No comments