স্বজনহারাদের কান্নায় বনানীর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল- শ্রদ্ধা-ভালবাসায় পালিত হলো পিলখানা হত্যা দিবস
সকাল নয়টা। বনানীর সামরিক কবরস্থনে জড়ো হয়েছেন স্বজনহারারা। ঠিক এক বছর আগে পিলখানা ট্র্যাজেডি কেড়ে নিয়েছে তাদের সবচেয়ে কাছের মানুষকে।
স্বামী, পিতা কিংবা ভাই হারানোর বেদনা যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তারা। চোখে বাঁধভাঙ্গা কান্নার স্রোত। নিহতদের স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বনানীতে সামরিক কবরস্থানের পরিবেশ। মায়ের সঙ্গে ছোট্ট শিশুরাও যেন খুঁজে বেড়াচ্ছিল তার পিতাকে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরম্ন করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভালবাসার পুষ্পার্ঘ্যে ছেয়ে গেছে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের কবর। তবে এর কোন কিছুতেই যেন সানত্ম্বনা খুঁজে পাচ্ছিলেন না নিহতের স্বজনরা। সব হারানোর বেদনায় ভারাক্রানত্ম স্বজনদের দাবি একটাই_ ন্যক্কারজনক হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি। বৃহস্পতিবার শোক ও শ্রদ্ধায় পালিত হয়েছে বিডিআর বিদ্র্রোহের প্রথম বার্ষিকী। পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরম্ন করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জানিয়েছেন, পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার দ্রম্নতই শুরম্ন হবে। অন্যান্য বিদ্রোহের বিচার ইতোমধ্যেই শুরম্ন হয়েছে। অন্যদিকে মামলার তদনত্মকারী কর্মকতর্া আব্দুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, তার তদনত্মকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ৯শ' জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হতে পারে।সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পাঘর্্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের প্রথম বার্ষিকীর কর্মসূচী শুরম্ন হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো প্রতিনিধিরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতির প েরাষ্ট্রপতির সহকারী সামরিক সচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জাকির হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প েপ্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সালাউদ্দিন মিয়াজী শ্রদ্ধা জানান। সকাল নয়টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন নিহত সেনাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুও আলাদাভাবে শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল মুবীন, নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এডমিরাল জেড ইউ আহমেদ এবং বিমানবাহিনীপ্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোঃ জিয়াউর রহমান ও বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মইনুল ইসলাম বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পসত্মবক অর্পণ শেষে নিহত সেনা কর্মকতর্াদের রম্নহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় নিহতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা স্যালুট দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিদ্রোহে নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বনানী সামরিক কবরস্থানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কবরে ফুল দিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে কবরস্থানের পরিবেশ। ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদসহ দেশের সব সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কোরানখানি, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিকেল পৌনে পাঁচটায় বনানী সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার শানত্মি কামনা করে মোনাজাত করেন। পরে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা সামরিক কবরস্থানে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ কর্মকর্তার কবরে ফুল দেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরএ গনি, মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সহসভাপতি কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুলস্নাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, মুশফিকুর রহমান। বিকেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ নিহত সেনা সদস্যদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বিডিআর বিদ্রোহের এক বছর পূর্তিতে বিকেলে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে মিলাদ মাহফিলের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার দ্রম্নতই শুরম্ন হবে। তিনি বলেন, বিদ্রোহের বিচার ইতোমধ্যে শুরম্ন হয়েছে। হত্যাকা-ের বিচারের তদনত্ম শেষে চার্জশীট দেয়ার কাজও চলছে। শীঘ্রই তা দেয়া হবে। এরপর বিচার শুরম্ন হবে। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাযজ্ঞে অপূরণীয় তি হয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে সেই তি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এ ল্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
পিলখানা হত্যাকা-ের মামলার তদনত্মকারী কর্মকতর্া সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, তদনত্ম প্রায় শেষ। ৯শ' জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হতে পারে। দুপুরে বিডিআর সদর দফতরের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিদ্রোহে নিহতদের আত্মার শানত্মি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলামসহ বিডিআরের উর্ধতন কর্মকতর্া এবং পিলখানায় কর্মরত বিডিআর সদস্য ছাড়াও সকল পর্যায়ের কর্মকতর্া, কর্মচারী এতে অংশ নেন। মিলাদে নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন। বিডিআর মহাপরিচালক জানান, পিলখানায় নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যে পস্নট ও ফ্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাউকে চাকরিও দেয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনও বিডিআর হত্যাকা-ের এক বছর পালন উপল েআলোচনাসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।
বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে বিডিআর বিদ্রোহ ও মহাজোট সরকারের কার্যকর উদ্যোগ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ। এতে বক্তারা বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ নিছক কোন বিদ্রোহ নয়। এটি সরকারকে বিপর্যসত্ম ও ব্যর্থ করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে কারা রয়েছে, তা উদঘাটন করতে না পারলে দেশে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে এ ঘটনা ঘটত না বলে তারা মনে করেন। তারা বলেন, সেদিন দেশকে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাৎণিক চৌকস সিদ্ধানত্ম দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রা করেছিল। অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় মুুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি অধ্য আহাদ চৌধুরী, সাংসদ শাহীন মনোয়ারা ও আওয়ামী লীগ তথ্য সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বক্তৃতা করেন।
No comments