উচ্চ রক্তচাপ ও তার প্রতিকার
হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তাই বলে এই রোগটি যে শুধু হৃদপিন্ডকে আঘাত করে তা কিন্তু নয়। কিডনি বিকল করার পিছনে ডায়াবেটিসের পর এর অবদানই সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বের অনেক দেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ভারটা কিডনি বিশেষজ্ঞের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। দেখা গেছে, যে সব রোগীর কিডনি আংশিক বিকল শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেই তার রোগের অগ্রগতি অনেকাংশে কমানো যায়।উচ্চ রক্তচাপ কি? নাড়ির দেয়ালের গায়ে অনুভূত রক্তের চাপকেই বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ। যখন তা স্বাভাবিক চাপের চাইতে বেশি হয় তখন বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ। যে যন্ত্রের সাহায্যে তা মাপা হয় তাকে বলা হয় ঝঢ়যরমসড়সবহড় সবঃবৎ । রক্তের চাপকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা হয়। ঝুংঃড়ষরপ উপরের অংশ এবং উরধংঃড়ষরপ নিচের অংশ। ঝুংঃড়ষরপ সাধারণত ১৩০ থেকে ১৪০ এর নিচে থাকে। এবং উরধংঃড়ষরপ ৯০ এর নিচে থাকে। যদি এর বেশি হয় তখনই রোগীকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
বিভিন্ন কারণকে উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী করা হয়। এর বিরাট অংশই বংশগত। এরপর আসে সিগারেট, অতিরিক্ত ওজন, লবণ বেশি খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা, দুঃশ্চিনত্মা, বয়োঃবৃদ্ধি, অতিরিক্ত মদ সেবন, কিডনি ও গ্রন্থির নানাবিধ রোগ। বেশির ভাগ রোগীর কোন উপসর্গ থাকে না। রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেলেই কখনও কখনও রোগীর নিম্নোক্ত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন : মাথাব্যথা, অবসাদ, চোখে ঝাপসা দেখা, বুক ব্যথা বা পড়হভঁংরড়হ (বিভ্রানত্মি)। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগই জানেন না যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। তাই যাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে তারেদ নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত। যাদের বংশগতভাবে ডায়বেটিস, অতিরিক্ত ওজন, কিডনির রোগ বা হরমোনজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগ আছে, বয়স সচরাচর ত্রিশ পার হলেই নিয়মিত রক্তচাপ মাপার রেওয়াজটা শুরম্ন করা ভাল।
অনিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন রকমের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যেমন-পড়ৎড়হধৎু ধৎঃবৎু ফরংবধংব, যবধৎঃ ভধরষঁৎব। তাছাড়াও রয়েছে মসত্মিষ্কে রক্তৰরণ, কিডনির রোগ, চোখের রোগ, গর্ভকালীন খিঁচুনি। এসব জটিলতা থেকে বেঁচে থাকতে হলে সময়োপযোগী চিকিৎসা অনিবার্য। একটি নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম, ওষুধের সমন্বয় একটি কার্যকরী পদৰেপ। যারা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী তাদের জন্য ওজন কমানো জরম্নরী। দেখা গেছে প্রতি দশ কিলো ওজন কমালে গড়পড়তা দশ মি.মি. রক্তচাপ কমতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করা ও বেশি করে শাকসবজি ও ফল খাওয়া উচিত।
কারণ এসব খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। লবণ কম খাওয়া, দিনে এক চামচের কম পরিমাণ। নিয়মিত ব্যায়াম। সপ্তাহে কয়েকদিন কমপৰে আধঘণ্টা হাঁটা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। ওষুধ শুরম্ন করার পর ডাক্তারের ভড়ষষড়-িঁঢ় এ থাকা উচিত। কারণ রক্তচাপ কমিয়ে তার প্রার্থিত লৰ্যে পেঁৗছাতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
ঋড়ষষড়-িঁঢ় পধৎব কেন দরকারি? এইটুকু নিশ্চিত করতে যে আপনার রক্তচাপ একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আছে। আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হন তবে সেৰেত্রে আপনার রক্তচাপ একটু বেশি কমিয়ে আনতে হবে। যেমন ধরম্নন, ঝুংঃড়ষরপ ১২০ থেকে ১৩০ আর উরধংঃড়ষরপ ৮০'র মতো। ঋড়ষষড়-িঁঢ় ারংরঃ-এর আরেকটা সুবিধা হলো যে সংবেদনশীল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হৃদপিন্ড, চোখ, মগজ বা কিডনি উচ্চ রক্তচাপের কারণে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা। সেই সাথে রক্তের চর্বির মাত্রা এবং চিনির পরিমাণ দেখে নেয়া। কারণ এরা বাড়তি জটিলতার সৃষ্টি করে।
ডা. মোসাদ্দেক আহমদ
কনসালটেন্ট নেফ্রোলজিস্ট
স্কয়ার হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা
No comments