স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্র বিকাশে অপরিহার্য- ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি
উৎসব-আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে উদ্যাপিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী। এ অনুষ্ঠানের আলোচনাসভায় বক্তারা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনমতের প্রতিফলন অপরিহার্য।
আর জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। একে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাই গণতন্ত্রের বিকাশে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দু’দিন চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। আয়োজনের শেষ দিন বিভাগের শিক্ষক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এক মিলনমেলায় মিলিত হন। দিনভর নাচ, গান ও নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে টিএসসির প্রাঙ্গণ।সকালে বিভাগের নতুন শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের অগ্রায়নের পর বিভাগীয় চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আখতার সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অংশ নেন বিভাগের সাবেক ছাত্র ও প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা ও বিভাগের বিভিন্ন সময়কালের শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, দেশে অতীতে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গণমাধ্যম বন্ধ করা হতো, যা এখন কল্পনা করা যায় না। গণতন্ত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম শাসন ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক ও জনমত প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ‘গণমাধ্যম’। গণতন্ত্র বিকাশে গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন গণমাধ্যম সার্চ লাইটের আলোকের মতো। এটির আলো ছড়িয়ে মানুষের মাঝে বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। তাই গণমাধ্যম আজ অপরিহার্য।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, গণতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানারের অন্যতম মূলনীতি। বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট মানুষের সেই স্বাধীনতা দেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে গণমানুষের সম্পৃক্ত বাড়ছে। প্রকাশনা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে পাঠক সংখ্যা। তিনি গণমাধ্যমের আজকের পর্যায়ে পৌঁছানোর পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গণমাধ্যমই গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে। গণমাধ্যম স্বাধীন হলে আমাদের সে আশার প্রতিফলন করা সম্ভব। এ বিভাগ অতীতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সহায়তা করেছে, ভবিষতেও করবে। এ বিভাগ দেশের সাংবাদিকতার নিউক্লিয়াস। এ বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে একটি পরিবার। ভবিষ্যতেও সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন। তার সঙ্গে সঙ্গে একে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে সংবাদপত্রের অনেকগুলোই বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে।
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসা তাঁর সাংবাদিকতা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম তখন এটা ছিল মিশন। পরে এটা হয়ে যায় প্রফেশন। এখন সাংবাদিকতা ব্যবসার ক্ষেত্র। সংবাদ সের দরে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি যখন সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন তখন এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করতেন যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে ভুলে যেতে হবে। কেননা এ বিভাগের শিক্ষার প্রতি তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন না- এমন স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বিভাগ। আমি বিভাগের শিক্ষাকে এখন এতটাই পছন্দ করতে শুরু করেছি যে, আগের কথাগুলো আমি তুলে নিয়েছি। আমি আমার সন্তানকেও এখানে পড়িয়েছি।
No comments