আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আরণ্যকের ৪০ বছর পূর্তি উসব শুরু- সংস্কৃতি সংবাদ
শনিবার শীতের বিকেল। দারুণ আনন্দময় পরিবেশের দেখা মিলল শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার বারান্দায়। স্বতঃস্ফূর্ত নাচ-গান ও অভিনয়ে মাতোয়ারা নাট্যদল আরণ্যকের নাট্যকর্মীরা।
নাটকে নিবেদিত তরুণ-তরুণীরা কখনও বা সারি বেঁধে নাচছেন। আবার কখনও গাইছেন। মাঝে মাঝে উচ্চারিত হচ্ছে নানা মঞ্চনাটকের সংলাপ। এ যেন বাঁধনহারা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অবারিত প্রকাশ। আর এমন দৃশ্যমালার উপলক্ষ আরণ্যকের প্রতিষ্ঠার চার দশক পূর্তি। সদ্যস্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে গড়া নাটকে দলটি সময়ের বহমানতায় পেরিয়েছে চল্লিশটি বছর। এ সাফল্যের উদ্যাপনে শুরু করল আরণ্যকের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব। উৎসবের সেøাগান নতুন সাহসী পৃথিবীর জন্য।নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে গত ৪০ বছরে প্রয়াত মঞ্চনাটকের কৃতী নাট্যজনদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে শুরু হয় আয়োজন। এরপর মশাল জ্বালিয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান। উদ্বোধনের পর পর বারান্দায় রাখা বায়োস্কোপে চোখ রেখে যেন শৈশবে ফিরে গেলেন হাবিবুর রহমান। এ সময় অন্য অতিথিরাও তাঁর সঙ্গে দেখে নেন রঙিলা বায়োস্কোপ। বায়োস্কোপ দেখা শেষে নাট্যশালার লবিতে আরণ্যক নাট্যদলের চার দশকের মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ভারতের ত্রিপুরার নাট্যজন শুভাষ দাস।
নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে বসেছিল উদ্বোধনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এতে উদ্বোধকের সঙ্গে অতিথি ছিলেন আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও ভারতের নাট্যজন মনোজ মিত্র। সভাপতিত্ব করেন আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক মামুনুর রশীদ। আরণ্যক একটি দলের নাট্যকথা শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।
উদ্বোধনী পর্বের একটি চমৎকার আয়োজন ছিল নাট্যকার ও নির্দেশকদের সংবর্ধনা প্রদান। দেশের মঞ্চনাটকের কৃতীয় চল্লিশ নাট্যকার ও নিদের্শককে দেয়া হয় এ সংবর্ধনা। সংবর্ধনাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন আতাউর রহমান, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, মান্নান হীরা, খালেদ খান, মাসুম আজিজ, গাজী রাকায়েত, সুদীপ চক্রবর্তী, ত্রপা মজুমদার, আজাদ আবুল কালাম, অনন্ত হীরা, তৌকীর আহমেদ, গোলাম সারোয়ার, আশীষ খন্দকার, ইসরাফিল শাহীন, জামালউদ্দীন হোসেন, ফয়েজ জহির ও ইনামুল হক প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানিকতা শেষে শিল্পকলা একাডেমীর খোলা মাঠে ছিল লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শো। শব্দ ও আলোর মজার খেলায় নৃত্যের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয় ‘আরণ্যকের চার দশক’ শীর্ষক এ প্রদর্শনী। সব শেষে নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত দলটির জনপ্রিয় প্রয়োজনা রাঢ়াঙ।
৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনের এ উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় থাকবে নাটকের প্রদর্শনী। আজ বিকেলে থাকবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পরিবেশনা। সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হবে নাটক ‘এবং বিদ্যাসাগর’। সোমবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ‘ময়ূর সিংহাসন’। মঙ্গলবার পরিবেশিত হবে হংকংয়ের নাট্যদলের পরিবেশনা ‘চ্যাগোর ইন চায়না’।
স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্ন দেখি ॥ বাকশিল্পী রফিকুল ইসলাম দ্বিতীয় একক আবৃত্তি সন্ধ্যা হয়ে গেল শনিবার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত এ আবৃত্তিসন্ধ্যার শিরোনাম ছিল স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্ন দেখি। মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের ২৩ বছর পূর্তিতে এ আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই সংগঠনটি থেকে প্রকাশিত আবৃত্তি এ্যালবাম ‘হৃদয়ে চৈতন্য বাজে’র মোড়ক উন্মোচন করেন আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। এরপর শুরু হয় রফিকুলের আবৃত্তি। তিনি একে একে ১৭ জন কবির ২৫টি কবিতা আবৃত্তি করেন।
শিশু চলচ্চিত্র উসবের সমাপ্তি ॥ এক সপ্তাহ ধরে সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বর ছিল শিশুদের কলকাকলিতে মুখর। উপলক্ষÑ চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। শুক্রবার শেষ হয়ে গেল এ উৎসব। এদিন প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের পাশাপাশি ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও।
মুজিব এক মহাকাব্যের নাম কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা ॥ শনিবার প্রকাশিত হলো ইসমাইল হোসেনের কাব্যগ্রন্থ ‘মুজিব এক মহাকাব্যের নাম’। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বইটির প্রকাশনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. একে আজাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বারি সিদ্দিকীর গানে মুগ্ধ শ্রোতা ॥ গীতিকবি শহীদুল্লাহ্ ফরায়াজীর গানে রোমাঞ্চিত হওয়ার বাসনা শ্রোতাদের বহু দিনের। সে বাসনার যেন প্রকাশ ঘটল শনিবার সন্ধ্যায় বারি সিদ্দিকীর কণ্ঠে ধ্বনিত সেই গান শুনে শ্রোতাদের। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ভর্তি শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কণ্ঠের গানে মহিত হয়ে পড়েছিল।
No comments