উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক এবং কর ও সংসদীয় কালচার- স্বদেশ রায়
উন্নয়ন ফোরামের দুই দিনব্যাপী বৈঠক হয়ে গেল। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সার্বিক কোন ধরনের আলোচনা হয়েছে তার বিসত্মারিত এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
তবে সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্ট এসেছে_ অনেক কিছু প্রকাশিত হয়েছে সেখানে। দেখা যাচ্ছে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে বেশ কিছু সংস্কারের কথা এসেছে। আর তার কিছু কিছু েেত্র যে সংস্কার দরকার সেটা আমাদের প্রতিনিধিরা স্বীকার করেছেন। যেমন কর আদায়ের েেত্র সংস্কারের কথা এসেছে। উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, আমাদের কর আদায়ের পদ্ধতিকে আরও সংস্কার করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও স্বীকার করেছেন, আমাদের অভ্যনত্মরীণ সম্পদ বাড়ানো দরকার। অর্থাৎ তিনিও স্বীকার করেছেন, কর আদায়ের পদ্ধতি সংস্কার ও আরও কর আদায় দরকার। কর আদায় প্রসঙ্গে পেশাগত কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য, সাবেক ডেপুটি স্পীকার, অর্থনীতিবিদ আলী আশরাফ এমপি'র সঙ্গেও। দুই জনই একই কথা বলেন। তাঁদের বক্তব্য, আমাদের কর আদায়ের আওতা বাড়ানো দরকার। পদ্ধতি আধুনিক করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতি নিয়ে যাঁদের ছোট মাপের চিনত্মা করার মতা আছে তাঁরাও কিন্তু মনে করেন অভ্যনত্মরীণ সম্পদ বাড়ানোর স্বার্থে দেশে কর আদায়ের আওতা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে এখন শুধু বড় শহরগুলো নয়, গ্রামেও অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে। কিন্তু কর আদায়ের আওতাটি সে অবধি নয়।সত্যি বলতে কী, কর দেয়া ও কর আদায় এখনও আমাদের দেশে কালচারে পরিণত হয়নি। এমনকি এ বিষয়টি সামনেও আসে না কখনও। দেশে প্রথমবারের মতো কর দেবার বিষয়টি সামনে আসে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তখন দেখা গেল দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ঠিকমতো কর দেননি। এমনকি আরও আশ্চর্য, যে অর্থমন্ত্রী দেশের মানুষকে কর দেবার জন্য আহ্বান জানান সেই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নিজেও তাঁর সব কর পরিশোধ করেননি। তাঁর কাছেও কালো টাকা পাওয়া গেল। এমনিভাবে তখন সরকার যার প্রতি নজর দেয় দেখা যায় সেখানে কর না দেবার একটি ঘটনা আছে। তবে একটি বিষয় ঠিক যে, এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বা বড় ব্যবসায়ীদের কর দেবার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কর না দেবার বিষয়টি মেলানো ঠিক নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কর না দেবার বিষয়টি অনেকটা একপীয়। সেখানে সরকারের ঘাড়ে দোষের বোঝা চাপানো যায় না। কারণ, সরকার তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়। তারপরেও দেশে কর ফাঁকি দেবার সুযোগ থাকাতে কর ফাঁকি দেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ যে কর দেয় না এটার মূল কারণ খুঁজতে গেলে অনেক কিছু বের হবে। দেশের সাধারণ মানুষের কর না দেবার অন্যতম কারণ আমাদের দেশে সরকার এখনও কর দেবার কালচার গড়ে তুলতে পারেনি। কর দেবার কালচার গড়ে ওঠেনি বললেই আমাদের এখানে বোঝানো হয়, মানুষকে যে কর দিতে হবে এটা নিয়ে সরকার মানুষকে বোঝাতে সম হয়নি। মানুষকে যথেষ্ট সচেতন করতে পারেনি। এর জন্য যথেষ্ট প্রচার হয়নি। আমাদের সরকারও এটাতেই বিশ্বাস করে। তাই দেখা যায়, কর দেবার মওশুম এলেই সরকার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে। মানুষকে কর দিতে আহ্বান জানায়। এখানেই সব কাজ সীমাবদ্ধ থাকে। কেউ কেউ মনে করেন, এই প্রচার আরও বাড়ালে এবং সরকার আরও কঠোর হলে মানুষের কর দেবার প্রবণতা আরও বাড়বে। কিন্তু সরকার যে কঠোর হলেও কর দেবার প্রবণতা বাড়ে না সেটা ইতোমধ্যে এ দেশে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কারণ, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর কঠোরতার চরম প্রকাশ দেখিয়েছিল। কিন্তু তাতে দেশে কর দেবার প্রবণতা শতকরা এক ভাগও বাড়েনি। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যতটা কঠোর হয়েছিল, কোন ভদ্র, সভ্য সরকারের প েওই ধরনের কঠোর হওয়া বর্তমান যুগে সম্ভব নয়। সেটা ওই সম্রাটদের রাজস্ব আদায়ের যুগে হলে হয়ত হতো। তাই কঠোরতা দিয়ে এই কালচার গড়ে তোলা যাবে না। সত্যি বলতে কঠোরতা দিয়ে কখনও কোন কালচার গড়ে তোলা যায় না। অন্যদিকে প্রচার দিয়েও মানুষকে ততটা সচেতন করা যায় না। প্রচারে যদি সব হতো তাহলে এতদিনে আরও অনেক েেত্র অনেক কিছুই সম্ভব হতো। কারণ তারাও প্রচার কম করে না। বাসত্মবে কর দেবার কালচার গড়ে তুলতে গেলে কর দেয়াটা যে মানুষের কাছে উপযোগী এ কালচারটি গড়ে তুলতে হবে। এবং এই উপযোগ যাতে দুই পরে কাছে সমান হয় সেটা গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ কর পেয়ে সরকার যেমন অভ্যনত্মরীণ সম্পদ রাষ্ট্রের জন্য পাচ্ছে, তেমনি যিনি কর দিচ্ছেন তিনি যে করের বদলে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমপরিমাণ, কখনও বা বেশি সেবা পাচ্ছেন এটা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যত বেশি সেবা নিশ্চিত করতে পারবে তত বেশি সে কর আদায়ে সম হবে। যেমন এ মুহূর্তে দেশে প্রয়োজন করের আওতা বাড়ানো। অর্থাৎ শহর থেকে গ্রামে করের আওতা নিয়ে যাওয়া। গ্রামেও এখন অর্থনীতির একটি স্রোত প্রবাহিত। শহরে যেমন বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিং উঠছে, গ্রামেও এখন বিশাল বিশাল ইমারত হচ্ছে। শহরে যেমন প্রতিদিন এক কোটি, দু' কোটি টাকা নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় নামছে, গ্রামেও এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন এক কোটি, দুই কোটি টাকার জমি বা কৃষি পণ্য লেনদেন করছেন একক কোন না কোন ব্যক্তি। তাই দেশের অভ্যনত্মরীণ সম্পদ সংগ্রহের আওতা বাড়াতে গেলে কর আদায় গ্রাম অবধি নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এ কাজটি খুবই কঠিন। বিশেষ করে যে কোন সরকারের জন্য প্রথম ভয়, তাদের ভোট হারানো। সরকার গঠনের মূল শক্তি এই গ্রামের মানুষ। তাদের ওপর করারোপ করা হলে তারা যদি বিগড়ে যায় তাহলে ওই সরকার বা সরকারী দলের সমূহ তি। তাই এ সাপের লেজে হাত দিতে খুব কম সরকার সাহসী হবে। তবে কোন সরকার যদি সত্যি অভ্যনত্মরীণ সম্পদ আহরণ করে দেশের অর্থনীতি বির্নিমাণ করতে চায় এবং সেজন্য কর আদায়ের কালচার গড়তে চায় তাহলে তার জন্য এ কাজটি এতটা কঠিন নয়। কর আদায়ের আগে তাকে কর আদায়ের কালচার গড়তে হবে । এই কালচারের প্রথম শর্ত_ কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে, সরকার মানুষকে সেবা দিচ্ছে। মানুষ যদি তার বিপদে সরকারের কাছে চিকিৎসার নিশ্চয়তা পায়। মানুষ যদি তার সনত্মানের শিার নিশ্চয়তার জন্য সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পায়। তার ফসল উৎপাদনের জন্য সব ধরনের সুবিধা সরকারী মাধ্যম থেকে পায়। সরকার যদি ব্যাংক বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যায়। আর এসব সেবা পেতে মানুষকে যদি তার বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিতে হয়_ তাহলে সেখানে মানুষ এক পর্যায়ে স্বেচ্ছায় কর দিতে এগিয়ে আসবে। বার্ধক্যের চিকিৎসার জন্য যৌবনে সামান্য কর দিতে অনেকে এগিয়ে আসবে। নিরাপদ একটি শিশু বেড়ে ওঠার স্বার্থে শিশুর জন্মের আগে থেকে সামান্য কর দিতে সকলে এগিয়ে আসবে। এভাবে সেবা ও অর্থ এই দুই-এর বিনিময়ের মাধ্যমে কর আদায়ের নয়, কর দেবার কালচার গড়ে তুলতে হবে। এটা হয়ত এক বছরে বা দুই বছরে হবে না। তবে সরকারকে এ পথে যেতে হবে। দেশকে স্বনির্ভর করতে হলে এ পথ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
কর আদায়ের পাশাপাশি উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে আরো অনেক কথা এসেছে সহযোগীদের প থেকে। সেখানে তারা আমাদের সংসদ ও সংদীয় কমিটি নিয়ে কথা বলেছেন। বাসত্মবে আমাদের সংসদ ও সংসদীয় কমিটি দুটোরই চরিত্র বদলাতে হবে। গত আওয়ামী লীগ আমলেও সংসদীয় কমিটিগুলো শক্তিশালী করার একটা চেষ্টা ছিল। বিএনপি বা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সেখান থেকে পিছে টেনে নিয়ে আসা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলে আবার সেটাকে এগিয়ে নেবার একটি চেষ্টা করা হয়েছে। এবার অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা, সাবেক আমলা ও ব্যবসায়ী যাঁরা পার্লামেন্টে এসেছেন তাঁদেরকে বেশ কয়েকটি সংসদীয় কমিটির নেতা বানানো হয়েছে। এদের ভিতর অনেকে সাবেক মন্ত্রী। একটি দেশে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র চলতে থাকলে এটা ঘটে। দেখা যায়, নতুনরা মন্ত্রী হয়েছেন। পুরাতন মন্ত্রীরা সংসদীয় কমিটির প্রধান হয়েছেন। এতে সংসদ ও নির্বাহী বিভাগ দুই সুবিধা পায়। রাজনীতিরও বিকাশ ঘটে। এবারের সংসদীয় কমিটিগুলো ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা অনেক কাজের জন্য পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। তবে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয়, তাদের অনেক কাজের ভিতর কিন্তু দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। এক, অনেকে মন্ত্রী হতে পারেননি বলে একটা ােভ আছে। ওই ােভের একটি বহির্প্রকাশের আগুন তাদের কাজের ভিতর দেখা গেছে। পার্লামেন্ট সংক্রানত্ম কাজ সব থেকে ঠা-া মাথার কাজ। শানত্মিপূর্ণ মাথা এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতা হচ্ছে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের মূল চাবিকাঠি। এখানে ােভ কিন্তু মানায় না। এটাও তো ঠিক, ােভ দিয়ে কখনও কোন ভাল কাজ হয় না। তাছাড়া সংসদীয় কমিটিতে অনত্মত এমন কয়েকজন গেছেন, যাঁদের জীবনের প্রাপ্তি অনেক। তাই একবার মন্ত্রী হতে পারেননি বলে তাঁদের ভিতরে ােভ বা হতাশা থাকার কথা নয়, উচিতও নয়। বরং তাঁদের অভিজ্ঞতা, তাঁদের প্রজ্ঞা ােভের বাইরে এসে মননে ও চিনত্মায় রূপ নিলে সেটা সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হতে সহায়তা করবে। অন্য যাঁরা নতুন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন তাঁরা তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারবেন। তবে একটি বিষয়, আমাদের সংসদীয় কমিটিগুলোর প্রধান বা মেম্বার নিয়োগে সব সময় যোগ্যতাকে গুরম্নত্ব দেয়া হয় না। বেশি েেত্র শীর্ষ নেতার কাছাকাছি যেতে পারেন এমন এমপি এবং দলের সিনিয়র নেতারা এ পদ পান। সংসদীয় কমিটি জোরদার করতে হলে, কার্যকর করতে হলে শিার বিষয়টি গুরম্নত্ব দিতে হবে। কারণ, সংসদীয় কমিটি সংসদীয় গণতন্ত্রের রক্তসংবহনতন্ত্রের একটি অংশ। সংসদের এই অংশের সঙ্গে যদি শিার ও দৰতার যোগ না ঘটে তাহলে সংসদের এখানে রক্ত চলাচল বাড়ানো সম্ভব নয়। আমাদের সংসদের রক্ত চলাচল বাড়াতে তাই সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরও গঠনমূলক হতে হবে। কোন ােভ থেকে নয়, কোন হতাশা থেকে নয়, এমনকি অজ্ঞতা থেকেও নয়_ বিষয়টি বুঝে গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদেরকে সিদ্ধানত্ম নিতে হবে। যেমন সংসদীয় কমিটির একটি বড় সময় ব্যয় করতে দেখা গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের ব্যক্তিদের পিছনে। এর কতটা সুফল গণতন্ত্র পাবে সেটা হিসেব করতে হবে। তবে ওই সব ব্যক্তির থেকে সংসদীয় কমিটির কাছে আরও গুরম্নত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিল কোন্ পথে সংসদ এগুলে সংসদ এবং সংসদীয় রাজনীতি সামরিক কালচার থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
যেমন আমাদের সংসদ এখনও ্তু সামরিক কালচারে আবদ্ধ। কারণ, প্রথমত আমাদের রাজনীতিবিদরা সংসদকে সম্মান করেন না। অধিকাংশ সংসদ সদস্য সংসদে উপস্থিত থাকতে চান না। সংসদকে এ ধরনের অবজ্ঞা করার কালচারটি এসেছে সামরিক গণতন্ত্রের ভিতর দিয়ে। সামরিক সরকাররা তাদের সামরিক শাসনের বৈধতা দেবার জন্য একটি রাবার স্ট্যাম্প সংসদ তৈরি করত। ওই সংসদে কেউ উপস্থিত হলো কি না হলো তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। তাছাড়া দেশ চালাতে ওই সংসদের কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। বরং সংসদটি আচরণগতভাবে কার্যকর হলে সামরিক সরকার তিগ্রসত্ম হতো। দেশে কোনরূপ গণতান্ত্রিক কালচার সামরিক সরকারের জন্য তিকর। তাই তারাও ইচ্ছে করে সংসদকে অকার্যকর রাখত। দেশ চালাত বেসামরিক পোশাক পরা সামরিক সরকার ও কতিপয় সেনা অফিসার। তাদের নির্দেশে সবকিছু হতো। সংসদ থাকত নামকাওয়াসত্মে। সেখানে উপস্থিতিও থাকত কম। সেই সামরিক কালচারের ধারাবাহিকতা এখনও আমাদের সংসদে বর্তমান। মহাজোট, চারদলীয় জোট কেউই এ কালচার থেকে বের হতে পারেনি। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সংসদ বয়কটও তো আছেই। অন্যদিকে সংসদে যখন সব দল উপস্থিত থাকে তখন যে আলোচনা হয় তারও অধিকাংশ কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের কোন কাজে আসে না। রাষ্ট্র পরিচালনার কোন কাজে আসে না। পরনিন্দা, পরচর্চা এগুলো সংসদের আলোচনার বিষয় নয়। এগুলোর একানত্ম যদি প্রয়োজন পড়ে সামরিক শাসক-লাঞ্ছিত এ দেশে, তাহলে সেটা মাঠে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তবে সত্যি অর্থে উচিত হলো এখান থেকে বেরিয়ে আসা। এখান থেকে যত দ্রম্নত রাজনীতি বেরিয়ে আসতে পারবে, রাজনীতি যত বেশি কল্যাণধর্মী ও অর্থনৈতিক কর্মসূচীনির্ভর হবে ততই গণতন্ত্র সুসংসহত হবে। যেমন গত কয়েকদিন যাবত পার্লামেন্টে যে আলোচনা চলছে, এ ধরনের আলোচনায় সংসদীয় গণতন্ত্রের খুব কমই লাভ হবে। বরং তিই হচ্ছে বেশি। যাঁরা আলোচনা করছেন তাঁদের অধিকাংশের বিষয়বস্তু ও আলোচনা থেকে তাঁদের কালচার বোঝা যাচ্ছে। এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা কিন্তু এটাই বলছেন। সংসদের আলোচনাকে নির্দিষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের ও কর্মসূচীর ওপর আনতে হবে। পিছনের বেঞ্চে যাঁরা বসেন তাঁদের অধিকাংশই সংসদ এবং গ্রামের স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যের পার্থক্য বোঝেন না। তাঁরা যাতে বুঝতে পারেন কেন তাঁরা সংসদ সদস্য, কী তাঁদের দায়িত্ব, সংসদে তাঁদের কী বলতে হবে_ এ বিষয়গুলোতে সংসদ সদস্যদের যোগ্য করতে হবে। এ যোগ্যতা অর্জনের জন্য উন্নয়ন সহযোগীরা যথেষ্ট অর্থও দেয়। সেগুলোর প্রকৃত ব্যবহার করেই সংসদকে কার্যকর করার জন্য এ যোগ্যতা অর্জনের পথে যাওয়া একানত্ম দরকার। উন্নয়ন সহযোগীরা যে সময় দেশে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক করেছে, ওই সময়ে সংসদে যে আলোচনা হয়েছে তার অধিকাংশ দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স
No comments