শুধু বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা গেলেই ॥ বুড়িগঙ্গার ৯০ ভাগ দূষণ কমে যাবে- উৎসমুখ যমুনা থেকে মাত্র দু'ভাগ পানি আনা গেলে আগের অবস্থায় ফিরবে বুড়িগঙ্গা ॥ বিশেষজ্ঞদের অভিমত
যমুনা নদীতে ব্রিজ তৈরির কারণে সে সময় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখে একটি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বুড়িগঙ্গার পানির প্রবাহ অনেক কমে যায়।
সেই থেকে নদীতে নিৰিপ্ত বর্জ্য মাটির সঙ্গে মিশে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত করছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে বুড়িগঙ্গার এ অবস্থা ছিল না। বন্ধ হয়ে যাওয়া এই মুখটি চালু করতে পারলে এবং যমুনা থেকে মাত্র ২ ভাগ পানি আনতে পারলে বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বুড়িগঙ্গা রৰায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদৰেপ নিয়েছে। প্রাথমিক পদৰেপ হিসেবে নদী থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরম্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর এক কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য অপসারণ করা হবে। প্রাথমিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বড় ধরনের প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বর্জ্য অপসারণের জন্য ২টি ক্রোকোডাইল ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিল্পকারখানার দূষণ রোধ করার জন্য ইতোমধ্যে একটি কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট পস্নান্ট স্থাপনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। জাহাজগুলো থেকে বর্জ্য ফেলা বন্ধে আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই সরকারের পৰ থেকে এসব সিদ্ধানত্ম নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন বিআইডবিস্নউটিএ'র নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবার পৰ থেকে বুয়েটের আইটিএন সেমিনার রম্নমে বুড়িগঙ্গার বর্জ্য, দূষণ ও জীবন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। আলোচনাসভায় তারা মত দেন যে, শুধু বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে পারলে নদীর দূষণ ৯০ ভাগ কমে যাবে। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হলে উজানের পানি প্রবাহ সচল রাখতে হবে। শিল্পকলকারখানার বর্জ্য ফেলা বন্ধে ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দেন তারা। এর পাশাপাশি হাজারীবাগ থেকে শিল্পকারখানা দ্রম্নত সরিয়ে নেয়ারও আহ্বান জানান হয়। সরকার যে কাজ চালু করে তা অব্যাহত রেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার এবং মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে গুরম্নত্ব আরোপ করা হয়। পাশাপাশি তারা অভিযোগ করে বলেন, নদীর নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর সঙ্গে সংশিস্নষ্ট সংস্থা যেমন বিআইডবিস্নউটিএ, সিটি কর্পোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা জেলা প্রশাসন এ কাজ নিজেদের নয় বলে সবসময় দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। ফলে কোন সময়ই দূষণ দখল রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত তিন দশকে মানুষের নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা এবং কর্তৃপৰের অবহেলায় নদীটি হয়ে উঠেছে বর্জ্যের ভাগাড়। দখল হয়ে গেছে বিসত্মীর্ণ তীরভূমি। বিশেষজ্ঞরা বুড়িগঙ্গার দূষণ নিয়ে সংসদে আলোচনার আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়নের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে পারলে ৯০ ভাগ দূষণ বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ইটিপি পস্নান স্থাপন করা জরম্নরী। পাশাপাশি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। অধ্যাপক আবুল বাসার বলেন, বুড়িগঙ্গার প্রবাহ বাড়াতে হলে যমুনা নদীতে এর উৎসমুখ সচল রাখতে হবে। নদীতে বর্জ্য না ফেলার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যে কাজ শুরম্ন করেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে বর্জ্য অপসারণ কাজের উন্নতি-অবনতি পর্যালোচনা করা জরম্নরী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জসিমউদ্দিন বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হলে নদীকে সচল করা প্রয়োজন। আর বুড়িগঙ্গার ফো বাড়াতে হলে উজান থেকে পানি আনার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্জ্য অপসারণে তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে জোর দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নুরজাহান সরকার বলেন, বুড়িগঙ্গাকে এখন আর জীবিত নদী বলা যায় না। নদীর দূষণ যে পর্যায়ে পেঁৗছেছে তাতে সেখানে মাছসহ কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। নদীতে মাছ থাকলে মাছ শিকারি পাখি গাঙচিল এবং ডলফিনের দেখা সহজেই মেলে। তিনি সম্প্রতি গাঙচিল দেখার বিষয়ে বলেন, সম্ভবত ড্রেনেজ দিয়ে ভেসে আসা মাংসের টুকরো খাওয়ার লোভেই কিছু গাঙচিল এসে থাকতে পারে। মাছ না থাকার কারণে এসব পাখিও তাদের অভ্যাস বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, বুড়িগঙ্গা সচল না হলে ঢাকা অচল হয়ে যাবে। দূষণ রোধে একাধিক আইন থাকলেও কোন আইনেরই প্রয়োগ নেই। তিনি বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে সংসদের স্থায়ী কমিটির ভূমিকা রাখার ব্যাপারে গুরম্নত্ব আরোপ করে বলেন, বিষয়টি সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এএমএম শফিউলস্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।
No comments