মিসর সংকট উপাখ্যান by সুভাষ সাহা
চরম অরাজক পরিস্থিতির আশঙ্কার মুখে মিসরের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে বৃহস্পতিবার ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সমর্থক ইসলামী ব্রাদারহুড ও ইসলামী পার্টিগুলোর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে উদারতাবাদী,
সংস্কারবাদী ও সেক্যুলার সমর্থকদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্য নিয়ে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বশেষ পদক্ষেপটি নেওয়া হয়ে থাকবে। প্রেসিডেন্ট মুরসি একতরফাভাবে ডিক্রি জারি করে ১৫ ডিসেম্বর সংশোধিত সংবিধানের ওপর গণভোট আহ্বান করার পর এর বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিবাদী ও বিচারকসহ বিভিন্ন পেশার গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষের মানুষরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। মিসরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার তাহরির স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের চারপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকলে মুরসি সমর্থক ইসলামপন্থিরা বুধবার রাতে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষে এ নিবন্ধ লেখার সময় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ছয় ব্যক্তি নিহত এবং সাতশ' আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মুরসি সমর্থকরা যেহেতু ক্ষমতাবান এবং যেহেতু তারা ধর্মীয় অনুশাসনের প্রাধান্য সংবলিত নতুন সংশোধিত সংবিধানের ওপর গণভোট করে ভবিষ্যতে মিসরকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই এদের পক্ষ থেকেই হামলায় উস্কানি দেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই হামলা এবং তড়িঘড়ি করে বিরোধীদের অপ্রস্তুত অবস্থায় রেখে ক্ষমতার ওপর ইসলামপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার ফলে মিসর একটা স্থায়ী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। রাস্তায় এ ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে জিইয়ে রেখে মুরসির পক্ষে নিরুপদ্রবে দেশ শাসন অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। আর তখন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বাস্তবে রূপ পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। অর্থাৎ নতুন আদলে সেনাবাহিনী মিসরের রাজনীতিতে নাক গলানো সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে সেক্যুলারিস্ট কোনো কোনো নেতা বলা শুরু করেছেন, দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র রুখতে গিয়ে প্রয়োজনবোধে তারা গণতন্ত্রকেও সাময়িক সময়ের জন্য বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। এ এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তবে আহ্বান জানালেই তো আর সেনাবাহিনী সার বেঁধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসবে না। তার জন্য তাদেরও অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থের জোগানদাতা আমেরিকার সমথর্ন জোগাড় করার মতো আরও কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে। সেনাবাহিনীর সে সামর্থ্য কি এখন রয়েছে? মনে হয় সেনাবাহিনীর পক্ষে আরেকবার সরাসরি ক্ষমতা দখল করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুবাদে ক্ষমতার ওপর তাদের প্রভাব অনেকটা বেড়ে যাবে। এদিকে বিরোধী নেতা (আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার সাবেক প্রধান) এল বারাদি এক সংবাদ সম্মেলনে গণভোট বন্ধ না করলে সাধারণ ধর্মঘটসহ অন্য অ্যাকশন কর্মসূচিতে নামার হুমকি দিয়েছেন।
প্রগতিবাদীদের সঙ্গে আপস করতে চাইলে মিসর যে কোনোভাবে ইসলামী মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে না সে প্রতিশ্রুতি মুরসিকে দিতে হবে। নারী অধিকার প্রদান এবং কড়া ইসলামী অনুশাসনের ধারাগুলোকে হয় বাদ দিতে হবে, না হয় আরও নমনীয় করতে হবে। সেনাবাহিনী ও বিচারকদেরও ছাড় দিতে হবে। এখানে কোনো একপক্ষকে ছাড় দিয়ে অপরপক্ষকে চটিয়ে স্থিতিশীলতা আনার চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র। অর্থাৎ একটা মাঝামাঝি অবস্থান নিতে হবে মুরসিকে। আপন কনস্টিটিউয়েন্সি ইসলামপন্থিদেরও সন্তুষ্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এই গোটা হাইপোথিসিসটি আদৌ থিসিসে পরিণত করা যাবে কি-না তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে। ওবামা মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের সঙ্গে সেক্যুলার ভাবধারা আনার সুযোগকে কি হাতছাড়া করতে চাইবেন? মিসর সংঘাতের পথ নেবে, নাকি সেখানে একটি ঐকমত্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটা দেখেই বলা যাবে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ারের কর্ণধারের মনোবাসনাটা কী?
হয় দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত, না হয় শান্তি_ এর যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে মিসরকে। কারণ, সুদীর্ঘকাল পর যখন মানুষ রাস্তার আন্দোলনের মাধ্যমে লৌহমানব মোবারককে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার কৃতিত্ব অর্জন করেছে, তখন সমঝোতা ছাড়া দমননীতি প্রয়োগ করে জনতার আন্দোলন-বিক্ষোভ বন্ধ করা যাবে না। এ ধরনের একটি ঝঞ্ঝাতাড়িত ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই স্টেকহোল্ডারদের কারও জন্যই সুখকর হবে না।
সুভাষ সাহা :সাংবাদিক
মুরসি সমর্থকরা যেহেতু ক্ষমতাবান এবং যেহেতু তারা ধর্মীয় অনুশাসনের প্রাধান্য সংবলিত নতুন সংশোধিত সংবিধানের ওপর গণভোট করে ভবিষ্যতে মিসরকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই এদের পক্ষ থেকেই হামলায় উস্কানি দেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই হামলা এবং তড়িঘড়ি করে বিরোধীদের অপ্রস্তুত অবস্থায় রেখে ক্ষমতার ওপর ইসলামপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার ফলে মিসর একটা স্থায়ী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। রাস্তায় এ ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে জিইয়ে রেখে মুরসির পক্ষে নিরুপদ্রবে দেশ শাসন অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। আর তখন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বাস্তবে রূপ পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। অর্থাৎ নতুন আদলে সেনাবাহিনী মিসরের রাজনীতিতে নাক গলানো সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে সেক্যুলারিস্ট কোনো কোনো নেতা বলা শুরু করেছেন, দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র রুখতে গিয়ে প্রয়োজনবোধে তারা গণতন্ত্রকেও সাময়িক সময়ের জন্য বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। এ এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তবে আহ্বান জানালেই তো আর সেনাবাহিনী সার বেঁধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসবে না। তার জন্য তাদেরও অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থের জোগানদাতা আমেরিকার সমথর্ন জোগাড় করার মতো আরও কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে। সেনাবাহিনীর সে সামর্থ্য কি এখন রয়েছে? মনে হয় সেনাবাহিনীর পক্ষে আরেকবার সরাসরি ক্ষমতা দখল করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুবাদে ক্ষমতার ওপর তাদের প্রভাব অনেকটা বেড়ে যাবে। এদিকে বিরোধী নেতা (আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার সাবেক প্রধান) এল বারাদি এক সংবাদ সম্মেলনে গণভোট বন্ধ না করলে সাধারণ ধর্মঘটসহ অন্য অ্যাকশন কর্মসূচিতে নামার হুমকি দিয়েছেন।
প্রগতিবাদীদের সঙ্গে আপস করতে চাইলে মিসর যে কোনোভাবে ইসলামী মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে না সে প্রতিশ্রুতি মুরসিকে দিতে হবে। নারী অধিকার প্রদান এবং কড়া ইসলামী অনুশাসনের ধারাগুলোকে হয় বাদ দিতে হবে, না হয় আরও নমনীয় করতে হবে। সেনাবাহিনী ও বিচারকদেরও ছাড় দিতে হবে। এখানে কোনো একপক্ষকে ছাড় দিয়ে অপরপক্ষকে চটিয়ে স্থিতিশীলতা আনার চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র। অর্থাৎ একটা মাঝামাঝি অবস্থান নিতে হবে মুরসিকে। আপন কনস্টিটিউয়েন্সি ইসলামপন্থিদেরও সন্তুষ্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এই গোটা হাইপোথিসিসটি আদৌ থিসিসে পরিণত করা যাবে কি-না তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে। ওবামা মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের সঙ্গে সেক্যুলার ভাবধারা আনার সুযোগকে কি হাতছাড়া করতে চাইবেন? মিসর সংঘাতের পথ নেবে, নাকি সেখানে একটি ঐকমত্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটা দেখেই বলা যাবে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ারের কর্ণধারের মনোবাসনাটা কী?
হয় দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত, না হয় শান্তি_ এর যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে মিসরকে। কারণ, সুদীর্ঘকাল পর যখন মানুষ রাস্তার আন্দোলনের মাধ্যমে লৌহমানব মোবারককে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার কৃতিত্ব অর্জন করেছে, তখন সমঝোতা ছাড়া দমননীতি প্রয়োগ করে জনতার আন্দোলন-বিক্ষোভ বন্ধ করা যাবে না। এ ধরনের একটি ঝঞ্ঝাতাড়িত ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই স্টেকহোল্ডারদের কারও জন্যই সুখকর হবে না।
সুভাষ সাহা :সাংবাদিক
No comments