কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য-হারিয়ে না যায় যেন
গ্রামবাংলায় এককালে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের প্রাচুর্য ছিল। খেটে খাওয়া পরিবারগুলো শুধু নয়, অবস্থাপন্ন মানুষরাও পুষ্টিগুণে গুণান্বিত কুড়িয়ে পাওয়া নানা খাদ্য দৈনন্দিন আহারের তালিকায় রাখতেন। পথের দু'পাশে বা ক্ষেতের ধারে, গ্রামের জঙ্গল বা বনাঞ্চলে অনায়াসে এসব খাদ্য উৎপাদিত হতো।
কচুশাক, চিড়াশাক, বতুয়াশাক, ঢেঁকিশাকের মতো মুখরোচক শাক তো বটেই, বনজ আলু, ওল ইত্যাদি সবজিও মিলত হাতের কাছেই। শুধু প্রাকৃতিকভাবেই নয়, গৃহস্থালির আনাচে-কানাচে, কিচেন গার্ডেনেও নানা আনাজ জন্মাত। দেশীয় জাতের কলাও ছিল সহজলভ্য। কালের বিবর্তনে কুড়িয়ে পাওয়া এসব খাবার হারিয়ে গেছে। তবে হারিয়ে যাওয়া এসব খাবারের জন্য সময় বা খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করলে চলবে না। শহরের বাজারে কুড়িয়ে পাওয়া শাক-সবজি উঠলে নিমেষে বিক্রি হয়ে যায়। এর চাহিদাও ব্যাপক। কিন্তু চাহিদা থাকলেও জোগান নেই। কেননা, বসতবাড়ির বিস্তারের সঙ্গে গ্রামের পতিত জমি, জঙ্গল, বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে। ফলে এসব খাদ্য-শাকসবজি জন্মানোর জায়গাই আর অবশিষ্ট নেই। হারিয়ে গেছে পুষ্টিগুণসম্পন্ন টাটকা খাবারগুলো। ভেষজগুণসম্পন্ন খাবারগুলো তো রীতিমতো দুর্লভ হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হলো, এসব শাক-সবজি কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব? বাস্তবতা বলে, ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। অনায়াসে যা জন্মাত তা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া রীতিমতো আয়াসসাধ্য হয়ে উঠেছে। তবে এটি হয়তো অসম্ভব নয়। বনজ নানা শাক-সবজির জন্য জায়গা ছেড়ে দিলেই এগুলো বেড়ে উঠবে আবার। খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারবে। তবে এসব খাদ্য নিয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজন আছে। এগুলোকে এক সময় অবজ্ঞা করা হতো; কিন্তু নতুন বাস্তবতায় বোঝা যাচ্ছে, মোটেও অবজ্ঞার বস্তু নয় এগুলো। বরং যত্ন করে কুড়িয়ে পাওয়া খাবার নিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। উৎসাহিত করার এমন ব্রত নিয়ে গাইবান্ধায় কুড়িয়ে পাওয়া খাবার রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন করল বারসিক নামের একটি সংস্থা। শুভ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। গ্রামের মানুষ নিশ্চয় বনজ শাক-সবজি বিষয়ে আরও উৎসাহী হবেন। আর এমন সচেতনতার উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া দরকার দেশব্যাপী। অঞ্চলভিত্তিক শাক-সবজি বিষয়ে মানুষকে নতুন করে জানানোও দরকার।
No comments