খাদ্য নিরাপত্তা-রাসায়নিক সন্ত্রাস বন্ধ করবে কে by ফেরদৌস আরা রুমী
বাঁচতে হলে খেতে হবে। অভুক্ত অবস্থায় ২-৩ দিনের বেশি কাটানো সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ খাবে কী? রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারগুলো ফরমালিন, হাইড্রোজ, কার্বাইড, টেক্সটাইল রঙ, স্যাকারিন ইত্যাদি রাসায়নিক মেশানো খাবারে ছেয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনে (২০১২) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০১১ সালে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে মোট ৫ হাজার ৮১২টি খাবারের নমুনা পরীক্ষা করে তার মধ্যে তিন হাজার ১৪৭টিতে ভেজাল পাওয়া গেছে। ভেজালের এই দৌরাত্ম্যে জনস্বাস্থ্য ক্রমে হুমকির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক বিকাশ মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে তা।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত যেসব রাসায়নিক দ্রব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে ফরমালিন, সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড (হাইড্রোজ), ক্যালসিয়াম কার্বাইড (কার্বাইড), ইথুফেন, ডিডিটি, টেক্সটাইল রঙ, স্যাকারিন ইত্যাদি। ফরমালিন সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রঙ, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে এটি প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটিই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু খাদ্যপণ্য অনেক সময় ধরে বিক্রির স্বার্থে তাজা রাখতে এটি অবাধে ব্যবহার করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশজুড়ে।
খাদ্যদ্রব্যে সাধারণত নির্দিষ্ট মাত্রায় রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন_ টেস্টিং সল্ট, খাওয়ার সোডা, ফুড ফ্লেভার ব্যবহার করার রীতি রয়েছে। কিন্তু এসবেরও অতিরিক্ত ব্যবহারে লিভার ও কিডনির সমস্যা হতে পারে এবং হচ্ছে। অন্যদিকে ফরমালিন, হাইড্রোজ, কার্বাইড, ইথুফেন শুধু শিল্প-কারখানা ও গবেষণাগারে ব্যবহারের কথা। অথচ এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ফল ও মাছের পচন রোধে, জিলাপি মুচমুচে করতে, মুড়ি ফোলাতে, গুড় সাদা করতে এবং ফলের রঙ ভালো দেখাতে। আবার অতি ক্ষতিকর ডিডিটি ও কাপড়ের রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে শুঁটকি, মাছ, মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে। ভোক্তার অজান্তেই প্রতিদিন দেশজুড়ে যা সৃষ্টি করে চলেছে মানবিক বিপর্যয়।
বাস্তবে ভেজালের ভিড়ে বাজারে রাসায়নিক পদার্থমুক্ত খাবার পাওয়া দুষ্কর। যদিও শ্রেণী নির্বিশেষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতে। তবে দরিদ্রদের আইটেমগুলোতেই রাসায়নিকের মিশ্রণ ঘটছে বেশি। যেমন_ ইউরিয়া ও হাইড্রোজযুক্ত গুড়-মুড়িতে বাজার সয়লাব। এটি ক্যান্সার, আলসারসহ জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আকর্ষণীয় রঙ ও কৃত্রিম ফ্লেভার মিশিয়ে হরেক খাবার লোভনীয় রূপে কনফেকশনারি ও হোটেলগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত কাপড়ের রঙ এবং কৃত্রিম ফ্লেভার মানবদেহের লিভার ও কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
নীতি-নৈতিকতাবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তা শ্রেণীর পাশাপাশি উৎপাদক শ্রেণী অর্থাৎ চাষিরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কারণে, বিশেষ করে শহরকেন্দ্রিক সচেতন ও ভয়ার্ত মানুষ (যার একটি বড় অংশ এসব খাদ্যদ্রব্যের ভোক্তা) ফলমূল কেনা একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে খোদ উৎপাদক পর্যায়ে। দেশের চাহিদা পূরণ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশে ফল রফতানির সুযোগ থাকলেও রাসায়নিক মিশ্রণের কারণে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। সব দেশেই ফল তাজা রাখতে নির্দিষ্ট মাত্রার রাসায়নিক মেশানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে রাসায়নিকের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণে তা রফতানি করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভোক্তা পর্যায়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে ক্রেতারা জানিয়েছেন রাসায়নিকের ভয়মুক্ত হতে পারলে তারা কলা, আম ইত্যাদি ফল অন্তত তিনগুণ বেশি পরিমাণে ক্রয় করতেন। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের উৎপাদকরা অনিবার্যভাবেই অনেক লাভবান হতেন, যা এখন হচ্ছে না কেবল অতিলোভী মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। কিন্তু এ ধারায় মামলা তেমন হয় না বললেই চলে। এমনকি কারও উলি্লখিত শাস্তি হয়েছে বলেও শোনা যায়নি। খাদ্যের মান বজায় রাখাসহ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালের ২০ জুন রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠন এবং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খাদ্যের গুণ ও রাসায়নিক মান পরীক্ষার জন্য খাদ্য পরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। আজও বাস্তবায়ন হয়নি সে রায়। বর্তমানে দেশে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এতে শাস্তির মেয়াদ কম। এ কারণে গুরুতর অপরাধ করেও ভেজালকারীরা কম সাজায় পার পেয়ে যায়। দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায়ও খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
আশার কথা, বিলম্বে হলেও ফরমালিনের অবাধ আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা 'আমদানি নীতি আদেশ-২০১২-১৫'-এর অন্তর্ভুক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমান আমদানি নীতি আদেশ ২০০৯-১২ অনুযায়ী, ফরমালিন আনার ব্যাপারে কোনো বাধা বা শর্ত নেই। যে কেউ যে কোনো পরিমাণে ফরমালিন আমদানি করতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২০৫ টন ফরমালিন আমদানি করা হয়েছে। এগুলো যে কোনো স্থানে অবাধে বিক্রি হয় বলে বেশিরভাগই খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে যে ব্যবসা সারাদেশে চলছে তা আসলে এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কিন্তু ক্ষমতায় অথবা ক্ষমতার বাইরে যারা আছেন তাদের কাছে প্রাণঘাতী এই ইস্যুটি এখনও আন্দোলনের বা প্রশাসনিক মনোযোগের এজেন্ডা হতে পারেনি। গণমাধ্যমসহ কিছু কিছু নাগরিক সংগঠনই কেবল সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে রাসায়নিক বেচাকেনা কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। অবাধে ফরমালিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য ফরমালিনসহ সকল রাসায়নিক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার।
ফেরদৌস আরা রুমী :খাদ্য অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা আন্দোলনের কর্মী
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত যেসব রাসায়নিক দ্রব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে ফরমালিন, সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড (হাইড্রোজ), ক্যালসিয়াম কার্বাইড (কার্বাইড), ইথুফেন, ডিডিটি, টেক্সটাইল রঙ, স্যাকারিন ইত্যাদি। ফরমালিন সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রঙ, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে এটি প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটিই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু খাদ্যপণ্য অনেক সময় ধরে বিক্রির স্বার্থে তাজা রাখতে এটি অবাধে ব্যবহার করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশজুড়ে।
খাদ্যদ্রব্যে সাধারণত নির্দিষ্ট মাত্রায় রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন_ টেস্টিং সল্ট, খাওয়ার সোডা, ফুড ফ্লেভার ব্যবহার করার রীতি রয়েছে। কিন্তু এসবেরও অতিরিক্ত ব্যবহারে লিভার ও কিডনির সমস্যা হতে পারে এবং হচ্ছে। অন্যদিকে ফরমালিন, হাইড্রোজ, কার্বাইড, ইথুফেন শুধু শিল্প-কারখানা ও গবেষণাগারে ব্যবহারের কথা। অথচ এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ফল ও মাছের পচন রোধে, জিলাপি মুচমুচে করতে, মুড়ি ফোলাতে, গুড় সাদা করতে এবং ফলের রঙ ভালো দেখাতে। আবার অতি ক্ষতিকর ডিডিটি ও কাপড়ের রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে শুঁটকি, মাছ, মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে। ভোক্তার অজান্তেই প্রতিদিন দেশজুড়ে যা সৃষ্টি করে চলেছে মানবিক বিপর্যয়।
বাস্তবে ভেজালের ভিড়ে বাজারে রাসায়নিক পদার্থমুক্ত খাবার পাওয়া দুষ্কর। যদিও শ্রেণী নির্বিশেষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতে। তবে দরিদ্রদের আইটেমগুলোতেই রাসায়নিকের মিশ্রণ ঘটছে বেশি। যেমন_ ইউরিয়া ও হাইড্রোজযুক্ত গুড়-মুড়িতে বাজার সয়লাব। এটি ক্যান্সার, আলসারসহ জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আকর্ষণীয় রঙ ও কৃত্রিম ফ্লেভার মিশিয়ে হরেক খাবার লোভনীয় রূপে কনফেকশনারি ও হোটেলগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত কাপড়ের রঙ এবং কৃত্রিম ফ্লেভার মানবদেহের লিভার ও কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
নীতি-নৈতিকতাবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তা শ্রেণীর পাশাপাশি উৎপাদক শ্রেণী অর্থাৎ চাষিরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কারণে, বিশেষ করে শহরকেন্দ্রিক সচেতন ও ভয়ার্ত মানুষ (যার একটি বড় অংশ এসব খাদ্যদ্রব্যের ভোক্তা) ফলমূল কেনা একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে খোদ উৎপাদক পর্যায়ে। দেশের চাহিদা পূরণ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশে ফল রফতানির সুযোগ থাকলেও রাসায়নিক মিশ্রণের কারণে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। সব দেশেই ফল তাজা রাখতে নির্দিষ্ট মাত্রার রাসায়নিক মেশানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে রাসায়নিকের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণে তা রফতানি করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভোক্তা পর্যায়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে ক্রেতারা জানিয়েছেন রাসায়নিকের ভয়মুক্ত হতে পারলে তারা কলা, আম ইত্যাদি ফল অন্তত তিনগুণ বেশি পরিমাণে ক্রয় করতেন। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের উৎপাদকরা অনিবার্যভাবেই অনেক লাভবান হতেন, যা এখন হচ্ছে না কেবল অতিলোভী মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। কিন্তু এ ধারায় মামলা তেমন হয় না বললেই চলে। এমনকি কারও উলি্লখিত শাস্তি হয়েছে বলেও শোনা যায়নি। খাদ্যের মান বজায় রাখাসহ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালের ২০ জুন রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠন এবং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খাদ্যের গুণ ও রাসায়নিক মান পরীক্ষার জন্য খাদ্য পরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। আজও বাস্তবায়ন হয়নি সে রায়। বর্তমানে দেশে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এতে শাস্তির মেয়াদ কম। এ কারণে গুরুতর অপরাধ করেও ভেজালকারীরা কম সাজায় পার পেয়ে যায়। দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায়ও খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
আশার কথা, বিলম্বে হলেও ফরমালিনের অবাধ আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা 'আমদানি নীতি আদেশ-২০১২-১৫'-এর অন্তর্ভুক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমান আমদানি নীতি আদেশ ২০০৯-১২ অনুযায়ী, ফরমালিন আনার ব্যাপারে কোনো বাধা বা শর্ত নেই। যে কেউ যে কোনো পরিমাণে ফরমালিন আমদানি করতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২০৫ টন ফরমালিন আমদানি করা হয়েছে। এগুলো যে কোনো স্থানে অবাধে বিক্রি হয় বলে বেশিরভাগই খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে যে ব্যবসা সারাদেশে চলছে তা আসলে এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কিন্তু ক্ষমতায় অথবা ক্ষমতার বাইরে যারা আছেন তাদের কাছে প্রাণঘাতী এই ইস্যুটি এখনও আন্দোলনের বা প্রশাসনিক মনোযোগের এজেন্ডা হতে পারেনি। গণমাধ্যমসহ কিছু কিছু নাগরিক সংগঠনই কেবল সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে রাসায়নিক বেচাকেনা কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। অবাধে ফরমালিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য ফরমালিনসহ সকল রাসায়নিক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার।
ফেরদৌস আরা রুমী :খাদ্য অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা আন্দোলনের কর্মী
No comments