সামাজিক শান্তি বিধানে ইসলাম by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
ধর্মীয় অনুশাসন মানার মাধ্যমেই চলমান সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আমরা জানি, মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে সবচেয়ে বেশি সহায় ভূমিকা পালন করে ধর্মাচার সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এমন ঘটনা ঘটছে, যা বর্বর, নারকীয়, পৈশাচিক কোনো শব্দই এসবের ভয়াবহতা ও নৃশংসতা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট নয়।
খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে রাজধানীতে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ ২৬ টুকরো করে খণ্ডিতাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলার খবর। এ ধরনের ঘটনা সামাজিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কোন অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে সমাজ ও দেশ? নীতি-নৈতিকতা ও মমত্ববোধ কি দিন দিন উঠে যাচ্ছে মানুষের মন থেকে? একটা মানুষ কতটা নৃশংস হলে হত্যার পর এভাবে মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে! ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে বৃদ্ধ মায়ের সামনে খুন হয় আরেক তরুণী। হতভাগ্য মা নিজ সন্তানের লাশ নিয়ে ৩৬ ঘণ্টা বন্দি ছিল। শুধু ওপরের দুই ঘটনাই নয়, প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা এক অস্থির সমাজের চিত্র_ তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এরও আগে শিশু অপহরণের পর হত্যা করে মৃতদেহ পানির ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়েছে। মুক্তিপণের জন্য দুধের শিশু তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। এবার অপরাধ প্রবণতায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা_ নৃশংসতা, পৈশাচিকতা। গত কিছুদিন ধরে সংবাদপত্রের পাতায় এমন খবর বের হচ্ছে_ যার তাৎক্ষণিক বীভৎসতা যেমন অসহনীয়, তেমনি এসবের সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া মারাত্মক উদ্বেগের কারণ। এসব খবর মানুষের মনোজগতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে_ এটা ভাবনার বিষয়।
সত্যি কথা বলতে কি, এ ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, দেশের সমাজ-রাজনীতির সার্বিক নৈরাজ্য ও অবক্ষয়ের এক খণ্ডিত চিত্র মাত্র। আমরা দেখছি, দিন দিন নীতি-আদর্শের বিলোপ ঘটছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। রাজনীতিতে বাড়ছে নীতিহীনদের দৌরাত্ম্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত নৃশংস আচরণ করছে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে। রাজনীতিই মূলত সমাজের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। রাজনীতি যখন কল্যাণময় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সমাজে নানা ধরনের অবক্ষয় ও অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সামাজিক অবক্ষয়ের রূপ যে কী হতে পারে তা আমরা দেখছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে আইনের শাসন ও সর্বক্ষেত্রে নীতি, আদর্শ ও মানবিকতার প্রতিষ্ঠা দরকার। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ন্ত্রকদের সর্বাগ্রে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এখনই এসব নিয়ে না ভাবলে ভবিষ্যতে আরও চড়া মূল্য দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ধর্মীয় অনুশাসন মানার মাধ্যমেই চলমান সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আমরা জানি, মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে সবচেয়ে বেশি সহায় ভূমিকা পালন করে ধর্মাচার। এ ক্ষেত্রে ইসলামের অগ্রণী ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলমানরা যথাযথভাবে ইসলামী অনুশাসন মানলে সামাজিক এ ক্ষতগুলো দূর হবে অতিদ্রুত_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক ইসলামী শিক্ষাসহ নৈতিকতা শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করার নিমিত্তে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। না হলে কোনো অবস্থাতেই এ অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না।
আরেকটি কথা, এসব অপরাধের ক্ষেত্রে অতি দ্রুততার সঙ্গে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে অনেক ক্ষেত্রেই আসল অপরাধী পার পেয়ে যায়। ফলে অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয় এ ভয় কমে যাচ্ছে দিন দিন। এমতাবস্থায় অপরাধের জন্য দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। সকল ক্ষেত্রে ইসলাম প্রয়োজনীয় বিধান দিয়েছে, যাতে মানব সমাজ শৃঙ্খলার অধিকারী হয়। প্রত্যেক সমাজে মাঝে মধ্যেই হত্যার ঘটনা ঘটে_ এটা আগেও ছিল। তাই ইসলাম হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য কিসাস বা বদলার বিধান দিয়েছে, যাতে সমাজে মানুষের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিধান অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডের ফলে নিরপরাধ ব্যক্তির রক্ত বৃথা যায় না এবং অন্যরাও মানুষ হত্যায় সাহসী হয় না। এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'হে বিশ্বাসীরা! নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য প্রতিশোধের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস, নারীর বদলে নারী কিন্তু এই ধর্মের অনুসারী ভাইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হলে কিসাসের পরিবর্তে প্রচলিত রক্তপণ প্রথা অনুসরণ ও সদয়ভাবে তার পাওনা আদায় করতে হবে। এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে লঘু বিধান ও করুণা। সুতরাং এরপর যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করবে, তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।'
আইন যেহেতু সামগ্রিকভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য। সুতরাং কিসাসের বিধান যদি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে তা অনুসরণ করতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। যদিও অনেকই ইসলামী আইনের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায়বিচার ও মানুষের নিরাপত্তা পূর্বশর্ত। আর তা নিশ্চিত করার জন্য অপরাধীর শাস্তি পাওয়া জরুরি। চিকিৎসার সময় ক্ষেত্রবিশেষ যেমন শরীরের কোনো পচনশীল অংশ কেটে ফেলা জরুরি, ঠিক তেমনি কিসাসের বিধান ব্যক্তিগত প্রতিশোধের চেয়ে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বেশি জরুরি।
উলেল্গখ্য, ইসলাম কোনো অবস্থাতেই কিসাসকে একমাত্র পথ বলে মনে করে না, আবার ক্ষমা করে দেওয়াকেও শ্রেষ্ঠ পথ মনে করে না। ইসলাম হত্যাকারীর শাস্তির বিধানকে প্রতিশোধ হিসেবে এবং ক্ষমা করা অথবা রক্তের মূল্য নেওয়াকেও সহজ বিধান হিসেবে গ্রহণ করেছে।
muftianaet@gmail.com
সত্যি কথা বলতে কি, এ ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, দেশের সমাজ-রাজনীতির সার্বিক নৈরাজ্য ও অবক্ষয়ের এক খণ্ডিত চিত্র মাত্র। আমরা দেখছি, দিন দিন নীতি-আদর্শের বিলোপ ঘটছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। রাজনীতিতে বাড়ছে নীতিহীনদের দৌরাত্ম্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত নৃশংস আচরণ করছে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে। রাজনীতিই মূলত সমাজের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। রাজনীতি যখন কল্যাণময় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সমাজে নানা ধরনের অবক্ষয় ও অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সামাজিক অবক্ষয়ের রূপ যে কী হতে পারে তা আমরা দেখছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে আইনের শাসন ও সর্বক্ষেত্রে নীতি, আদর্শ ও মানবিকতার প্রতিষ্ঠা দরকার। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ন্ত্রকদের সর্বাগ্রে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এখনই এসব নিয়ে না ভাবলে ভবিষ্যতে আরও চড়া মূল্য দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ধর্মীয় অনুশাসন মানার মাধ্যমেই চলমান সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আমরা জানি, মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে সবচেয়ে বেশি সহায় ভূমিকা পালন করে ধর্মাচার। এ ক্ষেত্রে ইসলামের অগ্রণী ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলমানরা যথাযথভাবে ইসলামী অনুশাসন মানলে সামাজিক এ ক্ষতগুলো দূর হবে অতিদ্রুত_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক ইসলামী শিক্ষাসহ নৈতিকতা শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করার নিমিত্তে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। না হলে কোনো অবস্থাতেই এ অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না।
আরেকটি কথা, এসব অপরাধের ক্ষেত্রে অতি দ্রুততার সঙ্গে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে অনেক ক্ষেত্রেই আসল অপরাধী পার পেয়ে যায়। ফলে অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয় এ ভয় কমে যাচ্ছে দিন দিন। এমতাবস্থায় অপরাধের জন্য দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। সকল ক্ষেত্রে ইসলাম প্রয়োজনীয় বিধান দিয়েছে, যাতে মানব সমাজ শৃঙ্খলার অধিকারী হয়। প্রত্যেক সমাজে মাঝে মধ্যেই হত্যার ঘটনা ঘটে_ এটা আগেও ছিল। তাই ইসলাম হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য কিসাস বা বদলার বিধান দিয়েছে, যাতে সমাজে মানুষের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিধান অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডের ফলে নিরপরাধ ব্যক্তির রক্ত বৃথা যায় না এবং অন্যরাও মানুষ হত্যায় সাহসী হয় না। এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'হে বিশ্বাসীরা! নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য প্রতিশোধের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস, নারীর বদলে নারী কিন্তু এই ধর্মের অনুসারী ভাইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হলে কিসাসের পরিবর্তে প্রচলিত রক্তপণ প্রথা অনুসরণ ও সদয়ভাবে তার পাওনা আদায় করতে হবে। এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে লঘু বিধান ও করুণা। সুতরাং এরপর যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করবে, তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।'
আইন যেহেতু সামগ্রিকভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য। সুতরাং কিসাসের বিধান যদি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে তা অনুসরণ করতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। যদিও অনেকই ইসলামী আইনের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায়বিচার ও মানুষের নিরাপত্তা পূর্বশর্ত। আর তা নিশ্চিত করার জন্য অপরাধীর শাস্তি পাওয়া জরুরি। চিকিৎসার সময় ক্ষেত্রবিশেষ যেমন শরীরের কোনো পচনশীল অংশ কেটে ফেলা জরুরি, ঠিক তেমনি কিসাসের বিধান ব্যক্তিগত প্রতিশোধের চেয়ে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বেশি জরুরি।
উলেল্গখ্য, ইসলাম কোনো অবস্থাতেই কিসাসকে একমাত্র পথ বলে মনে করে না, আবার ক্ষমা করে দেওয়াকেও শ্রেষ্ঠ পথ মনে করে না। ইসলাম হত্যাকারীর শাস্তির বিধানকে প্রতিশোধ হিসেবে এবং ক্ষমা করা অথবা রক্তের মূল্য নেওয়াকেও সহজ বিধান হিসেবে গ্রহণ করেছে।
muftianaet@gmail.com
No comments